insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121ডেস্ক
ঘুম থেকে উঠে, সমস্ত কাজ সেরে লিনা দেখে রাতুলের ঘুম তখনো ভাঙ্গেনি। ঘড়ি দেখে, এখনো ঘুম ভাঙ্গে না তোমার? নাস্তা সেরে বাজারে যাবে।
আমি ঘুমাবো, তুমি বাজার সেরে এসো।
না, তা হবে না। অলস মানুষ আমি একদম পছন্দ করি না!
তোমার জন্য আর পারা গেল না বিছানায় থাকা।
নাস্তা রেডি, তুমি মুখ হাত ধুয়ে নাও। রাতুল তুমি এত অগোছালো মানুষ বাসার কি অবস্থা করে রাখ! এগুলো গুছাতে বুঝি আমার সময় লাগে না? অফিস করে এসে মন চায় না এগুলি গোছাতে। এক সময় পাই তো শুক্রবার।
রাতুল বলে, লিনা চলো নাস্তা করে দু’জনে একসঙ্গে বাজারে যাই।
আমার আবার যাওয়ার কি দরকার? তুমি বাজার সেরে এসো।
আমি বলছি তুমি আমার সঙ্গে যাবে।
ঘরে আমার অনেক কাজ। তুমি দেখেশুনে বাজারটা করে নিয়ে এসো।
আমার তো চাকরি নেই। আমি তো সব সময়, সময় পাই। তুমি চাকরি করো, সময় পাওনা। আজ তোমার সময় আছে তাই তোমার পছন্দসই কেনাকাটা হবে।
রাতুলের কথা রাখতে রিনাকে যেতে হয় বাজারে। বাজারে প্রায় অর্ধেক কেনাকাটা এমন সময় একটি কণ্ঠস্বরে ঘুরে তাকায়। আপনি কি লিনা? রাতুল একটু দূরে। ইশারা করে নাম না বলার জন্য। লিনা একটু থমকে বলে, না।
নাইজা বলে, দেখেন আমি নিশ্চিত আপনি লিনা? রাতুল নাম না বলতে আড়ালে থেকে রাতুল আবার ইশারা করে।
আহা আপনি কেন আমাকে বিরক্ত করছেন!
নাইজা বলে, দেখুন আমি যে কথাগুলো আপনাকে বলব তাতে আপনার উপকার ছাড়া ক্ষতি হবে না!
চমকে ওঠে লিনা। সংযত হয়ে বলে, দেখুন আমি ভাবছি শান্তিতে কেনাকাটা করবো কিন্তু আপনার জন্য তা মনে হয় আর হচ্ছে না!
আপনি যখন বলছেন না, তাহলে আমি যাচ্ছি চলে।
বাসায় এসে লিনা রাতুলকে জিজ্ঞেস করে, আমাকে নাম বলতে নিষেধ করেছিলে কেন? সে নিশ্চয় তোমার পরিচিত?
বাদ দাও তো বাইরের লোকের জন্য তুমি আমার সঙ্গে এখন ঝগড়াঝাঁটি করবে নাকি?
তা করবো না কেন? সে যে নাম বলছে, সে তো আমি।
একজন অপরিচিত লোক এসে তোমার নাম বলবে আর তুমি অমনি হ্যাঁ বলবে? তার জন্য বলতে না বলেছি।
রাতুলের যুক্তিতে বিরক্ত হয়ে, আচ্ছা বাদ দাও ওসব। এখন আমি আমার কাজ করি।
লিনা রান্না করছে, আর আপন-মনে গুনগুন করে গান গাচ্ছে। কলিংবেলের শব্দ পেয়ে, রাতুল দেখোনা কে এসেছে। ও রাতুল তো গোসল করছে। নিজেই দরজা খুলে। ও আপনি, আমার বাসাও চেনেন দেখছি!
যখন যার যা প্রয়োজন হয়, সে চেষ্টা করলে অবশ্যই তা পেতে পারে।
চেহারায় ভাব সাবে অবিশ্বস্ত মনে হয় না তাকে, আপনি ভিতরে এসে বসুন। আমি আসছি। চুলায় আমার রান্না। আমি চুলাটা বন্ধ করে আপনার সঙ্গে কথা বলছি। বেসিনে হাত ধুয়ে, কাপড়ে আঁচল দিয়ে হাত মুছে। এবার বলুন কি বলতে চান আমাকে?
রাতুল কই?
আপনি রাতুলকে চেনেন?
নাইজা রহস্যের হাসি দেয়, যে আমার সব আমি তার নাম জানব না! আমি কয়েকদিন এখানে এসেছি, এসে দেখি আপনি বাসায় নেই অফিসে আছেন। অনেকদিন দাঁড়িয়েছিলাম অফিসে যাওয়ার পথে আপনার সঙ্গে কথা বলব।
আমাকে আপনার কি প্রয়োজন?
প্রয়োজন আছে বলেই তো এসেছি!
তাহলে বলুন?
আপনি যাকে নিয়ে সংসার করছেন সে আমার স্বামী!
আপনার স্বামী!
আপনি বললেন আপনার স্বামী আর আমি অমনি বিশ্বাস করব?
আপনিও তো খোঁজ নেননি? খোঁজ না নিয়েই বিয়ে করেছেন!
কথাগুলো মারাত্মক। এমন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না সে। হতভম্ব হয়ে যায়, চোখের পানি আড়াল করতে পারে না লিনা।
দেখন আপনার মনের অবস্থা বুঝি। এরকম আমারও মনের অবস্থা। রাতুল গোসলখানা থেকে বের হয়, চুলে টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে। রাতুল অবাক হয়ে চেয়ে আছে নাইজাকে দেখে। তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। শক্ত গলায় লিনাকে বলে, কেন তুমি দরজা খুলেছ?
লিনা বলে, কেন তোমার ভয় হচ্ছে? সব কথা আমি জেনে যাব। ভয় নেই তোমার! তুমি তোমার আগের স্থানে চলে যাও।
তুমি যা জেনেছো সবই ভুল, অন্যের কথায় আমাকে ভুল বুঝনা!
ভুলের সমাধানতো আড়ালে নয়, চলন্ত সামনেই আছে। ভুল সমাধান করো তুমি?
রাতুল বলে নাইজাকে, কেন আপনি আমার শান্তি নষ্ট করছেন? কেন এখানে এসেছেন?
আমি এসেছি আমার অধিকার পেতে, আমার সন্তানের অধিকার পেতে?
অধিকারের কথা শুনে লিনার অন্তরে কষ্টের আগুন জ্বলে ওঠে, সে বেড রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
রাতুল চিৎকার করে বলে, তুমি এখান থেকে চলে যাও। আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও।
যে অন্যের সুখ কেড়ে নেয় জীবন থেকে তার সুখ এমনি চলে যায়। আমি এখানে বার বার আসবো তোমার সুখ নষ্ট করতে! নাইজা চলে যাওয়ার পর রাতুল দরজা নক করে লিনাকে ডাকে, লিনা আমাদের সম্পর্কের মাঝে তুমি ফাটন ধরিও না।
লিনা দরজা খুলে বলে, সম্পর্ক তোমার আমার আর থাকবে কিনা তা আমি জানিনা। তোমার স্ত্রী আছে, কিছুই আমাকে বলোনি। তুমি নিজ মুখে স্বীকার শিকার যাও সে তোমার স্ত্রী?
তুমি যখন শুনতে আগ্রহী তখন আমি বলি, সে আমার স্ত্রী। তাকে বিয়ে করতে হয়েছে আমার মায়ের জন্য।
এ কথা কেন তুমি আমাকে জানাওনি? আমাকে যখন বিয়ে করেছ, তখন বলেছো তোমার চারকুলে কেউ নেই। এখন দেখি তোমার সব আছে।
আমি এর কাছ থেকে বাঁচার জন্য নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলাম। আর তোমার মাঝে আমার অপূর্ণতা পূর্ণ করেছিলাম।
আমি কখনোই মেনে নিতে পারবনা, যে তোমার স্ত্রী আছে। তুমি চলে যাও তোমার স্ত্রীর কাছে।
কয়েকদিন পর নাইজা আবার আসে লিনার কাছে। লিনাকে বলে, আপনি রাতুলের কাছ থেকে পালান! না হয় আমার মত আপনার জীবন নষ্ট করে দিবে।
লিনা বলে, ও আপনার জীবন কিভাবে নষ্ট করলো?
আসলে আমি এখানে এসেছি ওর কাছ থেকে আপনার জীবনকে রক্ষা করার জন্য! আমি তাহলে আপনাকে সব কথা খুলে বলি। আমি আর আতিক পরস্পরকে ভালোবেসে বিয়ে করি। দু’জন দু’জনকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। আতিকের কোন বিষয় সম্পত্তি ছিল না। তাই বাবা মেয়ের সুখের কথা ভেবে, বাড়ি করার জন্য জমি কিনে দেয় আমার নামে। সেই জমিতে বাড়িও করে দেয় আমার বাবা। বাবা ব্যবসা করার জন্য আতিককে টাকাও দেয়। ব্যবসা চলছিল খুব ভালো। আর রাতুল হচ্ছে আতিকের ছোট ভাই। আমাদের ভালবাসার মাঝে রাতুল ঢুকে পড়ে। ও আমাকে খুবই বিরক্ত করতো। রাতুলের বিরক্তের কথা আমি আতিককে জানাই। আতিক এতে খুবই রাগান্বিত হয়। আতিক রাগে রাতুলকে অনেক কিছুই বলে। রাতুল তারপর আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তার উদ্ধত্য সীমালংঘন করতে থাকে। তার দৃষ্টি আমার সম্পত্তির ওপর। এক পর্যায়ে সম্পত্তি ওর নামে করে দিতে বলে। আমি ওর কথা না শুনলে আমার ছেলে ঊষারকে মেরে ফেলবে বলে আমাকে ভয়-ভীতি দেখায়। ও কোন কিছুতে পেরে না ওঠে ও আমার গায়ে হাত তুলে। সেই মুহূর্তে আতিকা বাড়িতে এসে দেখে রাতুল আমাকে মারধর করছে আর সম্পত্তির জন্য চাপ দিচ্ছে।
রাতুল তখন সংকোচ এবং সম্পর্কের সকল বাধা অতিক্রম করেছে। আতিককে বলে, তুই আমার জীবনে সমস্যা তোকে আর দুনিয়াতে বাঁচিয়ে রাখবো না। সম্পত্তি পেতে হলে তোকে দুনিয়া ছাড়া করতে হবে! আতিকের বুকে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। আমি ছেলেকে বাঁচানোর জন্য ওকে লুকিয়ে রাখি। লুকিয়ে রাখা কারণে আমার ছেলের জীবনে বেঁচে যায়। আমার শাশুড়ি-রাবেয়া। ছেলের রক্তাক্ত লাশ দেখে ওখানেই সে মৃত্যু বরণ করে। রাতুলের জন্য দুটি মানুষের মৃত্যু হলো। আমি হলাম স্বামীহারা আর আমার সন্তান হলো পিতৃহারা। এরপর ও আমার সন্তানকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে আমাকে জোরপূর্বক বিয়ে করে। বিয়ে করার পরও আমার ও ছেলের উপর সম্পত্তির জন্য নির্যাতন করে। ওর ভয়ে আমি আমার সন্তানকে দূরে লুকিয়ে রাখি। মা হিসেবে আমি আমার সন্তানকে বুকে রাখতে পারিনা। এ যে কত বড় বেদনাদায়ক তা শুধু হৃদয় বুঝে। আমার জীবন তছনছ হয় রাতুলের লোভ লালসার কারণে। আমি যখন মামলা করার জন্য প্রস্তুতি নেই। তখন ও পালিয়ে যায়। গা ঢাকা দিয়ে আপনার এখানে আশ্রয় নিয়ে আছে। আর আমিও চাই আদালতের মাধ্যমে ওর বিচার না হয়ে, আমার আদালতে ওর বিচার হবে।
লিনা স্তব্ধ হয়ে শুনছিল। দেখেন আপনি যেসব যন্ত্রণা সহ্য করেছেন তার আমার সহ্য করার মত ধারণ ক্ষমতা নেই! আর আপনি কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন! রাতুলকে আপনি আইনের হাতে তুলে দেন।
আপনি রাতুলকে খুন করে খুনের আসামি হবেন কেন? তাহলে তো আপনার সন্তান যেমন বাবা হারিয়েছে তেমন মাকেও হারাবে! আপনার সন্তান ঊষারের কি হবে একবার ভেবে দেখুন? রাতুল যে এমন “অজ্ঞাত শত্রু”। আমি এটা কখনোই জানতাম না। আপনার সঙ্গে যে রকম করেছে হয়তো এক সময় আমার সঙ্গে ও এমন করবে। মুখোশধারী মানুষ কতক্ষণই বা মুখোশ ধরে থাকতে পারে! কোনভাবেই না কোনভাবে তার মুখোশ উন্মোচিত হয়। একজন নারীর কাছে তার বড় সম্বল হচ্ছে স্বামী, সন্তান। স্বামীকে তো হারিয়েছেন? কষ্টের মাঝেও আপনাকে ছেলের জন্য নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমিও চাই রাতুলের বিচার হোক। আর রাতুল কখনই আমার কাছে স্বামীর অধিকার নিয়ে দাঁড়াতে পারবেনা। আর আপনি খুনি কে মেরে খুনি হবেন কেন? আপনি না চাইলেও ওকে আমি পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেবো!
নাইজা ভেবে দেখে, আমার একটি ছেলে আছে। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সুস্থ সবল জীবন নিয়ে বাঁচতে হবে। লিনা পুলিশ এনে রাতুলকে ধরিয়ে দেয়।
রাতুল বলে, লিনা আর নাইজাকে দেখো আমি তোমাদের দু’জনেরই স্বামী। স্বামীকে ধরিয়ে দিয়ে তোমরাও তো শান্তিতে থাকতে পারবে না। আমার জন্য তোমাদের হৃদয় কাঁদবে।
লিনা আর নাইজা দু’জনেই বলে, তোর মত স্বামী থাকার চেয়ে না থাকা অনেক ভালো।
নাইজা বলে, আমার মনে যে ক্ষোভ ছিল আজ তার কিছুটা প্রশমিত হলো।
লিনা এমন বড় প্রতারকের কাছ থেকে আমিও বেঁচে গেলাম। দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুক্ত আকাশের দিকে তাকায় সে। ন্যায় নীতিহীন মানুষের চেয়ে একাকীত্ব জীবন অনেক ভালো।
লেখক-সুলেখা আক্তার শান্তা