আজ ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সাংবাদিকদের কোন্দলের কারণে কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাব তালাবন্ধ

প্রতিদিন সংবাদ ডেস্ক : সাংবাদিকদের মধ্যে গ্রুপিং আর আন্তঃকোন্দলে চার বছর ধরে বন্ধ কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাব। তবে এখন প্রেসক্লাবটি খোলার পক্ষে রয়েছেন সব সাংবাদিক।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নিলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীর নির্দেশে প্রেসক্লাবে তালা দেওয়া হয়। এক পক্ষের অভিযোগ, নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে বহিরাগত লোকজন দিয়ে প্রেসক্লাব দখল ও নিজেদেরকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রচার করে প্রতিপক্ষরা।

দীর্ঘদিন ধরে প্রেসক্লাবের সদস্য করার দাবি জানিয়ে আসা অপরপক্ষের অভিযোগ, কমিটিতে থাকা সাংবাদিকরা দুর্নীতি ও অনিয়মে লিপ্ত। সাংবাদিক লুৎফর রাশিদ রানা বলেন, গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ৮ এর ৫ ধারার বিধানানুযায়ী আমাকে আহ্বায়ক করে ৫ জন সদস্য নিয়ে এডহক কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় দৈনিক শতাব্দীর কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক আহমেদ উল্লাহ সভাপতি ও ইটিভির জেলা প্রতিনিধি সাকাউদ্দিন আহাম্মদ রাজন স্বঘোষিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করার পর আমরা মামলা করি।

সকল সাংবাদিকদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার কোনো প্রচেষ্টা আপনাদের আছে কিনা এমন প্রশ্নে লুৎফর রশীদ রানা বলেন, মিলেমিশে কিছু হবে না। চোরদের সঙ্গে আবার কিসের মিল। আইন যা বলে তাই হবে। সাকাউদ্দিন আহমেদ রাজন বলেন, আমি সবসময় সত্য সুন্দর ও ন্যায়ের পূজারী, আলোর পথে ও সমষ্টিগতভাবে সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে থাকতে চাই। শুধু প্রেসক্লাব নয়, কিশোরগঞ্জের প্রত্যেকটি সংগঠন যেমন- ডায়াবেটিক হাসপাতাল, শিল্পকলা একাডেমি, জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ যেসকল প্রতিষ্ঠানে অনির্বাচিত কমিটি রয়েছে। আমি এসকল প্রতিষ্ঠানে নির্বাচিত কমিটির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাই।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি সাইফ উদ্দিন লেনিন বলেন, এখানে জনে জনে গ্রুপিং। দুই কলম লিখতে পারে না, অথচ তারাই সাংবাদিক নেতা। আমি যতটুকু জানি ওপর মহলের নির্দেশে প্রেসক্লাবে তালা দেয়া হয়। প্রেসক্লাবের মালামাল চুরির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে যারা কমিটিতে ছিলো তারা আমাদের সদস্য পদ দিতো না। পরে আমরা যারা বঞ্চিত, তারা সকলে মিলে প্রেসক্লাব দখল করি। ঐসময় ৪ থেকে ৫ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও একাধিক অ্যাডিশনাল এসপি ছাড়াও প্রায় ২ শতাধিক পুলিশ সদস্য ছিলেন। এদের সামনে প্রেসক্লাবের মালামাল নেওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপ্রতি এ কে নাসিম খান বলেন, বিষয়টি এখন আর আমাদের হাতে নাই। ওপর মহল যদি চায় তবে সমাধান হবে। আরেকটা সমাধান হচ্ছে, সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিরা উভয়দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পরস্পরের সঙ্গে সন্ধি ও শান্তিপূর্ণ সমঝোতা করে দিবে।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এটিএন বাংলার জেলা প্রতিনিধি সাইফুল মালেক চৌধুরী বলেন, চেয়েছিলাম, যারা মূলত সাংবাদিক তাদের সমন্বয়ে আবারো প্রেসক্লাব পরিচালনা করা। প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সাংবাদিকের সংখ্যা ছিলো কম। তখন প্রেসক্লাব পরিচালনার জন্য একটা নিয়ম করা হয়। যা এখনও বলবৎ আছে। এ নিয়মের ফলে পরবর্তীতে সদস্য বৃদ্ধি করা যায়নি। এটি সংশোধন না হওয়া এমন চলতে থাকবে।

জানা গেছে, প্রেসক্লাব খোলার জন্য গত ১২ ফেব্রুয়ারি শিল্পকলা একাডেমিতে দুই পক্ষের সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক। তবে এতে সাংবাদিকদের সবাই উপস্থিত না থাকায় সমঝোতা সম্ভব হয়নি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়ে আলোচনা করে তালা খুলে দেওয়ার।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের বর্তমান অনির্বাচিত কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন।

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ