insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
বেশ কিছুদিন ধরে খুব গরম পরছে। গরমে মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা। রৌদ্র তাপে খা খা করছে চারদিক। এমন
রৌদ্র তাপে বৃদ্ধ জাফর উদ্দিন জমিতে কাজ করছেন। তা দেখে পথযাত্রী মিলন বলে, কী মুরুব্বী এই বয়সে কাজ করছেন?
তাও আবার প্রচন্ড রৌদ্রের মধ্যে। বৃদ্ধ জাফর উদ্দিন হাসে। আশ্চর্য হয়ে পথচারী আবার জিজ্ঞেস করে, চাচা হাসলেন যে?
তার হাসি থামে না। পাশেই গাছের নিচে জাফর উদ্দিন একটু জিরাতে বসলো। চাচাকে দেখে মনে হচ্ছে মহা আনন্দে
আছেন। তখন জাফর উদ্দিন বলেন, বাবা সবকিছু মানিয়ে নিতে হয়। রৌদ্র আর গরম হলেও কাজ কি ফেলে রাখা যায়।
পথচারীর জিজ্ঞাসা, চাচা আপনার সন্তানাদি নাই যারা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আছে বাবা। তারা কি আপনার
দেখাশোনা করে না? করে, করতে চাইলেই সবার পক্ষে তো সবকিছু করা সম্ভব না। কেন চাচা?
আমার দুই মেয়ে। মিল করে নাম রাখছিলাম রুমা আর ঝুমা। দুই মেয়েই এখন সন্তানদের নিয়ে আমার বাড়িতে থাকে।
জামাইয়েরা কী করে, দেখে না।
জামাইয়েরা থাকলে তো দেখবে? আমার হইছে পোড়া কপাল। পোড়া কপালে কি সুখ সয়? আল্লায় চাইছে আমি এইভাবে
চলি। আমার জীবন এভাবেই চলবে। তাই আমি কী করে আমার ভাগ্য খন্ডাবো! বৃদ্ধ খুব বড় এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম খুব ভালো অবস্থা দেখে। জামাইও খুব ভালো। আমার মেয়ের কোন কিছু অপূর্ণ রাখে নাই।
কোন জ্বালা যন্ত্রণা কোনদিন দেয়নাই। আমার ছোট মেয়ে ঝুমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলাম ভালো ঘর দেখে। খুব দায়িত্ববান
মানুষ ছিল ছোট জামাই। এত দায়িত্ববান জামাইদের দায়িত্ব অবহেলার কারণ কী। সুখ সবার কপালে সয়না। আমার
কপালেও সুখ সয় নাই। হঠাৎ একদিন বিনা মেঘে বজ্রপাত। বড় জামাই লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরলো। রোড এক্সিডেন্টে, ঐ
জায়গাতেই শেষ হয়ে যায় সবকিছু। বড় জামাইয়ের মৃত্যু শোক কাটতে না কাটতে আর এক ধাক্কা, নিয়তির নিষ্ঠুর
পরিহাস। হঠাৎ হার্ট এটাকে ছোট জামাই মৃত্যুবরণ করল! দুই জামাইয়ের অকাল মৃত্যুতে তালগোল পাকিয়ে গেল আমার
জীবনটাও। আমার কোন ছেলে সন্তান নাই। দুই মেয়ে আর তাদের ঘরে দুই নাতি নাতনি নিয়ে আমার সংসার।
চাচা তাহলে তো আপনি বড় সংকটের জীবন পার করছেন।
দুঃখের কপাল দুঃখের লগে মিলে যায়। আমার এই পৃথিবীতে কোন কূলে কেউ নেই। মিলনও প্রকাশ করে তার জীবনের
কিছু দুঃখের কথা। পথচারী মিলনের দুঃখের কাহিনী শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে জাফর উদ্দিন। জাফর উদ্দিন
সহমর্মিতা দেখিয়ে বলেন, চিন্তা করো না বাবা যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে। ওই যে বাড়িটা দেখছো ওইটা আমার
বাড়ি। তুমি আইসো আমার বাড়িতে। তবে বাবা মায়া বাড়াতে চাই না কারণ মায়া বড় খারাপ জিনিস। আর এইটাও বলি
মায়াই তো মানুষকে কাছে টানে। মায়া না থাকলে মানুষ মানুষের আন্তরিকতা থাকতো?
মিলন একদিন জাফর উদ্দিনের বাড়ি যায়। গিয়ে দেখে জাফর উদ্দিন বাড়িতে নাই। মিলন সাথে বেশ কিছু বাজার ঘাট
নিয়ে আসে। বাড়িতে একমাত্র জাফর উদ্দিন ছাড়া অন্য কেউ তাকে চেনে না। দুই মেয়েকে দেখে মিলন বুঝতে পারে এরাই
জাফর উদ্দিনের দুই মেয়ে। সে বিস্তারিত খুলে বলে। রুমা আর ঝুমার তাকে বসতে দেয়। ঠিক আছে আপনি বসেন বাবার
আসার সময় হয়েছে। জাফর উদ্দিন বাড়িতে ঢুকে মিলনকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়। বাবাজী তুমি এসেছো? বড়ই খুশি হয়েছি।
বাড়িতে ভালো-মন্দ রান্নার আয়োজন হয়। জাফর উদ্দিন মিলনকে এক বেলা না খাইয়ে ছাড়বেন না। অনেক সময়
অনাত্মীয়কে পরমাত্মীয় মনে হয়। বাবা মনটা অনেক প্রশান্তি পেল। তুমি আইসো যখন তোমার মন চায়। ঠিক আছে আমি
আসবো। আপনাদের সঙ্গে চেনা জানা নাই তারপরও মনে হয় বহুদিনের চেনা জানা। মিলন যেতে যেতে ভাবে, কেন এই
জাফর উদ্দিনকে তার আপন মনে হয়। মন চায় আবার সেখানে ছুটে যাই। পিতৃতুল্য কারো স্নেহ বঞ্চিত মিলন প্রায়ই
জাফর উদ্দিনের বাড়িতে যায়। যাবার সময় তার সাধ্যমত এটা সেটা নিয়ে যায়। বিষয়টা চোখে পড়ে জাফর উদ্দিনের
ভাইয়ের ছেলে মোকলেসের। সে মিলনকে বলে, এই মিয়া তুমি এই বাড়ি আসো কেন? রুমা কাছেই ছিল কথাটা সে শুনতে
পায়। উনি আমাদের মেহমান উনার সঙ্গে এইভাবে কথা বলছেন কেন? এ লোক আবার মেহমান হলো কিভাবে? কোথা
থেকে কোন লোক এসে বাড়ি উঠলো আর মেহমান হয়ে গেল! আমরা কি আত্মীয়-স্বজন চিনি না! বাহিরের কোন পর পুরুষ
বাজার ঘাট নিয়ে আসে, আর অমনি বসে সেই বাজার খাও। রুমা ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলে, রাখেন বাজে কথা। মানুষের কাছে
মানুষ আসে অমানুষের কাছে কখনো মানুষ আসে না। ওই লোকের খাবার দাবার খাইয়া খুব শক্তি হইছে দেখি। উত্তপ্ত
পরিস্থিতিতে মিলন অপমানিত বোধ করে চলে যায়।
জাফর উদ্দিন এখন আর কাজ কর্ম করতে পারেনা। ভীষণ অসুস্থ। বিছানায় শয্যাশায়ী। রুমা ঝুমা জায়গা জমি বিক্রি
করে বাবার চিকিৎসা করাতে চায়। জাফর উদ্দিন বলেন, নারে মা তোরা ওই কাজ করিস না। আমার বয়স হইছে,
চিকিৎসা করালেও মৃত্যু হবে না করালেও সেই মৃত্যু। মৃত্যু পথযাত্রীর জন্য জায়গা সম্পদ খোয়ানো ঠিক হবে না। ওগুলা
বেঁচে থাকার শক্তি। তোদের কাজে লাগবে। না বাবা, তোমার চিকিৎসা করার পর মৃত্যু হলে তাও মনকে বুঝ দিতে পারব
বাবার চিকিৎসা করাইতে পারছি। জায়গা জমি বিক্রি করতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মোকলেস। সে জায়গা বিক্রি করতে
দিবে না। ঝুমা বলে, জায়গা হলো আমার বাবার আপনি সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়ান কেন? এসব সম্পত্তি এজমালি কারো
একার বিক্রি করার অধিকার নাই। আপনার এমন করার মানে কী? কী চান আপনে? মোকলেস নিচু স্বরে বলে, কী চাই
বুঝস না। আমি তোরে বিয়ে করতে চাই। আমার কথা শুনলে সুখে থাকতে পারবি। আপনার মতো মানুষকে বিয়ে না করে
একা থাকা অনেক ভালো। কেন আমাকে মানুষ বলে মনে হয় না। আমি হচ্ছি গণমান্য ব্যক্তি। নিজের ঢোল নিজে পিটাইলে
কি হয়? রুমা ডাকে ঝুমাকে ওর সাথে কী কথা বলিস। শোন তোরা, আমি তোদের দুজনকেই বিয়ে করতে চাই। দুই বউ
থাকা তো অন্যায় কিছু না। দেখছিস অমানুষের কথা! এরপর না জানি ও কোন কথা বলে বসে। মোকলেস জোর গলায়
বলে ওঠে, হ্যাঁ আমারে তো ভালো লাগবে না। বাহিরে থেকে আসা পুরুষ মানুষকেই তো ভালো লাগবে।
জাফর উদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। দুই বোনের বাবা বেঁচে ছিল তাও মাথার উপর একটা ছায়া ছিল। এখন তারা অসহায়
অবস্থায় পড়ে। মোকলেছ দুই বোনকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে উঠে পড়ে লাগে। একদিন সরাসরি উচ্ছেদ করতে চায়।
তোরা বাড়ি থেকে বের হ। রুমা ঝুমা প্রচন্ড প্রতিবাদে বলে, আমার বাবা সম্পদ আমরা এখান থেকে কেন বের হব?
মোখলেস যখন প্রচলিত একটা কথা বলে ওদের ঘায়েল করতে চেষ্টা করে। তোর বাপের ছেলে নাই তার সম্পত্তির ভার
আইসা পরে আমার উপর। মোকলেসের নানা কথার কৌশলের কাছে রুমা ঝুমা পেরে ওঠে না। নানা ভাবে তাদের উত্যক্ত
করতে থাকে। গোসল করতে গেলে উঁকি ঝুঁকি মারে। অতিষ্ঠ হয়ে রুমা এক বুদ্ধি খাটাইয়া। গোসলখানার ফাঁকে
তারকাঁটার ফাঁদ পেতে রাখে। মোকলেস উঁকি ঝুঁকি মারার চেষ্টা করতেই সেটা ছুটে তার চোখে লাগে। মোকলেস চিৎকার
করে ওঠে, ওরে মারে আমার চোখ নষ্ট কইরা দিছে। মোকলেছ গ্রামের সালিশ দারদের কাছে গিয়ে চোখ দেখায়। আমারে
ডাইকা নিয়ে চোখে গুতা দিছে, আমি সালিশে এর বিচার চাই। মোকলেস মোটা টাকা খরচ করে সালিশ বসায়। রুমা ঝুমা
সালিশে বসতে চায় না। তাদের প্রায় জোর করে নিয়ে সালিশে বসানো হয়। সালিশ রায় দেয় রুমা আর ঝুমার চুল কেটে
দেওয়া হবে। আর না হয় দুই বোনকে একসঙ্গে মোকলেসকে বিয়ে করতে হবে। রুমা ঝুমা বলে এমন সালিশ আমরা মানি
না। তোদের মানা না মানায় কী আসে যায়। সালিশদারেরা যা বলছে তাই মেনে নিতে হবে। আর নয়তো এর বিপরীতে
আরো কিছু ঘটে যাবে।
সে সময় মিলন উপস্থিত হয়ে বলে, এটা কোন সালিশ হলো না। দেশে আইন নাই। দরকার হলে তারা আইনের আশ্রয়
নিবে। যারা এই সালিশি করছে তাদের নামেও মামলা দেওয়া হবে। তখন সালিশ দারেরা ভয় পায়। একজন আরেকজনকে
বলে, আমরা কি মোকলেসের জন্য ফাইসা যাব নাকি! মামলার ভয়ে এরপর সালিশদারেরা মোখলেসের পক্ষে কোন শব্দ
করে না।
মিলন রুমাকে বলে, তোমার যদি আপত্তি না থাকে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। রুমা বলে, আমি হইছি বিবাহিত
মেয়ে, সন্তানের মা! তাকে আপনি বিয়ে করবেন? আমি তো সব জেনেশুনেই তোমাকে বিয়ে করতে চাই। ঝুমা বলে, আপা
তুই আপত্তি করিস না। রুমা বিয়ে করে মিলনকে। এরপর সুখে দুঃখে সমঝোতার জীবন কাটাতে থাকে। সংসারের শান্তি
অশান্তির মাঝে খুঁজে পায় জীবনের সার্থকতা।