insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121সাব্বির আর এশা মামাতো ফুফাতো ভাই বোন। এশা সাব্বিরের সহপাঠী। একই স্কুলে পড়ে। স্কুলের কাছেই সাব্বিরের মামাবাড়ি। স্কুলে যাওয়ার পথে মামাতো বোন এশাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে যায়। স্কুলে আসা যাওয়ার সময় রাজ্যের গল্পে মেতে উঠে দু’জন। সাব্বিরের কোন হাসির কথা শুনে এশা উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। সাব্বিরও মজার করে কথা বলে যাতে এশার হাসি পায়। প্রতিদিন এশা অপেক্ষায় থাকে কখন সাব্বির আসবে, একসঙ্গে স্কুলে যাবে তারা। দু’জনের মধ্যে আত্মীয়র বন্ধন থাকলেও সে বন্ধন তাদের কাছে টানেনি। দু’জনার মনের বন্ধন যেন প্রধান হয়ে ওঠে। একজন অপরজনের জন্য অপেক্ষা করা। একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া আসা। দুই কিশোর কিশোরীর অনাবিল অন্তরঙ্গতা কৈশোর জীবনকে মুখরিত করে তোলে। এশাকে অনেক সময় সাব্বির সঙ্গে করে নিয়ে বাড়ি আসে। ভাইঝি এশাকে খুব আদর করেন রাবেয়া। তোরা সারাক্ষণ স্কুল, পড়ালেখা, গল্পে মেতে থাকিস। নাওয়া খাওয়ার কথা তো ভাবতে হবে! ভাত মেখে ভাস্তি আর ছেলেকে খাইয়ে দেয়। এশা বলে, ফুপু আমি কি এখনও ছোট? তোমাকে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিতে হবে! সন্তানেরা সবসময় বাবা-মার কাছে ছোট। এজন্যই সন্তান তাদের ভালবাসার চোখের মনি হয়ে থাকে। ফুপু তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো না? এশার গালে হাত দিয়ে রাবেয়া বলেন, ভালবাসবো না! আমার আদরের তুলতুলি মাকে। ভাত মুখে তুলে দিলে এশা বিষম খায়। ফুপু, মা মনে করছে। আমি বাড়ি না গিয়ে সোজা তোমার বাড়ি চলে এসেছি। তোর মা বুঝে নিবে সাব্বিরের সঙ্গে তুই আমাদের বাড়ি এসেছিস। এখন আর বাড়ি যেতে হবে না কাল স্কুল করে বাড়ি যাস।
রাতে দু’জনে একসঙ্গে পড়ার টেবিলে পড়তে বসে। পড়ার চেয়ে দু’জনে বাদরামিতে সময় পার করে। বাচ্চাদের দুষ্টুমি উপভোগ করেন রাবেয়া। তোরা এরকম করবি না পড়বি!
মা দেখনা এশা কেমন করছে, আমার পড়ায় ডিস্টার্ব করছে।
পড়ায় ডিস্টার্ব করছি আমি না তুই আমায় পড়ায় ডিস্টার্ব করছিস? দেখি কে কার সঙ্গে কথা না বলে পারে থাকতে।
এশা সত্যি সত্যি বলছিস নাকি?
হ্যাঁ সত্যিই বললাম!
না আমি পারবো না তোর সঙ্গে কথা না বলে।
তাহলে ফুপুর কাছে যে বিচার দিলি আমি তোকে ডিস্টার্ব করি!
আরে এটা এমনি বলছি। তুই কি থাকতে পারবি আমার সঙ্গে কথা না বলে আমি কি পারব তোর সঙ্গে কথা না বলে।
আমি পারবো তোর সঙ্গে কথা না বলে।
তুই পারবি সেটা আমি জানি। তুই একটা কাট কোট্টো। নে পড়। পড়া শেষ করে দু’জন ঘুমিয়ে পড়ে। এশা ফুপুর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। সাব্বির সাব্বিরের রুমেই শুয়ে পড়ে। সকালে স্কুলে যায় সাব্বির আর এশা।
স্কুল থেকে ফেরার পথে এশা কপোট গাম্ভীর্য নিয়ে বলে, সাব্বির তোকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত ভাল লাগে না। যতক্ষণ আমি তোর সঙ্গে থাকি ততক্ষণ ভালো থাকি। এর নাম যদি হয় প্রেম তাহলে প্রেম, যদি হয় ভালোবাসা তাহলে ভালোবাসা। আমি তোকে ভালবাসি সাব্বির। দু’জনের স্কুল ব্যাগ কাঁধে। দু’জন দু’জনের দিকে ফিরে সাব্বির উতলা হয়ে এশার হাত ধরে আমিও যে তোকে ভালবাসি। আমি তোকে ছাড়া কখনো থাকতে চাই না, থাকতে পারবোও না। কৈশোর প্রেমের নাগর দোলায় উথাল পাথাল করতে থাকে সাব্বির আর এশার হৃদয়। আদর্শ আর কর্তব্যের কথা মনে হয়। এখন আমাদের জীবন গড়ার সময় এই সময় আমাদের হৃদয়ে এলো ভালোবাসা। জীবন গড়ার মুহূর্তে আমরা কোনো সময় বিচ্ছিন্ন হবো না। দু’জন দু’জনের প্রতি ভালবাসা সম্মান যেন থাকে। এশার কন্ঠে বাঁধা বন্যার মতো আবেগ। বাড়িতে যতক্ষণ থাকি তোর কথাই খুব মনে পড়ে। সাব্বির তোমার ওই মনকাড়া হাসি আমাকে পাগল করে দেয়। সাব্বির বলে, আমার হাসিটা তোমার জন্যই। আচ্ছা বাড়ি যাও কাল দেখা হবে।
এশা বাড়ি আসে। ওয়াহিদা মেয়েকে বলেন, মা তুই বাড়ি ছিলিনা বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। মেয়েকে যখন বিয়ে দেবে তখন থাকবে কিভাবে? পাকনা বুড়ি মেয়ে আমার বলে কি! তোকে বিয়ে দিয়ে ঘর জামাই করে রেখে দেবো।
একদিন এশার পড়ার টেবিল গুছিয়ে দিতে গিয়ে ওহিদার দৃষ্টি পড়ে বইয়ের মলাটে লেখা, আই লাভ ইউ সাব্বির। ওয়াহিদার ভুরু কুঁচকে যায়। এইটুকু পুচকি মেয়ে সবেমাত্র ক্লাস টেনে পড়ে, শুরু করে দিয়েছে প্রেম। সে দৃষ্টি রাখে মেয়ের উপর। মেয়ের জন্য ভালো পাত্রের সন্ধান করতে থাকে। পেয়েও যায়। এশাকে দেখানো হয়। কিন্তু এশা বিয়ে করতে চায় না। সে সাব্বিরকে জানায়। সাব্বির তুমি একটা কিছু করো। সাব্বির কি করবে সবে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ে। সে বলে, ধৈর্য ধরো ছেলেপক্ষ দেখালেই বিয়ে হয়ে যায় না। এশাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। এশার মা ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এগিয়ে নেয় মেয়ের বিয়ের কথা। এশার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। ছেলে অস্ট্রেলিয়ার সিটিজেন। এশা কোন কূলকিনারা করতে না পেরে ফুপুর কাছে চলে যায়। ফুপু তুমি একটা কিছু করো। মা আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আমি এ বিয়ে করতে চাই না। আমি সাব্বিরকে ভালোবাসি। আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না ফুপু। এশার এই অবস্থা দেখে রাবেয়াও ঘাবড়ে যায়! কি করবে বুঝতে পারছ না। সে এশাকে বুঝ দেয়। এশা বুঝ মানতে নারাজ। সে মরিয়া। ফুপু আমাকে মেরে ফেলো। আমি মরে যাই।
রাবেয়া বাস্তবতা বোঝাতে চেষ্টা করে। তুই আর সাব্বির সমবয়সী। এই বয়সে দু’জন সংসার পাতানো সম্ভব? মেয়েদের তাও সম্ভব, সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের বোধহয় সেভাবেই তৈরি করেছেন। এখন বিয়ে দিলে ছেলেটা তো দিশেহারা হয়ে পড়বে। মা, তোর কপাল ভালো। ভালো পাত্র জুটেছে। আগে পিছে চিন্তা না করে বিয়ে কর। দেখিস সুখী হবি। অস্ট্রেলিয়ায় থাকবি। সুন্দর দেশ। চাইনা আমি অস্ট্রেলিয়া, চাইনা কোনো সুখ স্বাচ্ছন্দ। আমি শুধু সাব্বিরকে চাই।
সাব্বির এসে মায়ের পা জড়িয়ে ধরে। মা তুমি ওকে যেতে দিও না। আমাদের দু’জনের বিয়ে দিয়ে দাও। দরকার পরে আমরা না খেয়ে থাকবো তাও আমরা একসাথে থাকব। রাবেয়া আবার বোঝাতে চেষ্টা করে। বাবা এসব আবেগের কথা। ভাব আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। বাস্তবতা বড়ই কঠিন। এশার মা ওয়াহিদা এসে হাজির হয়। সাব্বিরকে বলেন, জীবন সাজাও ভালোবাসা এরকম অনেক আসবে। এতটুকু বয়স তোমার! সংসারের বোঝা বড় ভারী। এ বয়সে এতো বড় বোঝা বইতে পারবা না। না পারবা নিজে খেতে, না পারবা বউকে খাওয়াতে!
রাবেয়া বলেন, এই বয়সে বিয়ে করলে দাঁড়াবে কিভাবে? একটা ছোট মেয়ের জন্য ম্যাচিউর ছেলে আসে, সমাজ এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। অপরদিকে একটা ম্যাচিউর মেয়ে ছোট ছেলেকে বিয়ে করবে এটা অকল্পনীয় ব্যাপার! দুই কিশোর কিশোরীকে বাস্তবতা বোঝাতে অনেক উপমার আশ্রয় নেওয়া হয়। তোমরা দু’জন সমবয়সী। এই বয়সে তোমরা সংসার সাজাইয়া জীবন পাড়ি দিতে পারবানা! ওয়াহিদা বলেন, সাব্বির পড়ালেখা শেষ করুক আমরা ভালো মেয়ে দেখে ওর বিয়ে দেব।
যুক্তি তর্ক এবং বাস্তবতার কাছে অবশেষে সাব্বির ও এশা পরাজিত। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী পত্রের সঙ্গে বিয়ে হয় এশার। কেউ শুনতে পায় না দুটি হৃদয়ের আত্মচিৎকার, কেউ দেখতে পায় না দুটি হৃদয়ের অদৃশ্য রক্তক্ষরণ। ভেঙে চৌচির হয়ে যাওয়া স্বপ্ন সৌধ। সাব্বির আর এশার নীরব চিৎকার মহাকালের স্রোতে হারিয়ে যায়। যদি বহন করার ক্ষমতা না থাকে হে বিধাতা তবে কেন দিয়েছিলে কৈশোর হৃদয়ে প্রেম ভালোবাসা, অনুভব আর অনুভূতি।