Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
জীবন চক্র-সুলেখা আক্তার শান্তা – Pratidin Sangbad

জীবন চক্র-সুলেখা আক্তার শান্তা

ডেস্ক:রুবির উচ্চতা সমবয়সীদের থেকে বেশি এবং শরীর স্বাস্থ্যও ভালো। তার সঙ্গে খেলায় বা কোন কিছুতেই সঙ্গীরা পেরে ওঠে
না। সবার সঙ্গে গলা ছেড়ে বেশ ঝগড়াও করে। গায়ে পড়ে ঝগড়া করা, সব কিছুই নিজের মন মত করায় অন্যরা মনক্ষুন্ন
হয়। রুবির সঙ্গে পেরে উঠতে না পারায় তার সঙ্গে খেলে না কথাও বলে না সঙ্গীরা। রুবি তাতে রাগান্বিত হয়। সবাই
মিলে খেললে বাধা দিয়ে ভন্ডুল করে দেয়, এমনকি তাদের মারধর পর্যন্ত করে। মেয়ের এমন দস্যিপনা দেখে রুবির বাবা-
মা তার বিয়ে দিয়ে দেয়।
স্বামীর বাড়িতে গিয়ে তার স্বভাবে খুব বেশি একটা পরিবর্তন হয় না। সে চায় সংসারের সমস্ত কর্তৃত্ব তার হাতে থাকবে।
রুবির স্বামী শাহীন শান্তি প্রিয় মানুষ। সে বউয়ের এমন কর্তৃত্ব পরায়ণতা মেনে নেয়। কিছুদিন পর রুবির স্বাভাবে
পরিবর্তন আসে। তার উগ্র আচরণ নমনীয় হয়। বছর ঘুরতেই রুবির কল জুড়ে আসে মেয়ে সন্তান। মেয়ের নাম রাখা হয়
এশা। এশা খুব আদর যত্নে বড় হতে থাকে। এশার চাচা আলমগীর ভাতিজিকে খুব ভালোবাসে। আলমগীর দূরের এক
কলেজে পড়ে। বাড়ি থেকে কলেজ যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো না তাই কলেজের পাশে এক বাড়িতে লজিং থাকে। বাড়িতে
মাঝে মাঝে বেড়াতে আসে। বড় ভাই শাহীন ব্যবসা করে, আর্থিক অবস্থা ভালো। ছোট ভাই আলমগীরকে টাকা পয়সা
দিলে সে নেয় না। আলমগীর নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে উপার্জন করে চালায়। এবার বাড়িতে এলে ভাই ভাবির কাছে
নিজের বিয়ের কথা বলে। সে যে বাড়িতে থাকে সে বাড়ির মেয়ে বিলকিসকে সে ভালোবাসে। ভাই ভাবিকে বিলকিসদের
বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে বলে। আলমগীরের কথামতো তারা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়। খোঁজখবর নিতে গিয়ে
জানতে পারে বিলকিসের আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। রুবি বিলকিসের সঙ্গে বিয়েতে অমত করে। কিন্তু আলমগীরের
এককথা সে যদি বিয়ে করে তবে বিলকিসকেই বিয়ে করবে। রুবিকে বোঝাতে থাকে, তোমরা যদি বিয়ে করাও তাহলে
বিলকিসের সঙ্গে করাও না হলে আমি বিয়েই করবো না। শাহীন বলে, তোমার বিয়ে করতে হবে না। তুমি বিয়ে না করেই
থাকো তবুও আমরা ওই মেয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে করাবো না।
আলমগীর বলে, আমি যে বিলকিসকে কথা দিয়েছি ওকে আমি বিয়ে করবো। শাহীন রাগ করে ভাইকে বলে, সব কথা রাখা
যায় না। বিয়ে হওয়া মেয়েকে বিয়ে করতে আসছে! আবার বলে কথা দিয়েছি। এসব কথা আমাকে আর কখনো শুনাতে
আসবানা। আলমগীর ভাইয়ের কঠিন কথা শুনে রাগ করে বাড়ি থেকে চলে যায়। শাহীন বলে, যাক গেছে ফিরে তো তাকে
আসতেই হবে যদি বাবার সম্পত্তি ভোগ করতে চায়। অভিমানে আলমগীর ঠিক করে সে আর দেশে থাকবে না। সে বাহিরে
চলে যায়। যাবার সময় বিলকিসকে কথা দিয়ে যায়, আমি দেশে এসে তোমাকে বিয়ে করব।
শাহীন আর রুবির সংসারে এশার পর আর কোন সন্তান হয় না। এশাকে নিয়ে বাবা-মার খুব আশা ভরসা। শাহীন জমি
কিনবে এমন সময় স্ত্রী রুবি বলে, আমাদের আর তো সন্তান নেই একমাত্র এশাই আমাদের সন্তান। তাই তুমি জমিটা মেয়ের
নামেই কিনো। স্ত্রীর কথা মতো শাহীন মেয়ের নামে জমি কিনে। শাহীনের কাছে খবর আসে তার ভাই আলমগীর বিদেশ
থেকে দেশে এসেছে। ‌এমন কি বিয়েও করেছে! তারা যেই মেয়েকে বিয়ে করাতে অনিচ্ছুক ছিল সেই মেয়েকেই বিয়ে করেছে।
তুই ভাই তোর দিকটাই দেখলি। তুই যাকে কথা দিয়েছিস তার মন ভেঙ্গে না যায় সেইদিকটা খেয়াল রাখলি। আর তোর
আচরণে আমার মন ভাঙলো কিনা সেই দিকে খেয়াল করলি না। আলমগীর বাড়িতে আসে। বউকে সঙ্গে আনে না। দুই
ভাইয়ের মধ্যে কথা হয়, আলমগীরের বউ নিয়ে কোন কথা হয়না। বউকে বাড়িতে আনা হবে কি হবে না এ বিষয়ে কোন
কথা কেউ বলে না। দুই ভাই অভিমান চেপে রাখে। আলমগীর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে থাকে। এক ছেলে সন্তানের
বাবা হওয়ার পরও আলমগীরের বউকে নিয়ে বাড়ি আসা হয় না।
এশার বিয়ে ঠিক হয়। সেই বিয়ে উপলক্ষে বিলকিসের স্বামীর বাড়িতে প্রথম আসা হয়। সেই থেকে তার শ্বশুর বাড়িতে
আসা-যাওয়া। ধীরে ধীরে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে আসে। শাহীন আর রুবির ছেলে সন্তান না থাকায় ভাতিজা শাওনকে খুব
আদর করে। মেয়ে বিয়ে দেওয়ার পর ছোট ভাই বউ ও তাদের সন্তান কাছে থাকায় শূন্যতা পূরণ হয়েছে। বরং তাদের মনে
হচ্ছে সুখ সম্রাজ্যে ভরপুর তাদের সংসার।
শাহীন একমাত্র জামাইকে তাদের কাছে রাখতে চায়। ‌সুমনও তার শ্বশুর শাশুড়ির দাবি ফেলে না।

এশা শ্বশুর বাড়ির প্রতি খুব দায়িত্ববান। তারা কি খেতে পছন্দ করে তাদের জন্য তা রান্না করা, পছন্দ সই জামা কাপড়
দেওয়া, তারা যেন কোন কথায় কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। শ্বশুরবাড়ির লোক এশার ব্যবহারে সন্তুষ্ট।

আলমগীর বিদেশে যাবে। যাওয়ার সময় ভাই ভাবিকে বলে আমি তোমাদের কাছে আমার স্ত্রী সন্তান রেখে গেলাম তোমরা
দেখে রেখো।
রুবি বলে, এ নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। আমরা তো তোমার পর না। আপন মানুষ যদি আপন মানুষের কাছে শান্তি না
পায় পাবে কোথায়?
ভাই ভাবির কাছে স্ত্রীর সন্তান রেখে আলমগীর বিদেশ যায়। স্বামী বাহিরে যেতে না যেতেই বিলকিস তার অন্য রূপ প্রকাশ
করে। তার পিছনের কথা মনে পড়ে যায়। তার পূর্বের বিয়ের কারণে ভাসুর এবং জা তাকে বিয়ে করাতে চাইনি। তার
জীবনটা প্রায় ঢাকা পড়ে গিয়েছিল অনিশ্চয়তার অন্ধকারে। সে প্রতিশোধ নিতে চায়। বিলকিস এশার স্বামী সুমনকে বলে,
তোমার স্ত্রীর নামে যে সম্পত্তি আছে তা তোমার নামে করে নাওনা কেন?
কেন আমি তা আমার নামে করে নেব? আমার নামে থাকা যে কথা আমার স্ত্রী নামেও সেই একিকথা। আর আমার স্ত্রীর
নামে যেই সম্পদ ওটা তো আমি করিনি তার বাবা-মা তাকে দিয়েছে সেটা অংশীদার আমি কেন হবো!
বিলকিস বলে, তোমার নিজের নামে হাওয়াই ঠিক। মেয়ে মানুষের নামে কিসের আবার সম্পত্তি। তুমি পুরুষ তোমার নামে
সম্পত্তি রাখবা। বীরপুরুষের মতো চলবা। সম্পত্তি হচ্ছে মনের জোর। বহুভাবে প্ররোচিত করতে থাকে সুমনকে। যতক্ষণ
না শুনে তার কথা বিলকিস একই কথা বারবার বলতে থাকে।
সুমন লোভে পড়ে যায়। সে স্ত্রীকে প্রস্তাব দেয় তার নামে সম্পত্তি করে দেওয়ার।
এশা বলে, আমার সম্পত্তি তো তোমার। তোমার নামে করে দিলে বাবা-মা কি ভাববে!
তাদের ভাবাভাবির কি আছে? আমাকে ভালবাসলে তো বলতে পারো, স্বামী বলেছে ঠিক আছে স্বামীর কথা শুনি।
বিলকিস জানতে চায়, কি বাবাজি বউকে রাজি করাইতে পারছো?
না চাচিআম্মা শোনে না কথা।
কিভাবে শুনাইতে হবে সেই ব্যবস্থা করো। আমি তো প্রথম ভাবছি তুমি সম্পত্তির লোভে বিয়ে করছো! তার জন্য এমন
একটা মেয়েকে বিয়ে করছো।
এমন মেয়ে?
এই মেয়ে তো বিয়ের আগে অন্য পুরুষের সঙ্গে নষ্টামি করছে। শুনছি পেটে নাকি বাচ্চা আসছিল। এসব কথা জানাবে না।
জানলে কি আর বিয়ে করতা? খোঁজ খবর নিয়ে বিয়ে করা উচিত ছিল তোমার। সন্দেহের তীব্র বিষ ঢুকিয়ে দেয় সুমনের
মনে। একথা শুনে সুমনের মাথা ঠিক থাকে না। সে এশার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে থাকে। এশা জিজ্ঞেস করে, হঠাৎ কি হলো
তোমার? তুমি আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করছ কেন? তোমার সম্পত্তি চাই ঠিক আছে, আমি তোমাকে সম্পত্তি দেব।
না আমি আর তোর সম্পত্তি নিতে চাই না। এমন কলঙ্কি নিয়ে সংসার করব না।
কলঙ্কিনী! এসব কি বলছ তুমি?
সুমন চলে যায় চলে যায় যশোরে। আর আসে না। স্বামী না আসায় এশাও চলে যায় সেখানে স্বামীর খোঁজে। জামাইয়ের
এমন কাণ্ডকর্ম দেখে শাহীন ও রুবি হতবাক হয়ে যায়! তারা জামাইকে শান্ত করতে আসবাবপত্রসহ সংসারিক বহু জিনিস
কিনে দিয়ে আসে।
সুমন এশাকে বলে, তোদের এই গুলিতে কি আমার মন ভরবে? আমার মন ভেঙ্গে গেছে তোর উপর থেকে। ‌আমি তোর
কলঙ্কর কথা জেনে তোকে আর মানতে পারছি না। তোর এই কলঙ্কের কথা আমার বন্ধুবান্ধবরা জেনে গেছে। আমি
তাদের কাছে মুখ দেখাবো কি করে? সুমনের বন্ধুদের কাছে ফোনে ডেকে এনে বিলকিস নানা কথা বলে। সকলে সুমনকে
খোটা দেয় তোর বউ বিয়ের আগে বাচ্চা নষ্ট করেছে। তাকে নিয়ে তুই ঘর সংসার করছিস। সুমন এসব শুনে অতিষ্ট হয়ে
পড়ে। এরমধ্যে এশা কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। সুমন তাকে কোলে নেয় না। এশা স্বাভাবিক করতে চায়। বলে, বাচ্চাকে
কোলে নাও দেখবা মনে প্রশান্তি পাবা। হঠাৎ সুমন বলে, আমি একটা দোকান নিব তোমার নামে। এশা হতবাক হয়ে বলে,
আমার নামে নিতে হবে না তুমি তোমার নামে নাও। সুমন ভালো ব্যবহার করে এশার সঙ্গে। দোকানের কথা বলে সাদা

কাগজে এশার স্বাক্ষর নেয়। কিছুদিন সুমন কোন বকাঝকা কিংবা মারধোর করে না এশাকে। ভিতরে ভিতরে একটা
প্রস্তুতি নিতে থাকে।
কয়েক মাস পর সুমন এশাকে বলে, তুই এই বাড়ি থেকে চলে যা। এশার উত্তর, কেন আমি এই বাড়ি থেকে যাব, এটা
আমার স্বামীর বাড়ি।
তোর স্বামী! কে তোর স্বামী? তুই কবেই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিছিস নিজে থেকে। এশা বাচ্চাকে কোলে থেকে নামিয়ে
বলে, তুমি কি বলছো এসব?
এই যে তোর ডিভোর্সের কাগজ। বলে, এশার মুখের উপর কাগজটা ছুড়ে মারে। হঠাৎ এই কান্ড দেখে এশা হিতাহিত জ্ঞান
শূন্য হয়ে চিৎকার করতে থাকে।
চিৎকারে লোক জড়ো হয়। লোকজন কাগজ দেখে বলে, হ্যাঁ এইতো ডিভোর্সের কাগজ। এশা বাবা-মাকে জানায়। তারা
মেয়ের কাছে ছুটে আসে। ঘটনার জানতে পারে মেয়েকে ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে। এশা সবাইকে প্রকৃত ঘটনা বোঝাতে চেষ্টা
করে। সে ডিভোর্স দেয়নি। তার কাছ থেকে দোকানের কথা বলে মিথ্যা ছলচাতুরি করে সই নেওয়া হয়েছে। কে শুনে কার
কথা। পাড়ায় সালিশ বৈঠক বসে। সালিশ বৈঠকে এশার নামে মিথ্যা কলঙ্কের বোঝা চাপিয়ে দেয় সুমন। এমন স্ত্রীকে নিয়ে
সংসার করা যায় না। ডিভোর্স তো আমি দেইনি সেই আমাকে দিয়েছে, কথাটা প্রতিষ্ঠিত করে সুমন। সালিশ রায় দেয়,
তালাক হয়ে গেছে। এখন কি করার আছে! অসহায় এশা শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনা সংসার। প্রতিশোধের একটি
স্ফুলিঙ্গ বিরাট অগ্নিকাণ্ড হয়ে তছনছ করে ফেলে তার জীবন।