insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121প্রতিদিন সংবাদ ডেস্ক
তিন ভাই-বোনের মধ্যে সুমি বড়। ছোট দুই ভাইকে নিয়ে সুমির অনেক স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণে অল্প বয়সে চাকরি নেয় সে গার্মেন্টসে। বেতন পেয়ে দুই ভাইয়ের জন্য টাকা পাঠায় মায়ের কাছে। ফোনে কথা হয়। মা মর্জিনা মেয়ের কুশলাদি খোঁজ করে। অনুযোগ করে বলে, মা টাকা তো সব তোর দুই ভাইয়ের জন্য খরচ করছিস। তোর তো ভবিষ্যৎ আছে? তোকে বিয়ে দিতে হবে তখন তো টাকা পয়সা লাগবে।
মা দুই ভাই আগে নিজের পায়ে দাঁড়াক, আমারটা পরে দেখা যাবে।
তুই যা ভাল মনে করিস মা। দুই ভাই মিলন আর দুলাল পাশে থেকে বলে, মা আপুর সঙ্গে কথা বলব।
সুমি মা তোর দুই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বল। ভাইদের সঙ্গে উচ্ছ্বসিত আলাপচারিতা সেরে সুমি অফিসে রওয়ানা দেয়।
আজগর উদ্দিন গার্মেন্টসের ঝুট কাপড়ের ব্যবসা করে। ফ্যাক্টরিতে যাতায়াত করতে হয়। সেখানে যাওয়া-আসার সুবাদে তার চোখ পড়ে সুমির উপর। সুদর্শন আজগর উদ্দিনের বয়স পঞ্চাশ হলেও মনে তার বেশ রং। ঘরে তার চার স্ত্রী। এরপরেও মেয়েদের প্রেমে ফেলতে ওস্তাদ সে। কোন এক অজানা আকর্ষণে মেয়েরাও তার কথায় বিগলিত হয়ে যায়। গায়ের রং টকটকে ফর্সা। পান খাওয়া মুখ আর গোঁফে তাকে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের মানুষ মনে হয়। সবার সঙ্গে সে সুন্দর চেহারার মধ্যে একটি মিষ্টি হাসি সারাক্ষণ তার ঠোঁটে লেগে থাকে। আজগর উদ্দিন একদিন সুমিকে প্রেম নিবেদন করে। সরাসরি বলে ফেলে, তোমাকে আমি ভালোবাসি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
সুমি চোখ নাক মুখ কুঁচকে আপনার ঘরে চার চারটা বউ থাকতে আপনি আবার বিয়ে করতে চান? তাও আবার এই বুড়ো বয়সে!
তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। মানুষের মন এক বিচিত্র জগত সম্ভব-অসম্ভব কিছুই মানতে চায় না। তুমি দখল করে রেখেছো আমার মনের সবটুকু জায়গা।
সুমিকে দেখার পর আজগর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা। আজগরের জ্বালাতনে সুমি বিরক্ত হয়ে যায়। আজগরকে বলে, আপনি আমার দুই চোখের সামনে আসবেন না। আপনাকে আমার ভালো লাগেনা।
দেখো আমি বুঝি, আমার বউ বাচ্চাই তোমার বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপনার বয়স ও আমার জন্য বাধা।
তুমি যা বলছো তার সবই মানি। সব বুঝেও অবুঝ আমি কি করবো বলো। আমার মন তো তোমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। তোমাকে আমার মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসবো। সুখী করার চেষ্টা করব। তোমাকে কোনদিন কোন কষ্টে রাখবো না। দেখো আমার সব বউই আছে রাজার হালে। কারো কোন অভিযোগ নাই।
আপনার কথার কোন উত্তর আমার কাছে নেই। আপনি অযুক্তিকে আমার কাছে যুক্তি দেখাচ্ছেন।
আজগরের নারী রঞ্জনের কৌশল সুমির ক্ষেত্রে কাজ না করায় সে হতাশ হয়ে বলে, যদি কখনো আমার কথা মনে পড়ে, আমাকে ডেকো, তোমার ডাকে আমি সাড়া দেবো।
সুমি চাকরি করতে থাকে। আজগর উদ্দিনের সুদর্শন চেহারা তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেই জ্বালাতনের মাঝেই কখন যে হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে টেরই পায়নি সে। সুমি মনে মনে খোঁজে আজগরকে। নিজেই আশ্চর্য হয় সে কি তার প্রেমে পড়েছে। আজগরের জন্য উদ্বেগ বাড়তে থাকে। একদিন সুমি আজগরকে দেখা পায়। একটি মেয়ের সঙ্গে রিকশায় যাচ্ছে। হেসে হেসে কথা বলছে বেশ অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে। মেয়েটি সুন্দরী। দেখে সুমির খুব হিংসা হয়। সে আজগরের সঙ্গে যোগাযোগ না করে পারে না। সুমির যোগাযোগে আজগর খুশি হয়। সে দেখা করে সুমির সঙ্গে। অভিমানের ভঙ্গি সুমির চেহারায়। রেগে আছে সে।
আজগর জিজ্ঞেস করে, তুমি কি কোনো কারণে রেগে আছো? রাগলে কিন্তু তোমাকে বেশ ভালোই লাগে।
আমি রাগলে কার কি আসে যায়। সে কথাটা আর চেপে রাখতে পারে না। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে। সেদিন তোমার সঙ্গে রিক্সায় কে ছিল।
ও! উনি তো আমার ভাবি। উনার একটা সমস্যা ছিল, সেজন্য আমাকে নিয়ে গেছিল সমাধানের জন্য। এইতো আর কিছু না।
সুমি তার স্বভাবসুলভ একরোখা ভঙ্গিতে বলে ফেলে, তার জন্য অমন হেসে-হেসে ঢলে ঢলে কথা বলতে হবে নাকি? কথার মধ্যে অধিকার ফলানোর চেষ্টা।
কথার মাঝে হাসির কথা হলে তো হাসি আসবেই। আমাকে নিয়ে তোমার এত ভাবনা কেন? তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।
হঠাৎ কি যে হলো ভালবাসার ঢেউ আছড়ে পড়লো মনে। লজ্জারাঙা মুখে বলল, কে বলেছে আমি ভালোবাসি না। তোমাকে আমি ভালোবাসি। আমার হৃদয় তোমাকে চায়।
সাফল্যে আজগরের মুখ উজ্জ্বল হলো। যাক অবশেষে তোমার ভালোবাসা পেলাম। চলো আমরা বিয়ে করি।
সুমি লাজুক মুখে সম্মতি দিল।
তুমি আমার ছোট বউ তোমাকে রাখবো আমি মাথায় করে।
বিয়ের পর আবার ভালোবাসা কমে যাবে নাতো?
আশ্চর্য মানুষ আজগর উদ্দিন। এতগুলো সংসারের মধ্যে আছে বিস্ময়কর ভারসাম্য। কারো কোন জোরালো অভিযোগ নেই। সুমি আজগরের সংসার ভালোভাবে চলতে থাকে। সুমির অন্য সতীনদের মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে ভালো সম্পর্ক। সেও সবার সঙ্গে মানিয়ে চলে। আজগর সুমির কোন কিছুতে অভাবে রাখেনি। সবকিছু দিয়েই পরিপূর্ণ রেখেছে। সুমিকে চাকরি করতে নিষেধ করে আজগর। আজগর বলে, তোমার যদি কোন কিছুতে কমতি থাকে তা তুমি আমাকে বলো।
তুমি আমাকে কোন কিছুতেই অভাবে রাখোনি। তুমি তো জানো আমার দুটি ভাই আছে ওদের পড়াশুনার করাতে হয়।
ওদের জন্য যদি টাকা লাগে বলো আমি দিব।
ভাইদের পড়াতে আমি তোমার টাকা নিতে চাই না।
তোমার যা ভাল হয় তুমি তাই করো। সুমি আর আজগরের সংসার আনন্দে কাটে। আজগরের বয়স হলেও কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় না সংসারে।
একদিন হঠাৎ করে সুমির বাসায় আসে অর্পা। চমকে যায় অর্পাকে দেখে। মনে পড়ে আজগরের সঙ্গে মেয়েটিকে দেখেছিল রিক্সায়। সুমি তাকে ভাবি সম্বোধন করে বসতে বলে।
অর্পা বলে, তুই আমাকে ভাবি বলছিস কেন?
আজগরের ভাবি আপনি তাই ভাবি বলছি!
আমার স্বামীকে বিয়ে করে মহা সুখে আছিস দেখছি! বিয়ের আগে খোঁজ তো নিবি? পুরুষের কয়জন স্ত্রী আছে, বাচ্চা আছে, অমনি তার গলায় ঝুলে পড়লি?
আমি সব জেনেই বিয়ে করেছি তাকে।
বিয়ে না করে উপায় ছিলনা তোর। খাওন জুট ছিলনা। গার্মেন্টসে কয় টাকা বেতন পেতি।
আমার স্বামীকে নিয়ে কথা বলার সাহস আপনার হয় কি করে?
সাহস পায় কি করে মানে? তোর আগে আমি ওর বউ হয়ে আছি। এইযে তুই খাচ্ছিস পড়ছিস এগুলি আমার টাকার। আজগর ব্যবসা করছে আমার টাকায়। সুমি আজগরের চরিত্র জানে কিন্তু এতটা অনুমান করতে পারিনি। মনে মনে বলে, হায়রে বুড়ো নিজের বউকে পরিচয় দিয়েছিস ভাবি বলে। বুঝতে পারে তার এই সতীনটি অন্য সতীনগুলোর চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির। উগ্রমূর্তি ধারণ করা অর্পাকে কোনভাবে শান্ত করতে পারে না সে। শেষে তাকে বলতে হয়, আপনি তার বউ হলেও উনি বোধহয় আপনাকে ভালোবাসে না। কারণ আপনাকে রেখে আমাকে বিয়ে করেছ আমাকে রেখে আপনাকে বিয়ে করে নি।
অর্পা রেগে আগুন। কি স্পর্ধা তোর, দাঁড়া তোকে ভালোবাসা শেখাই বলে মারতে শুরু করে। সুমি বলে, আমাকে মারছেন কেন? আপনি যে টাকা পয়সা দিয়ে তার মন ভুলিয়ে রেখেছেন তবু সে আমাকে ভালোবাসে। আমাকে সব বিষয়ে রেখেছে পরিপূর্ণ করে।
সুমির কথায় হিংসায় জ্বলে যায় অর্পা। ক্ষিপ্ত হয়ে সুমিকে আরো বেশি মারতে থাকে। তোর সঙ্গে বোঝাপড়া করে কি হবে বোঝাপড়া আছে আজগরের সঙ্গে বলে চলে যায়।
আজগরের ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকে সুমি। অন্য সতীনদের বাসায় গেলেও আজগর প্রতিদিন তার বাসায় আসে। দুইদিন হয়ে যায় সে আসে না। ফোনেও আজগকে পাওয়া যায় না। কদিনপর আজগর বাসায় আসে। যে আক্রমণটা সে করবে উল্টো সেটি করে আজগর। আজগর জিজ্ঞেস করে, তুমি অর্পাকে অপমান করেছো কেন?
এ কথা জিজ্ঞেস করার আগে তোমার লজ্জিত হওয়া উচিত ছিল। তুমি বলেছ সে তোমার ভাবি। আমার কাছে কেন মিথ্যা কথা বলেছিলে?
সে আমার বউ। ওটা কায় আমার ব্যবসা-বাণিজ্য। ও বিদেশ থেকে আমাকে টাকা পাঠায়। ওর টাকায় আমার ব্যবসা বাণিজ্য আরাম আয়েশ সব।
তোমার তো আরো বউ আছে, তা জেনেই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। তাহলে ওর কথা তুমি আমার কাছে গোপন রেখেছিলে কেন?
প্রয়োজনে বলতে হয়? তার ব্যাখ্যা তোমার শুনা জরুরী না। যাক তুমি অর্পার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে।
ক্ষমা চাইবো আমি! যদি ক্ষমা চাইতে হয় তুমি চাইবে, কারন তুমি তার টাকায় চলো।
শোনো অর্পা বাহিরে চলে যাবে। আবার কবে আসেবে তার কোন ঠিক নেই। ও আমার জন্য মাসে মাসে ওখান থেকে টাকা পাঠায়। দুনিয়ায় ভালো থাকতে হলে টাকার প্রয়োজন। তাই আমি অর্পাকে অনেক ভালোবাসি।
সুমি বুঝতে পারে আজগরের হৃদয়ে জুড়ে আছে অর্পা। সুমির এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। সুমির বড় সতীন রাহেলা, মালেকা, সাজেদা তাকে বোঝায়। কেন তুই এই ব্যাপার মানতে পারিস না? বড় সতীন রাহেলা বলে, আমাকে বিয়ে করার পর এক এক করে চার বিয়ে করেছে। কই আমি তো তোদের সবাইকে সহ্য করে আছি। সহ্য করতে শেখ জীবনে সুখ পাবি।
আপা আপনি সহ্য করলোও আমি তা কখনোই সহ্য করব না।
মালেকা বলে, না হয় আগুনে জ্বলা ছাড়া কোন উপায় নেই। সাজেদার ও একই কথা।
ছয় মাস পর অর্পা আবার দেশে ফিরবে। এ কথা শুনে সুমির গায়ে আগুন জ্বলে উঠে। সুমি সব সতীনকে সহ্য করতে পারলেও অর্পাকে সহ্য করতে পারে না। ভাবে স্বামীর হৃদয় জুড়ে আছে শুধুই অর্পা। টাকা মানুষের ভালোবাসাও কিনে নেয়। আজগরকে বলে, তুমি অর্পার দেশে আসা বন্ধ করো।
অর্পা দেশে আসে শুধু আমার জন্য। আমি কি করে ওর আসা বন্ধ করব। অন্য সতীনদের নিয়ে তো তোর গা জ্বালা নেই। অর্পাকে নিয়ে কেন তোর এত গা জ্বালা?
কারণ অন্যদেরকে আমি দেখে এসেছি ওকে আমি দেখে আসি নি। অর্পা দেশে আসে। আজগর খুব ব্যস্ত থাকে অর্পাকে এয়ারপোর্ট থেকে আনার। অনেক রানীর মাঝে সুমি ছিল মক্ষীরানী এখন বুঝি তার অবসান হলো। অশান্তির আগুনে তার হৃদয় পুড়ে যায়। জেদ আর ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে পড়ে। পৃথিবীর মায়া ছেড়ে দিতে চায়। সত্যিই একদিন বিষ খায় সে। মিলন আর দুলালকে ফোন দিয়ে জানায় ভাই আমি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলাম। মিলন আর দুলাল বলে, আপা তোর কি হয়েছে? আমরা আসছি তোর কাছে। সুমির মা মর্জিনা ও দুই ভাই ঢাকায় এসে দেখতে পায় সুমির মৃত লাশ। মা ও দুই ভাইয়ের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বাসার পরিবেশ। আজগর পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। যাতে কোনো মামলা মোকদ্দমা না করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে কিছু টাকা ধরিয়ে দেয় সুমির মা ও ভাইদের হাতে। মৃত লাশ নিয়ে তারা চলে যায় তাদের গ্রামের বাড়ি। সুমির মৃত্যুর ছয় মাস পর আজগরের ঝুট ব্যবসার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয়। আজগরের বিপক্ষের লোক তাকে গুলি করে মেরে ফেলে। চলে যায় সে দুনিয়া ছেড়ে। পড়ে থাকে তার সবকিছু দুনিয়াতে। অবসান হয় এক আশ্চর্যজনক মানুষের আশ্চর্যজনক কাহিনী।