Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
নিঃসঙ্গ জীবন-সুলেখা আক্তার শান্তা – Pratidin Sangbad

নিঃসঙ্গ জীবন-সুলেখা আক্তার শান্তা

হীরা দাঁড়িয়ে আছে দোকানের খুঁটি ধরে। অনেকক্ষণ পর লক্ষ করে বৃদ্ধা জামিলা। বলে, ওমাইয়া এখানে দাঁড়াই আছো কেন? হীরা কোন কথা বলে না। কিগো মুখে কথা নাই তোমার? নাকি কানঠাসা। বড় বড় চোখ করে হীরা বৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে থাকে। কোন কথা হীরার মুখ থেকে বের হয়না। এরমধ্যে হীরা হঠাৎ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়। কি হলো, কি হলো, মইরা আবার আমারে মারবো নাকি? বুড়া বয়সে মার্ডার কেসের আসামি হইতে চাই না! এমনিতেই পারিনা হাঁটতে চলতে। কই থেকে এসে ঝামেলায় ফেলেল। লোকজন জিজ্ঞেস করে কি হলো, মেয়েটার কি হলো? বিরক্ত কণ্ঠে জামিলা বলেন, আরে আমি কি করে বলবো? যত্তসব উটকো ঝামেলা এসে পড়ে আমার উপর। জামিলা গ্লাসে পানি এনে হীরার চোখে মুখে পানির ঝাপটা দেয়। হীরা ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায়। এই মেয়ে কোথা থেকে এসে পড়লা আমার দোকানের সামনে। আমার ক্ষুদা লাগছে আমারে কিছু খাইতে দেন! জামিলা তাড়াতাড়ি প্লেটে করে ভাত এনে দেয়। নাও খাও, মনে হয় অনেকক্ষণ নাখাও। খাওয়া শেষ হলে জামিলা জিজ্ঞেস করে, তোমার বাড়ি কই? এইখানে আসলা কেমনে?
হীরা বলে, বাবা নাই! ছোট্ট একটা বোন আছে। মা ছোট বোনটাকে নিয়ে মানুষের বাড়ি কাজে যায়। ঘরে থাকি আমি একা। পাশের বাড়ির মনসুর শুধু চুপি দেয়। ভাঙ্গা বেড়া বাহির থেকে ঘরের সবাই দেখা যায়। মুনসুর আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকায়, যায় তা খারাপ কথা বলে, যখন তখন ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়ে। ঘরে ঢুকে আমাকে ধরতে চাইলো আমি ধাক্কা মেরে দৌড়ে বের হয়ে আসি। দেখি সেও আমার পিছনে পিছনে ছুটছে। ভয়ে আরো জোরে দৌড়াতে লাগলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে লঞ্চঘাটে এসে পড়লাম। লুকানোর জন্য উঠে পড়লাম একটা লঞ্চে। কিছুক্ষণ পর লঞ্চটা ছেড়ে দিলো। চলে এলাম ঢাকায়। চিনি না কিছুই। আপনার এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম!
জামিলা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, সবই তো শুনলাম। হায়রে পুরুষ জাত! বাড়ি গেলে ওই শকুনে চোখে আবার পরবা! আমার কাছেই থাকো তুমি। কোথায় যাবা কার হাতে পড়বা! পরে বিপদে পড়বা। আমি খাইতে পারলে তুমিও খাইতে পারবা। এই যে দেখো আমার হোটেল ব্যবসা এইটা ভালই চলে। যে উপার্জন হয় এতো আমার লাগেনা। কারে খাওয়ামু চার কুলে আমার কেউ নাই। এই আমার ব্যবসা, এইখানেই থাকা, খাওয়া, ঘুমানো। জামিলার সঙ্গে হীরা কাজে লেগে যায়। দু’জনে মিলেমিশে কাজকার্ম করে। ব্যবসায় আয়-উন্নতি বাড়ে। দোকান ভালো চলায় মহাখুশি তারা।
কিছুদিন রোগে ভুগে জমিলার মৃত্যু হয়। একা হয়ে যায় হীরা। ব্যবসার সবকিছু একাই সামলাতে হয় তাকে। মোকাবেলা করতে হয় বাড়তি কিছু ঝামেলা। কিছু লোক খামোখা দোকানে বসে আড্ডা দেয়। একবার বসলে আর ওঠার নাম করে না। কাস্টমাররা বিরক্ত হয়। দীর্ঘ সময় আড্ডায় বসে না থাকতে হীরা তাদের অনুরোধ করে। কিন্তু সে কথায় কর্ণপাত করে না তারা। দোকানের সুখ্যাতির জন্য দূরদূরান্ত থেকে গ্রাহকের আগমন ঘটে। সেই সূত্রে এখানে লিয়ার আগমন। লিয়া খাবার খেয়ে খুব প্রশংসা করে। হীরা বলে, আপনাদের খাবার ভালো লাগে এর চাইতে বড় পাওয়া আর কি আছে! সবই আল্লাহর রহমত। দোয়া করবেন, যাতে আপনাদের এভাবেই খেদমত করতে পারি। কথাপ্রসঙ্গে হীরা জানায় তার সমস্যার কথা। কয়েকজন উটকো লোক এসে অহেতুক আড্ডা দেয় দোকানে।
এনিয়ে তুমি চিন্তা করোনা, লিয়া আশ্বস্ত করে। আমার ভাই লিয়াকৎ। এই এলাকায় সে খুব প্রভাবশালী। তার কাছে বলব। চোখের পলকে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আশ্বাস পেয়ে সন্তুষ্ট হয় হীরা। কৃতজ্ঞ হয়ে বলে, আপনি আমার সমস্যার সমাধান করে দেবেন। আপনার কাছ থেকে কি খাবারের বিল নেওয়া যায়? আজ আপনি আমার অতিথি।
দূর বোকা, এমন করলে ব্যবসা চলবে? বিল রাখো। আর তুমি আমাকে আন্টি বলে ডাকবে।
ঠিক আছে।
লিয়া লিয়াকতকে বলে দোকানে লোকগুলোর আড্ডাবাজি বন্ধ করে দিয়ে হীরার আস্তাভাজন হয়ে যায়। লিয়া প্রায়ই হীরার দোকানে খাবার খাতে আসে। পর্যায়ক্রমে তাদের মাধ্যে একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লিয়াকে খুবই হৃদয়বতী মানুষ মনে হয় তার। হীরা তেমন পড়ালেখা জানে না। ব্যবসার আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় তার পক্ষে সবদিক সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। হিসাবপত্রে নিজের দুর্বলতার জন্য সে খুব চিন্তিত হয়। আন্তরিক সম্পর্কের কারণে লিয়ার সঙ্গে বিষয়গুলি নিয়ে অকপটে আলাপ করে। লিয়া একটি সহজ সমাধান বের করে। লিয়া বলে, এরকম করলে কেমনে হয়, টাকা-পয়সা যা হবে তা আমার কাছে জমা রাখবে। হিসাব নিয়ে তুমি চিন্তা মুক্ত থাকবে। আমি এখন থেকে তোমার ক্যাশিয়ার। আমি তোমার দোকান আরো উন্নত করে দেব। আর আজ থেকে তুমি আমার কাছে থাকবে। হীরা প্রতিদিনের টাকা লিয়ার কাছে জমা রাখে। অনেক টাকা জমা হয় লিয়ার কাছে। লিয়া পুরনো দোকান ভেঙ্গে নতুন দোকান করে দেয়। আগে হোটেল নামে পরিচিত ছিল। সেই নাম চেঞ্জ করে নাম রাখা হয় রূপসী রেস্টুরেন্ট। হীরা পুরাদমে ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তার কথাবার্তা পোশাক-আশাকও অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
তৌহিদ লিয়ার বোনের ছেলে। পড়ালেখার জন্য তৌহিদ আসে খালার বাসায়। খালার বাসা থেকে পড়ালেখা করবে সে। লিয়া বলে, এতে কোন সমস্যা নাই। তুমি আমার বাসা থেকে পড়ালেখা করবে ভালো কথা। হীরাকে দেখে তৌহিদ জিজ্ঞেস করে খালা কে সে। ওর কথা জিজ্ঞেস করছিস? ও আমার কাছে থাকে। ওর রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে। নিজে সব গুছিয়ে উঠতে পারেনা বলে আমি একটু ম্যানেজ করে দেই। টাকা যার কাছে যায় তার কথাই বলে। এটাই টাকার ধর্ম। গচ্ছিত সঞ্চিত বলে কোন কথা নাই। লিয়ার ক্ষেত্রেও তাই ঘটে। হীরার টাকা দিয়ে বাড়ি করে, জমি জমা কেনে লিয়া। বিভিন্ন প্রয়োজনে হীরার টাকা খরচ করে। হীরা কিছুটা আঁচ করতে পারে। জিজ্ঞেস করে, আন্টি আমার কত টাকা হয়েছে? সতর্ক ভাবে উত্তর দেয় লিয়া, তা দিয়ে তুমি কি করবে? যা হবার হয়েছে সময়মতো হিসাব বুঝে পাবে। লিয়া ধমকের স্বরে কথাটা বলে। তোমার টাকা আমার হেফাজতেই আছে। আমি এমন মানুষ না যে তোমার টাকা দিয়ে খাবো পরবো। আমার কি কম আছে। আমার স্বামী মাসে মাসে বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়। আর সে দেশে আসলে আমি এখানে থাকবো না নিজের বাড়িতে উঠে যাব।
আন্টি আপনি আমাকে কি আপনার সঙ্গে নিবেন?
তোমাকে নিয়ে কি করব! তাছাড়া তোমার তো ব্যবসাও আছে। তুমি ওটাই করবে। যাওয়ার সময় আমি তোমার একটা ভালো ব্যবস্থা করে যাব। যাতে তোমার কোনো সমস্যা না হয়।
লিয়ার স্বামী বিদেশ থেকে আসে। লিয়া নিজের বাড়িতে উঠার আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত। হীরাকে বলে তোমার সঙ্গে আমার বোনের ছেলের বিয়ে দিয়ে যাব। হীরা চিন্তিত হয়ে প্রশ্ন করে, তিনি কি আমাকে বিয়ে করবেন। আমার নাই পড়ালেখা আর তিনি তো পড়ালেখা করছেন।
এনিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। লিয়া যাওয়ার আগে একজন হুজুর ডেকে বোনের ছেলের তৌহিদের সঙ্গে হীরার বিয়ে দেয়। লিয়া ভাবে, এখন আর আমার কাছে টাকা পয়সার হিসাব চাইবে না। সম্পর্কে জুড়ে দিয়ে আটকে ফেলেছি। যা করার করে দিয়েছি। রিয়া চলে যায় নিজের বাড়ি। হীরা আর তৌহিদের সংসার চলে। তৌহিদের কোন ইনকাম নেই সে হীরার টাকায় পড়ালেখা চালিয়ে যায়। হীরা খরচ বাদে যে টাকা থাকে তা তার স্বামীর কাছে দেয়।
তৌহিদের পড়ালেখা শেষ হলে চাকরির সন্ধান করে। চাকরির ইচ্ছাপূরণের আগে সরকারি চাকরির বয়স সীমা পার হয়ে যায় তার। একসময় হীরাকে বলে চাকরি পাওয়া হলো না এখন আমি ব্যবসা করতে চাই।
ঠিক আছে ব্যবসা করো। টাকা-পয়সা তো তোমার হাতে আছেই তাই দিয়ে শুরু করো।
ওই টাকায় হবে না। ব্যবসা করতে গেলে আরও টাকার দরকার।
ঠিক আছে তাহলে কিছুদিন অপেক্ষা করো। ব্যবসা জন্য তৌহিদের চাহিদা মতো টাকার জোগাড় করে দেয় হীরা। তৌহিদ ব্যবসা করতে থাকে। কিন্তু তৌহিদ সংসারে কিংবা হীরার জন্য কোন টাকা খরচ করে না। সে যত ভাবে পারে শুধু হীরার কাছ থেকে নিতে থাকে। এক সময় তৌহিদ বাড়ি যাবার আয়োজন করে। হীরা বলে, আমাকে তোমার সঙ্গে বাড়ি নিয়ে যাও। তৌহিদের উত্তর, না তোমাকে এখন বাড়ি নেওয়া যাবে না। যখন সময় হয় তখন আমি নেব। তৌহিদ হীরার টাকায় ব্যবসা বাণিজ্য করে বাড়িঘর, জমিজমা কিনে গুছিয়ে নিতে থাকে। নিজের প্রয়োজনীয় সবকিছু হয়ে গেলে হীরাকে কিছু না বলে একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
হীরা স্বামীকে না পেয়ে অস্থির হয়ে পড়ে। স্বামীকে কোথায় খুঁজবে সে। তৌহিদের এখানকার অথবা বাড়ির কোন ঠিকানাযই তার জানা নেই। সে বুঝে নেয় স্বামী তাকে ফেলে চলে গেছে। তবুও নানা উপায়ে খোঁজ করতে থাকে। হঠাৎ মনে পড়ে বিয়ের কাবিন যে ঠিকানা আছে সেখানে গিয়ে খোঁজ করবে। কাজীর খোঁজ করতে গিয়ে সে হতাশ হয়। বিয়ের ব্যাপারটা সম্পূর্ন ছিল সাজান। যে কাজী বিয়ে পড়িয়েছে সে আসলে কাজীই ছিল না। হীরা ভাবে, যারা এমন প্রতারণা করতে পারে তাদের কথা মনে করে দুঃখ বাড়িয়ে লাভ নেই।
দ্রুত ধাবমান সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পেছন ফিরে দেখার সময় হয়নি তার। অনেকদিন পর মায়ের কথা, আপন জনদের কথা মনে পড়ে। সে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পরিকল্পনা করে মা বোনকে নিজের কাছে নিয়ে আসবে। বাড়ি যাওয়ার পথে গাড়িতে হীরার সঙ্গে এক সুদর্শন যুবকের পরিচয় হয়। যুবকের নাম শুভ। প্রথম দেখায় দু’জনের হৃদয় অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পড়ে। মুখে কেউ কিছু না বললেও দু’জন দু’জনার মনে স্থান করে নেয় নিরবে। অতঃপর ফোনে চলতে থাকে যোগাযোগ। হীরা মা বোনকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। শুভ হীরাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু অপেক্ষা করছিল হীরার জীবনের ধাবমান অনিশ্চয়তা। ধর্ম এসে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারা জানতে পারে দু’জন এক ধর্মাবলম্বী নয়। হীরার মা হোসনারা মেয়েকে বুঝায়। তুই এখন বড় হয়েছিস নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারিস। তাই বলে সমাজ বলে তো একটা কথা আছে। সমাজ তো এটা মেনে নিবে না। এই বিয়ে হবে তোর আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার শামিল। সারা জীবন লোকসমাজে কথা উঠবে। তোর সন্তানদেরও ভুগতে হবে অপবাদ নিয়ে। এমন বিয়ে করার কি দরকার? হীরাও ভেবে দেখে, মায়ের কথা ঠিক। প্রস্ফুটিত ভালোবাসা জলাঞ্জলি দিয়ে যুক্তির কাছে তাকে হার মানতে হয়। হীরা শুভকে বলে আমাদের বিয়ে হবে না। দু’জনে হৃদয় এক হলেও বাস্তব জীবনে এক হওয়া সম্ভব না। মানুষ বিয়ে করে শান্তির জন্য সে শান্তিই যদি আমাদের কাছ থেকে দূরে চলে যায় তাহলে কি দরকার এমন অশান্তি টেনে এনে! শুভ বলে, আমার বিয়ে করতে আপত্তি নেই তোমার যদি না থাকে। যা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে সেই সমস্যার বলি হবার কি দরকার? থেমে যায় দু’জন। হীরা পুরাপুরি মনোনিবেশ করে রেস্টুরেন্টে।
হীরার রেস্টুরেন্টে নিয়মিত আসা যাওয়া করে আশিক। নিয়মিত দেখা হলেও একদিন সে পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকায় হীরার দিকে। হীরাকে সে সরাসরি বলে, আমি তোমার কাছে একটা প্রস্তাব রাখতে চাই।
কি প্রস্তাব?
ভঙ্গিতা না করে বলেই ফেলি, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
আমি বিয়ে এখনক রবো না।
দেখো আমি তোমার সঙ্গে প্রেম করতে ঘুরাফেরা করতে পারতাম। এরকম করতে চাইনা। আমি তোমাকে সরাসরি বিয়ে করতে চাই।
কোন বিষয় বললেই হয়ে যায় না। আমি দেখব বিষয়টি ভেবে। আশিকের প্রতিদিন এই রেস্টুরেন্টে আসা একই কথা বারবার বলা হীরার ভালো লাগছিল না। এক সময় হীরা বলে ঠিক আছে, আমি আপনার বিয়ের প্রস্তাবে রাজি। আপনি আপনার ফ্যামিলিকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ফ্যামিলিকে কি দরকার? বিয়ে করবো তুমি আমি, এখানে ফ্যামিলি টানতে চাই না। আমি যেখানে তোমাকে নিয়ে সংসার করবো সেখানে অন্য কাউকে তো দরকার নাই। হীরা আর আশিকের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়। বিয়ের একদিন আগে একজন আসে হীরার খোঁজে। হীরা সম্মুখীন হতেই জিজ্ঞেস করে আপনি হীরা?
হ্যাঁ।
আপনাকে আমার প্রয়োজন।
আমাকে প্রয়োজন!
আপনি যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন সে আমার স্বামী এমনকি সে আমার সন্তানের বাবা!
কে আপনার স্বামী, কে আপনার সন্তানের বাবা?
আশিক!
আশিক!
হ্যাঁ।
মানুষ এমন হয় কি করে!
আপনি খোঁজ নিবেন না? আমাকেই আসতে হলো খোঁজ করে আপনার কাছে।
মানুষ এত অভিনয় কি করে করতে পারে!
কিছু মানুষ নিজের প্রয়োজনে সব পারে।
ঠিক আছে আপনাকে কথা দিচ্ছি আমি আশিককে বিয়ে করব না।
আপনার কথা থাকবে তো?
কথা না রেখেই উপায় কি বলেন? যেখানে তিন তিনটা মানুষের জীবন জ্বলে-পুড়ে ছারখার হতে হবে!
তার কোন সুখ নষ্ট হবেনা। যখন আমার সঙ্গে কিছু হবে তখন ফিরেবে আপনার কাছে। আর আপনার সঙ্গে কিছু হবে তখন ফিরে আমার কাছে। সুখ যা নষ্ট হওয়ার তা হবে আপনার আর আমার। সে তো থাকবে মহাসুখে। বিচিত্র এই ব্যবস্থা।
আপনি ফিরে যান হবে না এই বিয়ে। চলে যায় নার্গিস। নার্গিস ফিরে যেতেই আশিক এসে হাজির হীরার কাছে। খুব উৎফুল্ল হাসি খুশি। হীরাকে বলে, তোমাকে বউ করে পাবো কি যে আমার ভালো লাগছে। এই আনন্দের কথা তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না! হীরা কোন উত্তর দেয় না। কি ব্যাপার তুমি কোন কথা বলছো না?
আমি এখন বিয়ে করবো না।
বিয়ের দিকে আমার মনের প্রস্তুতির সব হয়ে আছে আর তুমি বলছো বিয়ে করবে না! বারবার আশিক হীরার কাছে আসে। হীরাকে কোনভাবে বিয়েতে রাজী করাতে পারে না। হীরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আশিককে বলে, আমি ডাক্তার দেখিয়েছি। আমার শরীরে বড় ধরনের অসুখ আছে। আমি বাঁচবো কি মরবো জানিনা! আশিক এ কথা শুনে আর হীরার কাছে আসে না।
হীরা গভীর দীর্ঘশ্বাসে হালকা হতে চায়। তার জীবনে প্রতিটা সম্পর্ক হলো সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্পর্ক। তার জীবনের কাছে সেই হলো আপন, সেখানে কেউ হতে পারল না তার আপন। প্রতিটা সম্পর্ক যেন স্বার্থের পাথর দিয়ে বাঁধাই করা। ভালোবাসার কোমল আঘাতে সেই শক্ত পাথর ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। প্রকৃতি মানুষকে কেন এমন কঠিন করে তৈরি করেছে।