আজ ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

পণ্য না দেওয়ায় ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে মামলা

অর্ডার নেওয়ার পর পন্য না দেওয়ায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে মামলার আবেদন করেন মো. মুজাহিদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। পরে আদালত মামলা গ্রহণ করে ধানমন্ডি থানাকে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আজাদ রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মুজাহিদুর রহমান ইভ্যালি থেকে দুই টনের জেনারেল কোম্পানির একটা এসি অর্ডার করেছিলেন। যার দাম ছিল ৮৫ হাজার টাকা। অর্ডারের পর এসি না দেওয়ায় আদালতে তিনি মামলা করেন। আদালত ধানমন্ডি থানাকে মামলার আবেদনটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এর আগে গুলশান থানার প্রতারণার মামলায় তিনদিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এদিন আদালত উভয়ের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরমধ্যে একদিনের রিমান্ড দেন রাসেলকে। আর শামীমাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদ পুরের বাসা থেকে এ দম্পতিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে তাদের হাজির করা হয়।

এসময় গুলশান থানায় প্রতারণার অভিযোগে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওয়াহিদুল ইসলাম। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম তাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটির এমডি রাসেল এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অভিযোগকারী আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। পণ্যের অর্ডার বাবদ বিকাশ, নগদ ও সিটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে পুরো অর্থ পরিশোধ করা হয়।

পণ্যগুলো ৭-৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ডেলিভারি ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সরবরাহে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান সমপরিমাণ টাকা ফেরত দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে পণ্যগুলো ডেলিভারি না পাওয়ায় বারবার ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে ফোন করা হয়। সবশেষ ৫ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করেও অর্ডার করা পণ্যগুলো পেতে ব্যর্থ হন তারা।

এতে আরও বলা হয়, এরপর ৯ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির ধানমন্ডির অফিসে যান তারা। এসময় এমডি রাসেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করেন। একপর্যায়ে অফিসের ভেতরে অবস্থান করা রাসেল উওেজিত হয়ে তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে তাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন এবং পণ্য অথবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ভয়-ভীতি ও হুমকিসহ তাদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করা হয়। এতে তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে দিনযাপন করছেন এবং পণ্য বুঝে না পাওয়ায় আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

মামলার এজাহারে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে তিনটি ধারায় অপরাধের কথা বলা হয়েছে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারাগুলো হচ্ছে—৪২০, ৫০৬ ও ৪০৬।

অনেকদিন ধরেই ইভ্যালির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। ১৪ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে এক সভায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় ইভ্যালির প্রধান দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এর আগে ২৫ আগস্ট এক চিঠিতে ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হিসাব চেয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। চিঠিতে তাদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়। তারও আগে গত বছরের আগস্টে নাসরিন ও রাসেলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ