insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121অজ (১২ সেপ্টেম্বর) বিশ্বখ্যাত গণিতবিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক মরহুম ড. মোঃ আব্দুল কুদ্দুসের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৪৮ সনের ২৫ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গ্রাম বানিয়াচং এর প্রথমরেখে জন্মগ্রহণ করেন। ড. মোঃ অাব্দুল কুদ্দুসের পিতা মরহুম মোঃ পারু মিয়া ছিলেন গ্যানিংগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির অামৃত্যু সেক্রেটারি, এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, জনাব আলী সরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও বানিয়াচং হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা। তার মা মরহুমা খায়রুন্নেসা খানম ছিলেন সাগরদিঘির পশ্চিম পারের ঐতিহ্যবাহী খান পরিবারের মেয়ে।
ড. মোঃ অাব্দুল কুদ্দুস শিক্ষাজীবন শুরু করেন চৌধুরী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানে দুই বছর পড়াশোনা করে ভর্তি হন উপমহাদেশের শতোর্ধ্ব প্রাচীন বিদ্যাপীঠ বানিয়াচং এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলে বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করতেন। এ স্কুল থেকে ১৯৬৪ সনে বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।
মেট্রিক পাসের পর তিনি সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬৬ সনে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অনার্সসহ প্রথম শ্রেণীতে এমএসসি পাস করেন। তিনি সেই সময় চাকরিতে যোগদান না করে ১৯৭২ সনে পিএইচ.ডি গবেষণা শুরু করেন এবং ১৯৮১ সনে প্রফেসর ড. মোঃ রমজান আলী সরদারের তত্ত্বাবধানে পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তার পিএইচ.ডির বিষয় ছিল- theory of generalized function. এটি বিশুদ্ধ গণিতের (pure mathematics) একটি অত্যন্ত কঠিন বিষয় কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য যে, অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীনই তার সাথে পরিচয় ঘটে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা, নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুস সালামের সাথে। কথায় বলে, রতনে রতন চেনে। সালাম সাহেব কিশোর অাব্দুল কুদ্দুসের জ্ঞানের প্রখরতা দেখে যারপরনাই মুগ্ধ হন এবং বিশ বছরের জুনিয়রের সাথে বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হন। ড. অাব্দুস সালাম তার প্রতিষ্ঠিত ইটালীর ট্রিয়েস্টিতে অবস্থিত international centre for theoretical physics এ উচ্চতর গবেষণার জন্য ১৯৮১ সনে পত্র প্রেরণ করেন। সেই চিঠিটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গায়েব করে ফেলে। সেখানে শুধু বিশ্বের নামকরা প্রফেসররাই সুযোগ পায়। পরের বছর তিনি সেখানে গবেষণা করেন। পরে তিনি অস্ট্রিয়ায়ও পোষ্ট ডক্টরেট করেন। ড. আব্দুল কুদ্দুসের প্রায় অর্ধশত প্রবন্ধ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এবং সেসব বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হয়। দীর্ঘ ষোল বছর পর তিনি ১৯৮৬ সনের ১৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৮৮ সনের ১ অক্টোবর সহকারী অধ্যাপক, ১৯৯৩ সনের ২১ জুলাই সহযোগী অধ্যাপক, ২০০১ সনের ২৭ মার্চ অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। তিনি অাপাদমস্তক একজন শিক্ষক ছিলেন। যেকারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করেননি।
তার সম্পর্কে চমৎকার মূল্যায়ন করেছেন সেই সময় ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে তার পাশের কক্ষের গবেষক বিখ্যাত লেখক অাহমদ ছফা " পুষ্প, বৃক্ষ ও বিহঙ্গ পুরাণ বইটিতে- কুদ্দুসের দুটি ধনুক ভাঙা পণের কথা আমরা সকলেই জানি। প্রথমটি হল কুদ্দুস ম্যাথমেটিক্স ডিপার্টমেন্টে এসিসট্যান্ট প্রফেসরের চাকরির জন্য অপেক্ষা করবেন। লেকচারার পোস্টে ডাকা হলেও যাবেন না। কারণ, ডক্টরেট পেতে তাকে দশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর থেকে শুরু করলেই এই এতগুলো বছর পুষিয়ে নিতে পারবেন। তাঁর দ্বিতীয় পণটি ডাক্তার ছাড়া অন্য কোনো পেশার মেয়েকে বিয়েই করবেন না। কুদ্দুসকে সাধারণত আমরা মিথ্যা বলতে দেখিনি। অার অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত মুহূর্তটিতেও একটি খারাপ কথা তাঁর মুখটি থেকে বেরিয়ে আসতে শুনিনি। আমাদের কেমন যেন একটা বিশ্বাস জন্মে গেছে আল্লাহতালা কুদ্দুসের উভয় দাবিই পূরণ করবেন।
তিনি অবশেষে নবীগঞ্জের বেতাপুর চৌধুরী বাড়ির কাস্টমসের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মরহুম গোলাম রব্বানী চৌধুরীর কন্যা ডাঃ সাহিরা চৌধুরীর সাথে ১৯৯০ সনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৯৩ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ড. আব্দুস সালামকে ডিলিট ডিগ্রী দেয়া হয়। সেই অনুষ্ঠানে তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল কুদ্দুস অংশগ্রহণ করেননি। বিষয়টি নজরে আসে ড. আব্দুস সালামের। অনুষ্ঠান শেষে তিনি ভিসি প্রফেসর এমাজ উদ্দীন আহমেদকে কৈফিয়ত তলব করে বলেন-where is my friend dr. abdul quddus? সাথে সাথে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ড. আব্দুল কুদ্দুসকে বাসা থেকে সসম্মানে ড. সালামের কাছে নিয়ে আসেন এবং দুই ঘন্টা তারা একান্তে আলাপ করেন। বিষয়টা তখন তোলপাড় সৃষ্টি করে।
ড. অাব্দুল কুদ্দুস আপাদমস্তক শিক্ষক ছিলেন। যে কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। দেশে সম্ভবত তিনিই একমাত্র উচ্চ শিক্ষিত যিনি টার্গেট পূরণের জন্য ষোল বছর বেকার ছিলেন। তিনি ছিলেন বানিয়াচং উপজেলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, প্রথম ডক্টরেট, প্রথম সর্বোচ্চ চাকরিজীবী (সচিব পদমর্যাদা), সিলেট বিভাগে গণিত শাস্ত্রে প্রথম ডক্টরেট। দেশপ্রেমিক ড. কুদ্দুসকে ড. আব্দুস সালাম তার ইটালিস্থ প্রতিষ্ঠানে ঢাবি শিক্ষকদের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি বেতনে চাকরি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশপ্রেমিক ড. অাব্দুল কুদ্দুস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোথাও চাকরি করতে চাইতেন না।
ড. আব্দুল কুদ্দুস সাতটি ভাষা জানতেন- বাংলা, ইংরেজি, হিন্দী, আরবি, ফরাসি, উর্দু ও জর্মন । তিনি পাকিস্তান, ভারত, ইটালি ও অস্ট্রিয়া ভ্রমণ করেন।
নিঃসন্তান ড. আব্দুল কুদ্দুস ২০০৬ সনের ১২ সেপ্টেম্বর চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
ড. আব্দুল কুদ্দুস ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত প্রচারবিমুুখ, সৎ, দেশপ্রেমিক ও ধার্মিক লোক ছিলেন।
বার্তা প্রেরকঃ
সাইফুল ফারুকী ( মরহুমের ভাগ্নে)