insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121মোংলা বন্দরকে সচল রাখতে পশুর নদী খননে উত্তোলিত বালু খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার বাণীয়াশান্তা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ তিন-ফসলি কৃষিজমিতে ফেলানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে তিনশো একর জমি পতিত হওয়ার পাশাপাশি কৃষির ওপর নির্ভরশীল অন্তত ৫ হাজার পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উচ্চ আদালতের আদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা উপেক্ষা করে গৃহীত ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাপার পক্ষ থেকে সরেজমিন প্রতিবেদন তুলে ধরে ওই দাবি জানানো হয়।
বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা মোংলা শাখার আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ। সরেজমিন প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাপা’র সহ-সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান, বাপা’র কোষাধ্যক্ষ মহিদুল হক খান, নির্বাহী সদস্য এম এস সিদ্দিকী, দাকোপ থেকে আগত স্থানীয় কৃষিজমির মালিক সত্যজিত গাইন ও হিরন্ময় রায়, নারী নেত্রী সুপর্না রায়, বাণীশান্তা ইউপি সদস্য জয় কুমার মন্ডল মানিক প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে বলা হয়, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে একনেক সভায় অনুমোদিত পশুর নদী খনন প্রকল্পের আওতায় পশুর নদী থেকে প্রায় ২১৬ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালু উত্তোলন করা হবে। ওই মাটি ও বালু দাকোপ ও মোংলা উপজেলার বিভিন্ন খাস ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ফেলানো হবে। এরমধ্যে দাকোপ উপজেলার বাণীয়াশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর জমিতে খননকৃত মাটি ও বালু ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা এখন পশুর নদী পাড়ের মানুষের ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ ওই অঞ্চলের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষিকাজ। এতে তাঁদের সেই জীবিকা এখন হুমকির মুখে পড়বে।
মূল বক্তব্যে বলা হয়, বানিয়াশান্তা এলাকায় মূলতঃ সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস। তিন ফসলি কৃষিজমির ওপর নির্ভর করে বংশপরম্পরায় তাদের জীবন-জীবিকা চলে। সেখানে দীর্ঘদিন বালু, মাটি ফেলে রাখায় তাঁদের জমি উর্বরতা হারাবে। সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ হয়তো মিলবে, তবে ফসল উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হয়ে একসময় তাদের ভিটেবাড়ি ছাড়তে হবে।
আরও বলা হয়, বেপরোয়া শিল্পায়নের কবলে থাকা সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন যে সকল এলাকায় উচ্চ আদালত যেকোনো ভরাট ও শিল্প স্থাপন নিষেধ করেছে, মোংলা ও দাকোপ উপজেলায় জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃক চিহ্নিত স্থানসমূহও সেই এলাকার অন্তর্ভুক্ত। জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে স্থানীয় জনসাধারণের ব্যাপক প্রতিবাদ উপেক্ষা করে পশুর নদীর খননকৃত মাটি ও বালু ফেলার মাধ্যমে মোংলার ৭০০ একর জায়গায় বালির পাহাড় গড়ে অসাধু শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের ইতিমধ্যে সুবিধা করে দিয়েছে। বানিয়াশান্তা এলাকায়ও একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।
সুন্দরবন অঞ্চলের প্রাণ-প্রকৃতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ওই সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে ড. নজরুল ইসলাম বলেন, পশুর নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্র জাতিসংঘ স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সার্বিক বাস্তুতন্ত্রের টিকে থাকা না থাকার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায় বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি পশুর নদীতে যেকোনো খননকাজ পরিচালনার পূর্বে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষার ব্যাপারে সরকারকে ইতিমধ্যে পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু যথাযথ সমীক্ষা ছাড়াই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা হাজার হাজার মানুষের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলবে। পরিবেশ ধ্বংস করবে। এমনকি বালু ফেলাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে।
বাপা সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, সরকারি নথিতে বানিয়াশান্তা এলাকায় বালি ফেলাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। সেখানে বিকল্প প্রস্তাবও রয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীও চান না ফসলি জমি নষ্ট হোক। আর এটা তিন ফসলি জমি। যেখানে ব্যাপক ধান ও তরমুজ উৎপাদন হয়। সেখানে একাধিক বিকল্প থাকা সত্ত্বেও জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে শিল্প মালিকদের স্বার্থরক্ষায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাই বানিয়াশান্তা এলাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষের বালু ফেলার পরিকল্পনা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানাই। একইসঙ্গে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে যথাযথ পরিবেশগত অভিঘাত পর্যালোচনার মধ্যদিয়ে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পশুর নদীর নাব্যতা-সংকট সমাধানের আহ্বান জানাই।