insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জে তিন মাসের অন্তসত্তাএক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা দায়েরের পর বাদীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে গর্ভের বাচ্চা মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জ সদরের মাইজখাপন ইউপি সদস্য মোঃ বকুল মিয়ার বিরুদ্ধে। ভাতা কার্ড দেওয়ার কথা বলে ধর্ষণের অভিযোগে ২৪ আগষ্ট আদালতে মামলা করেছেন ওই নারী। মামলাটি আমলে নিয়ে বিপিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। নির্যাতনের শিকার ওই নারী বর্তমানে ২৫০ শয্যা
বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের তদন্তের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা
জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অবইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর এসপি শাহাদাৎ হোসেন। মামলার বিবরণে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের বেত্রাহাটি মীরপাড়ার বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম এর সঙ্গে
গত ৪ মাস পৃর্বে বিয়ে হয় ওই নির্যাতিতা নারীর। বিয়ের ৩ মাস পর অন্তসত্বা হয়ে পড়েন তিনি। মাইজখাপন ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. বকুল মিয়ার কাছে ওই নারী গর্ভবতী কার্ডের জন্য গেলে তিনি পরিষদে মাটি
কাটার চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২১ হাজার টাকা আদায় করেন। এর কিছুদিন পর গর্ভবতী কার্ডের জন্য আরও ১০ হাজার টাকা দাবী করেন সে। কয়েক দিন
পর চাকরি ও কার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ওই নারীকে তার বাড়িতে দেখা করতে বলেন। কার্ডের বিষয় জানতে ওই নারী ইউপি সদস্যের
বাড়িতে গেলে তিনি তাকে জোরপৃর্বক ধর্ষণ করেন এবং ঘটনা কাউকে জানালে খুন করে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেবে বলে হুমকি দেন। এমনকি তার স্বামীকেও আসামী বানানোর ভয় দেখিয়ে স্ত্রীর বিপক্ষে অবস্থান নিতে বলেন।
ওই নারী জানান, ধর্ষণের বিচার চেয়ে পরের দিন গত ১৯ আগষ্ট কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ না করে
আমাকে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার জন্য পরামর্শ দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ ১ নং- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
ট্রাইব্যুনাল আদালতে বকুল মিয়াকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি দায়েরের পর বকুল মেম্বার মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য ওই নারীর
উপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। মামলার ঘটনায় পাপ্তি হয়ে গত ৩১ আগস্ট রাতে ওই নারীকে মারধর করার এক পর্যায়ে পেটে লাথি দিলে গুরুতর
আহত হন এবং ব্যাপক রক্তপাত হয়। এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করলে ওই নির্যাতিতা নারী একটি মৃত
বাচ্চা প্রসব করেন। এ ঘটনা ঘটিয়েও থেমে যায়নি মেম্বার বকুল বরং উল্টো তাঁর সমর্থিত
ব্যক্তিকে দিয়ে ধর্ষিতা ও তার স্বামী শফিকুল ইসলাম রিংকুকে আসামী করে একটি চাঁদাবাজি মামলা (নং ০৮ তাং ৪.০৯.২১ ইং) দায়ের করে। এ মামলায়
পুলিশ শফিকুল ইসলাম রিংকুকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে সে জেল হাজতে রয়েছে। ধর্ষিতার মা বলেন, রিংকু অন্তঃসত্তা স্ত্রীর খোঁজখবর না নেওয়ায় ও ভরণ পোষণ না দেওয়ার কারণে মানবেতর দিন কাটাচ্ছিল তাঁর মেয়ে। এ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বকুল মিয়া সরকারি গর্ভবতীদের
জন্য রেশন কার্ড দেওয়া ও মাটি কাটার চাকরির লোভ দেখিয়ে দুই দফায় ৩১ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। বর্তমানে মেয়েটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে
লড়ছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল রিংকু জেলে থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহণ করাও দুরুহ হয়ে পড়েছে। ধর্ষণের বিচার চেয়ে মামলা করায় উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলার আসামী হওয়ায় বিস্মিত হয়েছি।
স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, ধর্ষক ইউপি সদস্য বকুল মিয়ার বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণমামলাসহ সাতটি মামলা এবং অনেক অভিযোগ
রয়েছে। সম্প্রতি বকুলের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন
ইউনিয়নের বেত্রাহাটি বেপারীপাড়া গ্রামের মৃত তমুর উদ্দিনের পুত্র স্থানীয় ইউপি সদস্য বকুল মিয়া (৪৫) ও তার ভাইয়ের সন্ত্রাসী ও বেপরোয়া কর্মকান্ডে
ব্যবসায়ীসহ সাধারণ গ্রামবাসী অতীষ্ঠ। দীর্ঘদিন ধরে বকুলের নেতৃত্বে পরিচালিত সন্ত্রাসী বাহিনী ভুমি দস্যুতা, অবৈধ দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছে। প্রতিবাদ করলে শারীরিকভাবে মারধর ও লাঞ্ছিত করাসহ অপদস্থ করা হয়। ভুমি দস্যুতা, অবৈধ দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী দৌরাত্ম থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ প্রশাসন বরাবরে একাধিকবার আবেদন করেও সুফল পাওয়া
যাচ্ছে না বলে লিখিত অভিযোগ করেন ভোক্তভোগীরা।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. বকুল মিয়ার বক্তব্য জানতে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার পরিদর্শক রমিজুল হক গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ তদন্ত. কার্যক্রম চলছে। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. হেলাল উদ্দিন আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ওই নারীর রক্তপাত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, নির্যাতনের ফলেই তার
গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়েছে কিনা। তিনি আরও জানান, ঘটনাটি জানার পর কর্তব্যরতদেরকে ওই মহিলা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত হাসপাতাল ত্যাগ না করতেও
বলে দিয়েছি। নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি)
অ্যাডভোকেট এম এ আফজাল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমে জানান, মামলাটি গ্রহণ করে বিচারক কিরণ শংকর রায় ঘটনাটি তদন্ত করে
ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। পিবিআইয়ের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। এটি একটি ফাঁসি কিংবা যাবজ্জীবন সাজার যোগ্য গুরুতর অপরাধ বলে জানিয়েছেন তিনি।