আজ ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ইচ্ছা পূরণ‌‌ >< সুলেখা আক্তার শান্তা

ডেস্ক:

পিতৃমাতৃহীন দুই ভাই বোন রবিউল আর তুলি। অল্প বয়সে বাবা মাকে হারিয়েছে। কোন এক অজানা রোগে প্রথমে বাবা মারা যায় মাসখানেক পরেই মা। ডাক্তার বদ্যি দেখানোরও কোনো সুযোগ হয়নি। অবশ্য অল্পই ছিল সে সামর্থ্য। বাবা মা জীবিত নাই ভাই বোন একে অন্যের অন্তপ্রাণ। ভাইয়ের জন্য বোনের জীবন যায় বোনের জন্য ভাইয়ের। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর দিনান্তে খাবার জোটানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। যেটুকু খাবার জোটাতে পারে দুই ভাইবোন মিলে একসাথে ভাগ করে খায়। গ্রামের এক প্রান্তে তাদের বসতবাড়ি। বাড়িতে কয়েকটা ফল ফলাদি গাছ আছে। সেগুলো বিক্রি করে যতটুকু হয় চাল ডাল কিনে। কিন্তু ফল ফলাদি একেকজন নেয় বিনিময়ে কিছু দিতে চায়না। পরে দেব এটা বলে আর দেয় না। দুই ভাই বোনকে বেশিরভাগ সময় প্রায় উপোস করে কাটাতে হয়। উপোস থাকলেও তারা কাউকে কিছু বুঝতে দেয় না। একদিন রবিউল তুলিকে বলে, আপা তুই পিঠা বানাতে পারিস? ভাইয়ের মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায় তুলি। বলে, ভাই সব কাজেই আমি করতে পারি। তুলি ভাবে তার ভাইটার কতই না জানি পিঠা খাইতে মন চাইছে। তাই বোনের কাছে জানতে চায় পিঠা বানাতে পারে কিনা। এই অভাব অনটনের মধ্যে কি করে ভাইকে পিঠা খাওয়ানো যায় সে কথা মাথায় ঘুরতে থাকে।

বাড়ির উপর এক চাচতো দাদী আছে। তাদের অনেক বড় গিরস্থলী। দুই এক দিন পর পরেই তারা পিঠার আয়োজন করে। বাড়িতে তাদের সবসময় মেহমান লেগেই থাকে। তুলি সময় অসময় দাদীর কাজ করে দেয়। তার বিনিময় তুলি কখনো তার কাছ থেকে কিছু নেয় না। বরং কারও কোন কাজ করে দিতে পারলে সে মনে শান্তি পায়। দাদী আনোয়ারা তুলিকে আদর করে। কিন্তু সেটা শুধু মুখের আদর। খাওন ভোজন দিয়ে না, নিজের কাজের জন্য তুলিকে খুব নাতি নাতি করে। তুলি ও দাদীর ডাকে দৌড়ে যায়। শুধু দাদী হিসাবে ভালবাসে না তাকে সম্মানও করে। আনোয়ারার বাড়িতে অনেক মেহমান এসেছে। তুলিকে বলে, পিঠা বানাব ঢেঁকিতে পিঠার চাউল কুটে এনে দে। তুলি মনের আনন্দ চাউল গুড়ো করে এনে দেয়। মনে তার আশা দাদী নিশ্চয়ই দুই চারটা পিঠা তাকে দেবে। সেই পিঠা ভাইয়ের মুখে  দিয়ে পরম প্রশান্তি লাভ করবে সে। পিঠা বানায় মেহমানরা খায় কিন্তু দাদী তাকে পিঠা দেয় না। এমন করে তিন চার দিন দাদী তাকে দিয়ে ঢেঁকিতে চাউল গুড়া করিয়ে নেয়। তুলিকে পিঠা আর দেয় না। তুলি এতে মনে কষ্ট পায়। একদিন আনোয়ারা তুলিকে বলে, আমাকে দুইটা তাল দে পিঠা বানাবো। তুলি জিদ করে বলে, তাল নিলে টাকা দিতে হবে। নইলে তাল দেওয়া যাবে না।
আনোয়ারা বলে, তোরা এমন স্বার্থপর কেন? এত আদর করি ভালোবাসি মুখের উপর কেমনে টাকা চাইলি? এখন বুঝি তোদের চাচা-চাচি তোদের কেন দেখতে পারে না। চাচা চাচি যখন কিছু বলে তখন এই দাদীরেই লাগে। আর যামু না তোগো লাইগা কিছু বলতে। কেন যামু মানুষের কাছে তোগো লাইগা দুশমন হইতে? মনে শান্তির লাইগা তখন দাদির ঘরে আইসা বসিস। তোদের জন্য তোদের চাচা-চাচিরে আড়িআড়ি করে ধরি। না তোদের জন্য আর কাউকে কিছু বলে শত্রু হব না।
তুলি দাদীকে বলে, তোমার আমাদের জন্য কাউকে কিছু বলতে হবে না।
ঠিক আছে এই কথা মনে রাখিস! তুলি আর কোন কথা বাড়ায় না চুপ হয়ে থাকে।
তুলি কয়েকটা তাল বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে পিঠা বানানোর চাল কিনে আনে। পিঠা বানাইয়া ভাইয়ের সামনে পিঠার পাতিল দিয়ে বলে, নে ভাই তোর পরানটা জুড়াইয়া পিঠা খা। রবিউল ও বোনকে বলে, আপা তুইও খা। তোর আর আমার তো একই কপাল আপা। জুটাইতে পারলে আমরা খাই না জুটাইতে পারলে খাইনা।
ভাই তুই খা আমি চাইয়া দেখি। পরানের শান্তি শুধু নিজে খাইতে আর পড়তে পারলেই সুখ পাওয়া যায় না। অন্যের সুখ দেখলেও সুখে থাকা যায়। আমার ভাইয়ের সুখ দেখে আজ আমি অনেক সুখি।
রবিউল বলে, বোন তুই ছাড়া আমার কে আছে আপন। হ্যাঁ ভাই আমরা দুই ভাই বোনই দুজনের আপন।

বিশিষ্ট কবি ও লেখক-সুলেখা আক্তার শান্তা

 

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ