insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121প্রতিদিন সংবাদ ডেস্ক:
আমার কারো হুকুম ভালো লাগেনা। আমি চলব নিজের স্বাধীন ইচ্ছায়। আমি পুলিশে চাকরি করব না। দিন
রাত নেই শুধু ছুটে চলো চোর ছেচ্চোরের পিছনে। আনিসুর রহমান ব্যাগ গুছিয়ে মনের কথাগুলো বলছিলেন।
আমি চাকরি ইস্তফা দিয়ে বাড়ি চলে যাব। আনিসুর রহমান চাকরি ছেড়ে খুলনা থেকে বরিশাল চলে আসে।
কারো হুকুম তামিলের তাড়া নাই পুরো স্বাধীনতা। আনিসুর রহমান কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে বউকে বলে, আমি
একে বারে চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছি! নাহার সাদামাটা মনের মানুষ। কোনো কিছুতেই তার মত অমত
নেই। স্বামী যা বলে তাই সে নিরবে মেনে নেয়। তুমি কিছু বলছো না যে? এমন কান্ডো করে বসলাম!
কি বলবো, আপনি যা ভালো মনে করেন তাই করেছেন।
হ্যাঁ, আমার বাবার অর্থ-সম্পদ কম আছে নাকি? এগুলো দিয়েই আমি পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারবো।
আমার সাত মেয়ে। ওদের পাশে যেন আমি সবসময় থাকতে পারি। এরা আমার মেয়ে না যেন সাত ছেলে।
নাহার স্বামীকে নিচু স্বরে বলে, আমি আপনার মতো অত বুঝি না। তবুও বলি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। উপার্জন
করার তো কেউ নেই। এক আছে জমি ক্ষেত এই তো ভরসা। চাকরি ছাড়ার আগে একবার ভেবে দেখা উচিত
ছিল!
বেশ জ্ঞান দেওয়া শুরু হলো বুঝি। আমি ভালো বুঝি কি করতে হবে না করতে হবে। স্বামীর এই কথা শুলে
নাহার আর কথা বাড়ায় না। এরপর সে চলে গেল রান্না ঘরে। মেয়েরা সবাই বাবার কাছে এসে বসে। বাবার
সাথে হৈ হুল্লোর আনন্দে ভজন পর্ব শেষ হয়।
আনিসুর রহমান জমি বিক্রি করে সংসার খরচ চালায় আর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়।
আনিসুরের আস্তে আস্তে বউ বাচ্চাদের প্রতি অনিহা জম্মায়। টাকা পয়সা বিভিন্ন জায়গায় খরচ করে। সংসার
প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বউ বাচ্চা না খেয়ে থাকার মত অবস্থা। নাদিয়া বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া কষ্ট দেখে
কাউকে কিছু না বলে প্রতিবেশী ফুফু রুবির বাসায় যায়। রুবির বাসায় কাজ করে। মাসে মাসে কিছু টাকা
বেতন দেয়। তা নাদিয়া জমিয়ে রাখে। নাদিয়া কাজের ফাঁকে একা নিরবে বসে কাঁদে আর বলে, বাবা-মা
সন্তানরে লালন-পালন করে, পড়ালেখা করায়, বিয়ের উপযুক্ত হলে বিয়ে-শাদী করায়। আমার বাবা-মা সন্তানের
দায়িত্ব পালনে উদাসীন। মা ভিন্ন প্রকৃতির সহজ-সরল নারী। বাবার ইচ্ছা ছাড়া তাঁর চলার স্বাধীনতা নাই। মা
তাঁর স্বামীর উপর অধিকারের দাবি খাটাতে পারেনা। স্বামী যা বলে তাতেই সায় দিয়ে যায়। আর দশটা
সংসারের মত সে যদি স্ত্রীর প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটাতে পারতো সন্তানদের ভবিষ্যৎ এভাবে ধুলিস্যাত হতো না।
আজ তাদের মানুষের বাড়ি কাজ করে খেতে হয়। নাদিয়া একদিন ফুফুকে বলে, অনেকদিন হয় বাড়ি থেকে
আসছি মা-বাবা, বোনেরা আমার জন্য হয়তো কান্না কাটি করে। একবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। নাদিয়া
বাড়িতে যায়। সবাই নাদিয়াকে দেখে অবাক। নাহার মেয়েকে পেয়ে বুকে টেনে নিয়ে বলে, মা কোথায় চলে
গেয়েছিলি?
মা আমি সংসারের এই পরিস্থিতি দেখে রুবি ফুফুর কাছে গেছিলাম। এতদিন আমি তার কাছেই ছিলাম। ফুফু
আমারে মাসে মাসে কিছু টাকা দিত। সেই টাকা জমিয়ে রেখেছি। এই টাকা দিয়ে এখন তোমরা একটা কিছু
করো।
না মা এই টাকা দিয়ে তোর বিয়ে-শাদী দেবো।
তাহলে এই টাকা দিয়ে একটু জমি কেনার কাজে লাগানো যায় কিনা দেখো। সেখানে একটা স্বপ্নের বাড়ি করব।
একটা পুকুর করব। পুকুরের ঘাট বাধাবো।
মা-মেয়েকে আবার বুকে টেনে নিয়ে বলে, আমার মেয়ের কত স্বপ্ন। দোয়া করি স্বপ্ন পূর্ণ হোক। নাদিয়া
বাড়িতে কয়েকদিন থেকে রুবি ফুফুর কাছে চলে যায়। কিছুদিন পর নাদিয়া খবর পায়, তার বাবা যে লোকজন
কাছে থেকে ঋণ করে টাকা এনেছে তার বাড়ি এসে হামলা করেছে। নাদিয়া বাড়ি গিয়ে মাকে বলে, মা আমার
জমি কিনা লাগবে না। আগে বাবার ধারের টাকা পরিশোধ করো। মা তোর টাকায় বাবার ঋণের চার ভাগের
একভাগ হয়তো শোধ হবে। তারপরও তোর বাবা অনেক টাকা ঋণ থাকবে।
কিছু টাকা দিয়ে অন্ততপক্ষে লোকদের ঠেকাও। কাজকর্ম করে আস্তে আস্তে বাকি টাকা পরিশোধ করে দিব।
নাদিয়া ভাবে বাবা খাওয়া পরা না দিছে তাতে কি! শত হলেও সে তো আমার বাবা। সন্তান হিসেবে তো বাবা
মার প্রতি কর্তব্য আছে। বাবা অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত। আমি কাজ করে যে টাকা বেতন পাই তাতো দু’পাঁচ বছরেও
সেই ঋণ শোধ করা সম্ভব না।
রুবি দেখে নাদিয়া সবসময় মনমরা হয়ে বসে থাকে। নাদিয়া জিজ্ঞাস করে, তোর হয়েছে কি সবসময় এমন
ঝিমধরে বসে থাকিস।
নানা ফুফু কিছু না।
কিছু না হলে বেশ ভালো। এদিকে আর এক সমস্যা, কি যে করি।
ফুফু কি হয়েছে?
প্রবাসে আমার দেবর থাকে ওর স্ত্রী খুব অসুস্থ। একজন লোক চাইছে স্ত্রীর দেখা শোনার জন্য, বেতনও দিবো
ভালো।
নাদিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ফুফুকে বলে, ফুফু আমাকে ঐখানে পাঠানো যায় না?
তুই যাবি তো আমার কাজ করবে কে?
ফুফু ওখানে বেতন ভালো। আপনে তো যানেন আমার বাবা ঋণগ্রস্ত। কাজটা হলে লোকের দেনা তাড়াতাড়ি
পরিশোধ করা যেতো। আপনি তো এখানে আরেক জন লোক রেখে নিতে পারবেন।
দেখি চিন্তা করে।
ফুফু আপনের আর ভাবার দরকার নাই। আপনি আমাকে ওখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। অনুনয় করে বলে,
আমার বড় উপকার হবে। আমাদের পরিবারটা বেঁচে যাবে।
আচ্ছা আমি দেখি তুহিনের সঙ্গে আলাপ করে।
নাদিয়া প্রবাসে যাওয়ার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়। রুবি বলে, বাবা-মা ঋণগ্রস্ত পাড়ি দিচ্ছিস প্রবাসে, নিজেরও
দিকটাও একটু ভাবিস।
আর ভাবাভাবি।
বাবা-মার সুখের কথা ভেবে প্রবাসে যায়। টাকাটা পেলেই পাঠিয়ে দেয় বাবা-মার কাছে।
নাহার মেয়েকে বলে, মা তুই দেশে চলে আয়।
না মা বাবার দেনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত আমি দেশে আসবো না। নাহার স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে। আজ
আপনার জন্য মেয়ে আমার প্রবাসে। মেয়ের মুখটা দেখি না কতদিন। নাহার একটু সরব হয়। আপনি নিজের
ইচ্ছামত চলতে গিয়ে স্ত্রী সন্তানের প্রতি কর্তব্য পালন করতে পারেন নাই। আমি আপনার কোন কাজে বাধা
দেইনি। আপনি যাই করেছেন শুধুই চোখ দিয়ে নিরব নিভৃতে দেখে গেছি।
আনিসুর রহমান স্ত্রীকে বলে, নাহার তুমি ঠিকই বলছো, আমার কারণে তোমাদের সবার সুখ নষ্ট হয়েগেছে।
আমিও তো সুখি না। তোমাদের কাউকেও সুখি করতে পারলাম না। নাদিয়া মেয়ে হয়ে আজ আমার সংসারের
হাল ধরছে। দীর্ঘশ্বাস চেপে বলে, বাবা হয়ে আমি কিছুই করতে পারি নাই।
নাদিয়া বাবার ঋণের সব ঢাকা পরিশোধ করে। নাহার মেয়েকে বলে, মা তোর বাবার ঋণের টাকা সব পরিশোধ
করছিস এবার তুই চলে আয়।
নাদিয়া বাবার ঋণের টাকা সব পরিশোধ করে। নাহার মেয়েকে বলে, মা তোর বাবার ঋণের টাকা সব পরিশোধ
করছোস এবার তুই চলে আয়।
মা চাইলেই তো আর আসা যায় না। আরো তো কিছু কাজ বাকি আছে।
মা আর কি কাজ আছে?
মা আমার বোনদের বিয়ে দিতে হবে। তার জন্য তো খরচের ব্যাপার আছে।
এখন বোনদের দায়িত্ব মাথায় নিবি? তোর নিজের বিয়ের বয়সও তো পার হচ্ছে।
মা আগে বোনদের দেই। তারপরে নিজেরটা নিয়ে ভাবা যাবে।
তুই যা ভালো বুঝিস তা কর।
নাদিয়া কথার খেই হারিয়ে ফেলে, দায়িত্ব একাবার কাঁধে চাপলে তার আর শেষ হয়না। বিবেকবান মানুষেরা
চিরদিন দায়িত্বের বেড়াজালে আটকে যায়। দায়িত্ব তাদের কাঁধে এসে চেপে বসে।
নাদিয়া টাকা-পয়সা খরচ করে একে একে সব বোনদের বিয়ে দেয়। এবার একটু স্বস্তির পালা। মানুষের আশার
শেষ নাই। একএক করে আশার পরিধি বাড়তেই থাকে।
নাহার বলে, মা নাদিয়া এবার তো তোর প্রবাস থেকে আসার আপত্তি নেই।
না তা থাকবে কেন? আমারো তো দেশে আসতে মন চায়! তোমাদের দেখতে মন চায়। মনটা কেমন করে
তোমারদের দেখার জন্য। আসবো মা তবে আর একটু কাজ বাকি আছে। মা তোর আর কি কাজ বাকি আছে?
মা বলেছিলাম আমি জমি কিনবো। সেখানে একটা বাড়ি করবো। একটা পুকুর করবো। সেখানে সান বাধানের
একটা ঘাট থাকবে। মা তোমার মনে আছে? হৃদয়ে লালিত সেই স্বপ্নের কথা বলতে থাকে।
হ্যাঁ মা তা মনে আছে। তাহলে বলো আসি কি করে? এই কাজের টাকা হলেই মা আমি দেশে আসবো।
মা সেই কাজ শেষ হওয়া তো মুখের কথা না। আরো কতো দিন লাগবে। তোরে দেখার জন্য পরানটা ছিঁড়ে যায়।
মা আর একটু অপেক্ষা করো। একটু গোঝাতে পারলেই একেবারে দেশে চইলা আসবো। তখন পরানটা ভইরা
দেইখো মা।তোর যখন বাড়ি করার এতই ইচ্ছা তখন তুই সেই কাজ পূর্ণ করার ব্যবস্থা করে আয়।
মা তোমার কোথায় তার প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। নাদিয়া কাজের ধ্যানে ব্যস্ত। তার ভাগ্য অনেকের চেয়ে ভালো
বলতে হবে। প্রবাসী কতজনকে কত বঞ্চনার শিকার হতে হয় তার ক্ষেত্রে তেমন কিছু অঘটন ঘটেনি। সব সময়
সবার সহযোগিতা পেয়েছে। সব কাজে পরিস্থিতি তার অনুকূলে ছিল। তার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভের সম্ভাবনায়
বিমোহিত সে। জমি হয়েছে এবার বাড়ি করার টাকার জোগাড় হলেই দেশে যাবে। কঠিন পরিশ্রম করে তিল তিল
করে জমতে থাকে অর্থ। একদিন মাকে বাড়ির কাজ শুরু করতে বলে। আর বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষায় দিন গুণতে
থাকে। আনিসুর রহমান খুব খুশি। মেয়ের সাফল্যে গর্বে বুক ভরে ওঠে। মেয়ের সাফল্যে নিজের জীবনের সব
ব্যর্থতা যেন মুছে গেছে। স্ত্রীকে বলে আমি তো তোমাকে সুখ দিতে পারলাম না এবার মেয়ের কারণে সুখ করো।
নাদিয়া মা আমার সোনার টুকরো মেয়ে। আমাদের চিন্তা থেকে মু্ক্ত করে সবাইকে সুখ দিলো। ওই যেন সুখি
হয়। আল্লাহর কাছে এই দোয়া করি।
জমি, বাড়ি, পুকুর, সান বাঁধানো ঘাট সবিই হলো। আনিসুর রহমান প্রতিটি কাজ অত্যন্ত যত্ন করে সম্পন্ন করে।
এবার প্রতীক্ষার পালা। নাদিয়া প্রবাস থেকে দেশে আসবে। সবাই সেই অপেক্ষায়। এমন সময় এক মর্মান্তিক খবর
এলো। প্রবাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নাদিয়ার মৃত্যু হয়েছে। হঠাৎ করেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত ঘটে গেল নিষ্ঠুর
ঘটনা। প্রিয়জনের দেশে ফেরার আনন্দে উচ্ছল পরিবারে নেমে এলো শোকের বিলাপ। আপনজন হারানোর
বিদীর্ণ আহাজারিতে বিষন্ন হয়ে ওঠে পরিবেশ। আনিসুর রহমান ভূলুণ্ঠিত হয়ে বলতে থাকে, আমাদের সুখ দিতে
গিয়ে নাদিয়ার আজ এই অবস্থা। মা বুক ফাটা আর্তনাদে বলতে থাকে, আমাদের সুখ দিলি তুই তো সুখের মুখ
দেখতে পারলি না। সুখ হিসাবে মৃত্যুকেই বরণ করে নিতে হল মা। এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলেগি
পরপারে।
পদ্ধতিগত জটিলতায় নাদিয়ার লাশ দেশে আনা সম্ভব হয়না। আনিসুর রহমান অনেক চেষ্টা করে শেষে হাল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। প্রবাসেই নাদিয়ার দাফন হলো। ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস লাশ হয়েও তার দেশে ফেরা হলো না। জীবনের সব স্বপ্ন নিয়ে নাদিয়া চলে গেল স্বপ্নের দেশে।