Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
অলঙ্ঘনীয়-সুলেখা আক্তার শান্তা – Pratidin Sangbad

অলঙ্ঘনীয়-সুলেখা আক্তার শান্তা

প্রতিদিন সংবাদ ডেস্ক:

অভাব অনটনের সংসারে অলক্ষ্যে গড়ে ওঠা বৈষম্য নিয়ে অনুতাপ করছিল মাজেদ। ছোট ছেলেকে নিয়ে আমার
অনেক আশা। ওকে পড়ালেখা করাব। বড় ছেলেকে দিয়ে তো পারলাম না। বড় ছেলে সেই ছোট থেকেই তো
আমার সঙ্গে কাজ করে।
ফরিদ বাবার দুঃখে সহমর্মিতা প্রকাশ করে। বাবা আপনি এত আফসোস করছেন কেন? আমিও চাই আপনি
সায়েমকে দিয়ে মনের আশা পূর্ণ করেন। ছোট বয়স থেকে সংসারের হাল ধরেছি তো কি হয়েছে! মা যদি সুস্থ
থাকতো সে আপনার দুঃখকষ্টের কিছুটা হলেও ভাগ নিতো। পাগল মানুষ তাকে তো আর ঘরে আটকে রাখা যায়
না। কোথায় যায় কোথায় থাকে কে জানে! যখন মন চায় বাড়ি আসে আবার ইচ্ছামত চলে যায়। ছোট ছেলে
সায়েম মায়ের পাগলামী মোটেই বরদাশ্ত করে না। পাগল মাকে দূর দূর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
মাজেদ বড় ছেলেকে বুঝায়, বাবা ও তো ছোট মানুষ অত কিছু বোঝেনা তাই এমন করে। তোর মায়ের ভালো
চিকিৎসা করানোর মত টাকা-পয়সা জোগাড় করতে পারিনা। আছে তো বসতবাড়ি আর একখণ্ড ফসলের
জমি। যা আয় রোজগার তাতো খাল-বিলের মাছ ধরে করি। বেলা বাড়ছে। বড় ছেলেকে বলে, চল বাপ-বেটা
মাছ ধরি। রান্না তো করা আছে। সায়েম স্কুল থেকে এসে খাওয়ার অসুবিধা হবে না। ওর জন্যই তো আমাদের
যত চিন্তা। বড় ছেলেকে নিয়ে মাজেদ বেরিয়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় খাল-বিল, নদী-নালা মাছ ধরে সেই মাছ
বিক্রি করে বাড়ি ফিরে।
সায়েমের পোশাক-আশাক চলাফেরায় সব সময় বাবুয়ানার ঠাঁট। দেখলে তা মনে হয় না কোন মাছ বিক্রেতার
ছেলে। দরিদ্র ঘরের সন্তান হলেও বরাবরই সে উচ্চাকাঙ্ক্ষী। তার আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল উচ্চ পর্যায়ের। তার
প্রতিফলনে সায়েম সবসময় অহংকারী ভাব নিয়ে চলত সে। ফরিদ কাজ থেকে বাড়ি ফিরে ভাইকে কাছে পেয়ে
আদর করে জড়িয়ে ধরে। সায়েম দ্রুত সরে যায়। বলে, আমাকে ধরো না, ইস তোমার শরীরে মাছের গন্ধ।
ফরিদ ভাইয়ের কথা শুনে হেসে উড়িয়ে দেয়। আমার ভাই তো সত্যি বলছে। ঠিক আছে আমি গোসল সেরে
আসি।
সায়েম বলে, শোনো তোমাকে একটা কথা বলি। তুমি আমাকে রাস্তা-ঘাটে, আমার স্কুলের লোকজনের কাছে ভাই
বলবেনা!
ঠিক আছে বলবো না। তুমি যেটা নিষেধ করবে সেটা কি আমি করতে পারি? ফরিদ ছোট ভাইয়ের কোন কথায়
কখনো রাগ তো করেই না ভাই যা বলে তা খুব নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলার চেষ্টা করে।

জাহানারা পাগল মানুষ তারপরও বাড়িতে আসলে ছেলে দুইটির জন্য হাতে করে কিছু না কিছু নিয়ে আসে। দুই
ছেলের হাতে দিয়ে সেগুলো তাদের খেতে বলে। ফরিদ মাকে সন্তুষ্ট করতে সেগুলো খায়। সায়েম তো খায় না
বরং ঘেন্না করে খাবারগুলো ছুঁড়ে ফেলে দেয়। জাহানারা ছেলেকে আদর করে বলে, বাবা খাবার গুলি ফেললি
কেন? আমি পাগল বলে আমার হাতেরটা খাবি না বাবা। খেলে আমি একটু দেখতাম, দেখে আমার পরানডারে
জুড়াইতাম।
সায়েম রাগে গড় গড় করে বলে, বাবা পাগলাকে বাড়ি থেকে তাড়াও। পাগলরে বাড়িতে জায়গা দেওয়া যাবেনা।

মায়ের প্রতি ছেলের এমন অমর্যাদাকর কথা শুনে মাজেদ অবাক হয়। বলে, তুই এসব কি বলছিস! পাগল হলেও
সে তো তোর মা!
পাগলের শরীরে কি বিচ্ছিরি গন্ধ। আর কোথায় থেকে কি টোকাইয়া নিয়ে আসে তা আবার খাইতে বলে। এমন
পাগল মানুষ আমার মা হইতে পারেনা! মাজেদ ছেলের উত্তেজনা দেখে কথা না বাড়িয়ে চুপ করে থাকে।

সায়েম এখন সুদর্শন যুবক। স্কুল পাড়ি দিয়ে কলেজে পড়ে। কলেজের সহপাঠী লোপার সঙ্গে প্রেম হয়। সায়েম
ভালোবাসার কথা বলে লোপার কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী নেয়। শার্ট-প্যান্ট, টাকা-পয়সা এসব
পাওয়াই ছিল তার কাজ। আজ এটা তো কাল ওটা। লোপা অন্ধের মত ভালবাসে সায়েমকে। সায়েমের চাওয়া-
পাওয়াকে পূর্ণ করতে ব্যাকুল হয়ে থাকে লোপা। এদিকে সায়েমের সারাক্ষণের ধ্যান ধারণা কি করে উপরের উঠা
যায়। লোপা বিয়ের কথা বললে সায়েম ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, রাখ তোমার বিয়ে! আগে প্রতিষ্ঠিত হই পরে ভাবা যাবে
বিয়ের কথা।
তুমি এত রাগ কর কেন? আমি তো এখনই বিয়ের কথা বলছিনা। আমাদের পড়ালেখা শেষ হবে তুমি চাকরি
করবে তারপর বিয়ে। তুমি আর আমি মিলে কি করে সাজাবো জীবন, সেই কথা বলছি আমি। মানুষের স্বপ্ন
থাকতে হয়। স্বপ্ন কিভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায় সেই ভাবনায়ও থাকতে হয়। স্বপ্ন মানুষকে সামনের দিকে
এগিয়ে নিয়ে যায়। আমার মনে তোমাকে নিয়ে অনেক কল্পনা। লোপার কোন কথা যদি সায়েমের মনপুতঃ না
হত তা হলে সায়েমের চোখে মুখের দিকে তাকানো যেত না। চোখ-মুখ এমন করে রাখে তা দেখে আর লোপর
মনের ভাব প্রকাশ করতে ইচ্ছা জাগে না।
সায়েম যখন ভার্সিটিতে এডমিশন পেল তখন লোপার প্রতি তার ভালো লাগা কমতে থাকে। তখন সায়েমের
ভালো লাগে বড়লোক বাবার মেয়ে শায়লাকে। সহজ সরল পিতা মাতার ঘরে এমন স্বার্থপরতার জন্ম বিস্ময়কর!
সায়েম ভাবে লোপার ভালোবাসা দিয়ে কি হবে! জীবনের উপরে উঠতে গেলে কারো জন্য দয়া-মায়া করলে চলে
না। ওপরে ওঠার আরো উঁচু সিঁড়ি তার প্রয়োজন। সায়েম সব সময় আঠার মতো লেগে থাকে শায়লার পিছনে।
শায়লা পাত্তা দেয় না সায়েমকে। সায়েমও নাছোড়বান্দা শায়লার কাছ থেকে ভালোবাসা আদায় করেই ছাড়বে।
সায়েমের কাকুতি মিনতি দেখে একসময় শায়লার মন নরম হয়। জায়গা করে নিতে সক্ষম হয় কৌশলী সায়েম।
এদিকে লোপা ভালোবাসার মানুষের দূরে সরে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়ে। খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়। লোপা
মুখোমুখি হয় সায়েমের। জানতে চায় কি কারণে তুমি আমার সঙ্গে এমন করছো? কথা বলো না, দেখা করো না,
আমাকে এড়িয়ে চলো।
শোন তোমাকে সোজাসুজি বলি, তোমাকে আমার ভালো লাগে না।
তাহলে এই তোমার ভালোবাসা?
হ্যাঁ।
বাহ তুমি বলে দিতে পারলে কত সহজে। সম্পর্ক গড়ার সময় এসব কথা চিন্তা করনি কেন?
সবকিছু চিন্তা ভাবনা করে হয় না।
ঠিক আছে তোমার সম্মুখীন আমি কখনোই হবো না। তুমি সুখী হও আমি তাই চাই। আমার কাছ থেকে
তোমাকে মুক্ত করে দিলাম।
সায়েম এই কথা শুনে মহা খুশি। ভাবে এখন শায়লাকে নিয়ে পুরোদমে ব্যস্ত থাকবে। লোপার বাবার চেয়ে
শায়ালার বাবা আরো বেশি ধনী। সায়েম অর্থ সম্পদের লোভে শায়লার দিকে করে ঝুঁকে পড়ে।
শায়লা বুদ্ধিমতি মেয়ে। সায়েমের আচরণে বুঝতে পারে সায়েম মনে ভালোবাসা নেই। তার কাজ ভালোবাসার
কথা বলে স্বার্থ উদ্ধার করা। শায়লা এড়িয়ে চলে সায়েমকে। সায়েম জিজ্ঞাস করে শায়লাকে তুমি আমার সঙ্গে

এমন করছো কেন? তাতে শায়লা উত্তর দেয় না। কি কারণে আমার সঙ্গে এমন করছো কারণ তো খুলে বলবা?
শায়লা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আর তুমি আমাকে অবজ্ঞা করেই যাচ্ছ। শায়লা একপর্যায়ে বলতে
বাধ্য হয় তোমার এইসব প্রহসন বাদ দাও। তুমি ভাবছো তোমার কোন কিছু আমি জানিনা? লোপাকে?
যাইহোক তোমার এইসব ব্যাপার নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। সায়েম কোনভাবেই শায়লাকে ধরে রাখতে
পারেনা। তার সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। এতে সে হতাশার গ্লানিতে নিমজ্জিত হয়।
সায়েম ধনী হাওয়ার কৌশল খোঁজে। বাবাকে বলে, জমি বিক্রি করে আমাকে টাকা দাও। সেই টাকা দিয়ে আমি
ব্যবসা করব।
মাজেদ অসহায় হয়ে পড়ে। চিরদিন ছোট ছেলের জেদ পূরণ করে এসেছে। বোঝাতে চেষ্টা করে, তোর বড়
ভাইয়ের কথাটা একবার ভাববি না। তোকে পড়ালেখা করাইছি তুই চাকরি-বাকরি একটা কিছু করে খাইতে
পারবি। ফরিদ তো তা পারবে না। আর ওই জমি টুকুই আছেতো সম্বল।
পড়ালেখা সবার ভাগ্যে হয় না। আমার ভাগ্যে পড়ালেখা ছিল তাই আমি পড়ালেখা করেছি। সে পড়ালেখা করে
নাই তাই সে যেকোনো কাজ করে খেতে পারবে। আমি চাইলে তো যেকোনো কাজ করতে পারবোনা!
ঠিক আছে বাবা তুই যা ভাল মনে করিস। ফরিদও মনে করে সায়েম পড়ালেখা জানা সে যা করবে ভালোর
জন্যই করবে। ফরিদ বাবাকে জমি বিক্রি করে টাকা দিতে বলে। সায়েম ব্যবসা-বাণিজ্য করে উন্নতি করলে
তাতো আমাদের জন্যই ভালো হবে।
মাজেদ জমি বিক্রি করে সায়েমকে টাকা দেয়। টাকা দেওয়ার সময় বলে, বাবা তোর কাছে আমার একটাই
দাবি। আমি আমার নিজের জন্য তোর কাছে কিছু চাই না। তোর ভাইটাকে তুই কখনোই ফেলিস না। ও তোর
জন্য অনেক কষ্ট করেছে। আর ব্যবসা-বাণিজ্য ভাল হলে তোর মায়ের চিকিৎসা করাবি। দেখবি তোর মা ভালো
হয়ে যাবে। সায়েম ভালো-মন্দ কোন কথা বলে না চুপ করে থাকে। সায়েমের ব্যবসা ভালো উন্নতি হয়। অবস্থা
ভাল হলে সে আলাদা থাকে। বাবা ভাইয়ের সাথে কোন যোগাযোগ রাখে না।

সায়েমের বন্ধু রাফি প্রবাসে থাকে। সে দেশে আসে ছুটিতে। রাফি আর সায়েম দুই বন্ধু মিলে বিভিন্ন জায়গায় খুব
ঘুরে বেড়ায়। রাফি নিজের বাসাতে বন্ধু সায়েমকে বেড়াতে নিয়ে আসে। রাফি স্ত্রী তানহার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে
দেয় সায়েমকে। প্রবাসী বন্ধু রাফির ছুটি শেষ হয়ে আসে। বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে রাফি বলে, বন্ধু আমার তো
বিদেশ যাওয়ার সময় হয়ে গেল। তুই আমার স্ত্রীর খোঁজ-খবর রাখিস।
সায়েম বলে, ঠিক আছে বন্ধু এই বিষয় নিয়ে ভাবিস না। আমি খোঁজ খবর রাখবো। রাফি বিদেশ চলে যায়।
সায়েম প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে খোঁজখবর রাখে রাফির স্ত্রী তানহার। সায়েমের বাসায় আসা-যাওয়ার সূত্রে দুজন
দুজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তানহার ডিভোর্স দেয় রাফিকে। রাফির সব টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে
বিয়ে করে সায়েম আর তানহা। সায়েমের স্বার্থপর জীবনের ষোল কলা এভাবেই পূর্ণ হয়। সায়েম পিতা-মাতা
আর ভাইয়ের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়া তার জীবনকে তাদের সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে নিষ্ঠুর ভাবে।