insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121ভাই দুই সের চাউল দে। পোলা মাইয়া গুলার মুখ শুকাইয়া আছে। চাউল নিয়া রান্না কইরা অগোরে খাইতে দিমু। বুবু আমার অভাব অনটনের সংসার, নিজের সংসার চালাইতে পারি না তোমারে দেখি কই থিকা! তুমি যখন তখন আইসা এইটা ওইটা চাও! লতা খুব হতাশ হয়! ভাই চাউলের কথায় না বলছে। এখন কই যায় কী করি। গ্রামের প্রভাবশালী জোয়াদ্দার রাস্তায় দেখা চুন্নুর বউ লিপির সঙ্গে, জোয়াদ্দার বলে, এই যে কাজ করো এটা তো আমার জমি! আমি যদি কাজ না করতে দেই পারবে এখন কাজ করতে? লিপি, মুখটা ভারী করে দাঁড়াই থাকে। নেও কাজ করো দাঁড়াই থেকো না। জোয়াদ্দার এই সুযোগে চুন্নুর বউ লিপিকে বলে, তোমারে এত কইরা কইলাম কিছু হইল না। কইলাম তোমার বিধবা ননদরে আমার কাছে বিয়ে দাও। সুন্দরী লতার উপর জোয়াদ্দারের চোখ পড়েছে অনেকদিন হলো। লিপি বলে, তা তো পারলাম না রাজি করাইতে। শোনেন আপনার টাকা পয়সা সবই আছে তবে আপনার চরিত্র ভালো না। এইজন্যই তো লিপি আপনার সঙ্গে বিয়ে বসতে রাজি হয় না। ধৈর্য ধরেন। সবুরে মেওয়া ফলে। আর কত ধৈর্য ধরমু। ওর বিয়ের আগে আমি ওরে বিয়ে করতে চাইছিলাম। রাজি হইল না, এখন বিধবা তাও রাজি হয় না। আমি কী ওরে কম ভালোবাসি? ওরে ভালোবাইসা আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেল। তা ওর মন পাইলাম না। ওর জন্য কত জনারে টাকা পয়সা খাওয়াইলাম, কোন কাজ হইলো না। লিপি চট করে বলে ফেলে, আমারে আপনি কী দিছেন? বলছিলেন আমারে দুইটা স্বর্ণের বালা দিবেন, দিছেন? তা তো দেন নাই। আমার আর ওর বিয়েটা হওয়াইয়া দাও তাহলে তোমারে স্বর্ণের বালার সাথে স্বর্ণের হারও দিমু।
লিপির চেহারা উজ্জ্বল হয়ে ওঠ। দেখি তাহলে চেষ্টা কইরা বিয়ের জন্য রাজি করাইতে পারি কিনা। জোয়াদ্দার একটু আড়ালে যাতেই নিচু গলায় বলে, তোর জন্য রাজি করামু খাইয়া আমার কাজ নাই। তুই যেরকম আমারে লোভ দেখাস। আমিও তেমনি তোরে লোভ দেখাই। একটা খারাপ মানুষ কোথাকার। মানুষরে লোভ দেখায়! তোর একটা স্বর্ণের বালার লাইগা আমি লতারে বিয়া দেই তোর কাছে! পরে ওর সন্তান গুলার কী হইব। দায়িত্ব আইসা পড়বো আমার ঘাড়ে। তোর কথা শুইনা আমার মরন আর কী। জানিনা, লোভে পইরা কখন আবার কী কইরা বসি। চুন্নু বাঁশ, বেতের কাজ করে, পৈত্রিক ব্যবসা। কুলা, ধানের ঢাকি এসব বানায়। চুন্নু কাজ করছিল, লিপি বাড়িতে ঢুকে কোন ভূমিকা না করে স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলে, তোমার বোনের বিয়া করতে চায়। আমারে প্রায় প্রায় ধরে। এটা ওইটা দিবে লোভও দেখায়। চুন্নু বিরক্ত নিয়া বলে, কাজ করতে দে জ্বালাইস না তো। আইছে খবর একখান নিয়া। তুমি কী কাজ করো? তাতে সংসার চলে না। এখন নতুন যুগ আইছে এ যুগে তোমার ওই সব কাজ চলে না। কী করমু বাপ দাদারে এসব
কাজেই দেখছি, শিখছিও এইসব কাজ। ঢাকি বানাতে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে টাইট করার জন্য জোরে জোরে শব্দ করছিল। লিপি বিরক্ত হয়ে বলে, আইছি দুইটা কথা বলতে, তোমার হাতুড়ির শব্দে কথা বলতে পারতেছি না। কথা বলিস না এইগুলি অর্ডারের কাজ তাড়াতাড়ি দিতে হইবো। কী একটা দুইটা অর্ডার পাও তাও আবার পরিচিতরা টাকা দেয় না। চুন্নু বলে,আসে আমার কাছে আবদার, অধিকার নিয়া, আমি কাজ করতে পারি তাই দুই একজনে এমনি চাইয়া নেয়। মানুষ আপন জানলে দিতেই হয়। লিপি মুখ বাঁকিয়ে বলে, তোমারে দেয় কয়জনে? তোমারে তো কেউ কিছু দেয় না। তুমি যে কাজ
করো এই যুগে তা চলে না দিনের পরিবর্তন হইছে। থাম তো, মানুষেরটা খাওয়া পড়ার অভ্যাস ভালো না। কাজ করতেছি কানের কাছে আইসা ভেন্যর ভেন্যর করতাছে। চুন্নু হাটে গেছে, বেচা কিনে নিয়ে ব্যস্ত। ক্রেতাদের সঙ্গে মাল নিয়ে কথা বলছে এমন সময় জোয়াদ্দার আসে। তোর জন্য
বড় মায়া হয়। তোর যদি এই বাজারে একটা দোকান থাকতো কত আরাম আয়াসে দিন পাড়ি দিতে পারতি। মানুষও তোরে একটু সম্মানের চোখে দেখতো।
চুন্নু সংকোচ নিয়ে বলে, কী বলতেছেন না বলতেছেন কিছুই বুঝতে পারতাছি না। আমি গরিব মানুষ, এই বাজারে দোকান নিমু কই থিকা? তোরে আমি দোকান দিতে পারি তুই যদি চাস। আমি চাইলেই আপনি আমারে দোকান দিবেন এটা কোন কথা! এটা আমার বিশ্বাস হয় না। তুই একবার আমারে বিশ্বাস কইরা দেখ। চুন্নু সরল মনে বলে, আপনি সত্যি কইতাছেন। তোরে যে আমি দোকান দিমু, তুই কয়জনকে সাক্ষী চাস বল? চুন্নু কোন কথা বলেনা। কী কথা বলিস না কেন? যা কালকে থেকে তুই আমার ওই দোকানে বসিস, ওইটা তোরে দিয়া দিলাম। চুন্নু দোকান পেয়ে খুশি। পর দিন নিজের মালামাল নিয়ে দোকানে এসে বসে। চুন্নু নিজের ঢাকি কুলা ঝাঁপি এগুলি দোকানে রাখে। চুন্নু দোকানে বসে ভাবে সে স্বপ্ন দেখছে না তো। জোয়াদ্দারও কিছু মালামাল এনে দেয় চুন্নুরে। প্রথম দিনেই বেশ ভালো বেচাকেনা হয়। অনেক বাজার নিয়া প্রফুল্ল মনে বাড়ি আসে। লিপি দেখে বলে, এত বাজার! হ বেচা কিনা ভালো হইছে তাই এত বাজার নিয়া আইছি। বাজারে আমার একটা দোকান হইছে। দোকান হইছে মানে! দোকান পাইলা কই?
লিপি আশ্চর্য হয়। চুন্নু সংক্ষেপে উত্তর দেয়। জোয়াদ্দার দিছে। নাও হইছে, সে কিসের জন্য দোকান দিছে সেটা আর বুঝার বাকি নাই। তোমার বোনের সে বিয়ে করতে চায়। দিবা বোনের বিয়া? চুন্নু প্রতিবাদ করে, না। জোয়াদ্দার আমার অসুবিধা দেইখা এমনি দোকান দিছে। আজকাল কেউ কাউরে এমনি কিছু দেয়? উদ্বিগ্ন চুন্নু বলে, তুইতো বড় চিন্তায় ফালায়া দিলি। জোয়াদ্দার আমার সাথে কিছু বললে তারপর সেন কথা। মাস শেষে চুন্নু দোকান ভাড়া দিতে চাইল জোয়াদ্দার দোকান ভাড়া নেয় না। আরে তুই আমার দোকান ভাড়া দিবা কেন? দোকান তো তোরে আমি এমনি দিয়ে
দিচ্ছি। কী মতলবে দোকান দিয়েছে না দিয়েছে এমন কিছুও জানায় না জোয়াদ্দার।
মাস ছয় পর বের হয় জোয়াদ্দারের আসল রূপ। কী চুন্নু তুই আমার টাকা দেস না কেন? আপনাকে তো আমি টাকা দিতে চাই আপনি তো নেন না। নিজের সন্ডা পান্ডাদের সাক্ষী রেখে বলে, তোরা হুনছস আমারে বলে টাকা দিতে চায় আর আমি টাকা নিতে চাই না। সব সন্ডা পান্ডারা একসাথে বলে, আহ কথার ধরন কী টাকা দিতে চাই টাকা নিতে চায় না। জোয়াদ্দার ধমক দিয়ে বলে, আমি তোর কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা পাই। টাকাটা জলদি আমারে দিয়া দে। কন কী আপনে! পাঁচ লক্ষ টাকা! আমি আর আপনার দোকানে বসবো না। যে মাল আমার, এ আমি বাজারের এক জায়গায় বইসা বেচতে পারমু। তুই আমার দোকানে থাকতে পারোস যদি তোর বোনরে বিয়া দেস আমার কাছে। বোনরেও বিয়া দিমু না আমি আপনার দোকানেও বসমু না। চুন্নু মাল নিয়ে বের হয়ে যায়। জোয়াদ্দার দেখে আরো কিছু সময় দরকার, তার পরিকল্পনা এখনো পরিপক্ক হয়নি। সুর নরম করে বলে, তোরে কী আমি পর ভাবি? তোর সঙ্গে একটু মশকরা করলাম। আয় দোকানে বস। না না আপনার দোকানে বসবো না। চুন্নু মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, এই কথার জন্য তুই আমারে পর ভাইবা চইলা যাবি। যাইস না চুন্নু আমারে পর কইরা। জোয়াদ্দার নিজেই মাল এনে দোকানে রাখে। চুন্নু বাড়ি গিয়ে বলে, শালা মতলববাজ আমার সাথে মতলব বাজি খেলা খেলতিছে। লিপি জিজ্ঞেস করে, কী হইছে কারে গালাগালি করো? ওই হালা জোয়াদ্দার আজকে আমার কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। পাঁচ লক্ষ টাকা! আমরা স্বপ্নও দেখি নাই। লিপির কাছে ব্যাপারটা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়। ঠিক হইয়া যাইবো চিন্তা কইরো না। আমি তো চাইছিলাম না ওর দোকানে আর বসি। পরে নিজেই আমারে আবার মাল দিয়া বসাইছে। ওর নতুন কোন মতলব আছে। চুন্নু বলে, ওর মতলব নিয়া ও বইসা থাক।
বাড়িতে কান্নাকাটি। চুন্নুকে পুলিশে নিয়ে গেছে। লিপি কাঁদে স্বামীর জন্য। আমি কইছিলাম না জোয়াদ্দারের মতলব আছে। আমার স্বামীর কী অবস্থা করলো। এখন আমি কী করি। পুলিশের কাছ থিকা ছাড়াইয়া আনা কি সোজা কথা! হাতে নাই একটা টাকা কী দিয়া ছাড়াইয়া আনমু। লতা কাঁদে, আমার ভাইয়েরে একি করলো! লতা দৌড়ে যায় জোয়াদ্দারের কাছে। আপনি আমার ভাইরে পুলিশ দিয়ে ধরাইছেন কেন? তোর ভাই আমার দোকান দখল করছে। এখন নিজের দোকান বলে দাবি করে। আমি কি অরে ছাইরা দিমু! তোর ভাইয়ের এতো লোভ কেন? আপনি লোভ দেখান তাই মানুষের লোভ জাগে। আর আমার ভাই লোভী না। আমার ভাইয়ের নামে যা ইচ্ছা তা বলবেন না। বলুম না! আমার ভাই ভালা মানুষ ছাইরা দেন তারে। জোয়াদ্দার রেগে বলে, তোর ভাইরে আমার পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে বলিস। না হয় আমি তারে ছাড়বো না। তবে লতা তুই পারিস ভাইরে ছাড়াই নিতে। তুই যদি আমারে বিয়া করস। তোরে বিয়া করমু আমি! বুড়া খাটাস কোথাকার! তাইলে দেখি কী কইরা ছাড়াস তোর ভাইরে। লতা ভাইকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। করলে কী হবে হাতে টাকা নাই কিভাবে ছাড়াবে। নিজের পোলাপান ভাইয়ের পোলাপান সব প্রায় না খেয়ে আছে। ভাই জেলখানায় তারও কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না। পুরো পরিবার গভীর সংকটে নিমজ্জিত। অনন্তকাল ধরে নিরুপায় নারীকে বিভিন্ন আঙ্গিকে পাতা ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হয়। দিশেহারা লিপি কোন উপায় না দেখে লতার কাছে মিনতি করে। বোন, তুই জোয়াদ্দারে বিয়া কর। ওর অনেক টাকা পয়সা তুই সুখে থাকবি। না ভাবি, আমি আমার এই এতিম পোলাপান ছাইড়া কাউরে বিয়ে করুম না! চাইয়া দেখ আমার পোলাপানডির অবস্থা। তোরই তো ভাইয়ের সন্তান। লিপি আঁচল পাতে, তোর কাছে ভিক্ষা চাই আমার স্বামীরে। ভাবি আমার সন্তান গুলার কথা ভাবো না। আমি কথা দিলাম তোর সন্তান গুলারে কোনদিন কষ্ট পাইতে দিমু না। নিজের
সন্তানের মতো মায়ের ভালোবাসা দিয়া রাখমু। লতা একবার নিজের সন্তানদের দিকে তাকায় আবার ভাবির দিকে তাকায়। সে মনঃস্থির করতে পারে না। হঠাৎ লিপি জড়িয়ে ধরে লতার পা। তুই জোয়াদ্দারে বিয়ে কইরা আমার স্বামীরে আইনা দে বোন। লতা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা। জোয়াদ্দারে বিয়ে করতে রাজি হয়। লিপি দৌড়ে যায় জোয়াদ্দারের কাছে। লতা আপনারে বিয়ে করবো এবার আমার স্বামীরে ছাইড়া দেন। প্রসন্ন চিত্তে জোয়াদ্দার বলে, লতা আমার বাড়ির বউ হইয়া আসবে একদিক দিয়া, তোমার স্বামী ছাড়া পাইব আরেকদিক দিয়া, সঙ্গে ওই দোকানও পাইব। তারপর সন্তানদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। নিষ্ঠুর পৃথিবীর নিষ্ঠুর রীতিতে গর্ভধারিনী মাকে করে ফেলা হয় অচিন দেশের মানুষ। লতা বউ সাজছে, ছেলেমেয়ে দুই দিক দিয়া জিজ্ঞাস করে, মা তুমি এইভাবে সাজছো কেন? লতা দুই সন্তানকে বুকে নিয়ে কান্না করে। লতার ছেলেমেয়েরে রাইখা লতারে নিয়ে যায়। এদিকে লতার ভাই বাড়ি আসে। লতার ছেলেমেয়ে দৌড় পারতে পারতে যায়, ও মা আমাগো রাইখা তুমি কোথাও যাইওনা। মা তুমি যাইও না। দৌড়ে দুইজনে রাস্তায় পড়ে যায়। মা, মা করে চিৎকার করতে থাকে। ওদিকে মায়েরও বুক ফেটে যাচ্ছে। এমন দেখে অনেকের চোখের অশ্রু ঝরে। সন্তানের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। নিষ্ঠুর পৃথিবী নিষ্ঠুর মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা। নিষ্ঠুর মানুষ কেড়ে নিয়ে যায় সভ্য শান্ত মানুষের সুখ শান্তি।