insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের চরশোলাকিয়া বনানীর মোড় এলাকার একটি গ্যারেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৯টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে মো. রানা মিয়ার গ্যারেজে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অর্ধ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন।
একমাত্র উপার্জনের অবলম্বন অটোরিকশা পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় অন্তত ৩০টি দরিদ্র পরিবারে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। ঘরে ঘরে পড়েছে কান্নার রোল। ধার-দেনা করে কেনার পর অটোরিকশা চালিয়ে ও ভাড়া দিয়ে কোনরকমে চলতো পরিবারগুলো।
এখন অটোরিকশা পুড়ে যাওয়ায় ধার-দেনা শোধ আর পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের চরশোলাকিয়া বনানীর মোড় এলাকার মো. রানা মিয়ার গ্যারেজে হঠাৎ করেই আগুন লাগে। বিশাল আয়তনের গ্যারেজটিতে তখন কেউ ছিলেন না।
আগুনের ভয়াবহ লেলিহান শিখা দেখে স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা শুরু করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এর আগেই গ্যারেজে থাকা ৩৯টি অটোরিকশাসহ গ্যারেজঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
গ্যারেজ মালিক রানা মিয়া জানান, স্থানীয় আরজু মিয়ার জায়গায় গ্যারেজটি তিনি ভাড়া নিয়ে দুই বছর ধরে চালিয়ে আসছেন। গ্যারেজটিতে তিনি ৬-৭ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়েছেন। গ্যারেজের ক্যাশবাক্সে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার জন্য ৬৬ হাজার টাকা রেখেছিলেন। সেসব টাকাসহ গ্যারেজটি পুড়ে যাওয়ায় তার এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। সূত্র কিশোরগঞ্জ নিউজ
গ্যারেজে আগুনে পুড়ে যাওয়া ৩৯টি অটোরিকশার মধ্যে ৯টি অটোরিকশা স্থানীয় মো. সামছুদ্দিনের। পুড়ে যাওয়া অটোরিকশাগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে বুক চাপড়াচ্ছিলেন তিনি।
জানান, ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি এসব অটোরিকশা কিনে ভাড়া দিয়ে কিস্তি হিসেবে ঋণ শোধ করছিলেন। এছাড়া পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনরকমে দিন কাটাচ্ছিলেন। আগুনে সবগুলো অটোরিকশা পুড়ে যাওয়ায় তিনি এখন সর্বশান্ত। কিভাবে সংসার চলবে আর কিভাবে ঋণের কিস্তি দিবেন, সেটি ভেবে কোন কূল পাচ্ছেন না।
গ্যারেজে থাকা দুটি অটোরিকশা পুড়ে গেছে একই এলাকার মো. দুলাল মিয়ার। ছলছল চোখে পুড়ে যাওয়া অটোরিকশার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। জানালেন, এনজিও থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অটোরিকশা দুটি কিনেছিলেন। একটি অটোরিকশা নিজে চালাতেন, আরেকটি ভাড়া দিতেন।
ঋণ পরিশোধের জন্য সপ্তাহে ৫ হাজার ৭শ’ টাকা কিস্তি দিতে হয় তাকে। তার প্রতিবন্ধী একটি মেয়ে রয়েছে, যার জন্য প্রতিদিন ১৬০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। অটোরিকশা দুটির আয় দিয়ে কিস্তি আর প্রতিবন্ধী মেয়ের ওষুধ কেনার পর যে যৎসামান্য পরিমাণ টাকা থাকতো, তা দিয়ে কোন রকমে টেনে-টুনে সংসার চালাতেন। এখন অটোরিকশা দুটো পুড়ে যাওয়ায়, তার আর অবলম্বন বলতে কিছুই রইলো না।
দুর্ঘটনার কারণে ভেঙ্গে যাওয়া ডান পায়ে রড ঢুকানো মো. হোসেন মিয়ার। মাসিক ১০ হাজার টাকা সুদে এক লাখ টাকা নিয়ে একটি অটোরিকশা কিনেছিলেন তিনি। সংসার চালানোর জন্য ভাঙ্গা পা নিয়েই অটোরিকশা চালাতেন তিনি। এখন তার সেই অটোরিকশাটিই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘স্যার, আমি নিঃস্ব অইয়্যা গেছি। অহন নিজেরা কীতা কইরা বাঁচাম, আর ঋণঅই ক্যামনে দিবাম? এনজিও ঋণ আর ধার-দেনা করে কেনা অটোরিকশা আগুনে পুড়ে যাওয়ায় একই রকম সংকটের কথা জানালেন অটোচালক শফিক, মারুফ, জুয়েল, আল আমিন, হাদিস মিয়া, হেলাল মিয়া, নূর আলম, সুফিয়ান, সিজান, রাসেল, ইসলাম উদ্দিন, শফিকুল, শফিকুল ইসলাম, আব্দুল, রাজু, রনি, খোকন, জাহাঙ্গীর, জামাল, সিরাজ মিয়া ও রানা।
তারা জানান, অটোরিকশার চাকা ঘুরিয়ে তারা ঋণের কিস্তি দিয়ে যা পেতেন তা দিয়ে সংসার চালাতেন। এখন সেই অটোরিকশা পুড়ে যাওয়ার সাথে সাথে তাদের কপালও যেন পুড়ে গেছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সামর্থ্য তাদের নেই।