Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
করিমগঞ্জে চলাচলের রাস্তা নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত – Pratidin Sangbad

করিমগঞ্জে চলাচলের রাস্তা নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: চলাচলের রাস্তা নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে উপজেলার গুণধর ইউনিয়নের চুল্লী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর আগে চুল্লী গ্রামের দোকান-পাট ও বাড়িঘরে লুটপাট চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় অন্তত দশটি বাড়ি। ঘরে ঢুকে নারী ও শিশুদেরকেও কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে।
আহতদের মধ্যে শঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন পাঁচজন। তাদেরকে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চুল্লী গ্রামের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার উদ্দেশে পাশের গ্রাম ইন্দার শতাধিক লোক জড়ো হওয়ার পর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে অভিযোগ করেছেন চুল্লী গ্রামের বাসিন্দারা। সংঘর্ষের আগের রাতে ইন্দা গ্রামে মাইকিং করে সংঘর্ষে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ তাদের।
গুণধর ইউনিয়নের ইন্দা, চুল্লী ও কন্ডবখালি এই তিন গ্রামের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর অবস্থান চুল্লী মৌজায় থাকলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে এতে পড়ালেখা করে আসছে তিন গ্রামের শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি চুল্লী গ্রামের চলাচলের রাস্তাসহ স্কুলের সীমানা দেওয়াল তোলার সিদ্ধান্তের পর ইন্দা ও চুল্লী গ্রামের বিবাদ শুরু হয়। স্কুলের সামনে দিয়ে গ্রামে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চলাচলের পথ রেখে দেওয়াল তোলার দাবি জানান চুল্লী গ্রামের লোকেরা। কিন্তু রাস্তা না রেখে স্কুলের দেওয়াল তোলার জন্য কয়েকদফা চেষ্টা চালান ইন্দা গ্রামের কয়েকজন। বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পর্যন্ত গড়ানোর পর সিদ্ধান্ত হয় রাস্তা রেখে দেওয়াল নির্মাণ করা হবে। তবে রবিবার রাতে ইন্দা গ্রাম থেকে লোক জড়ো করার জন্য মাইকিং করা হলে চুল্লী গ্রামে উত্তেজনা দেখা দেয়।
সোমবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে স্কুলের সামনে ইন্দা গ্রামের কয়েকশ লোক জড়ো হয়। দেয়াল নির্মাণে বাধা দিলে মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ইন্দা গ্রামের কিছু সন্ত্রাসী চুল্লী গ্রামবাসীর ওপর আক্রমণ করে বলে অভিযোগ করেন চুল্লী গ্রামের লোকজন। গ্রামের বাসিন্দা দুলাল হোসাইন বলেন, ‘ইন্দা গ্রামের লোকেরা সকালে এসে আমাদের চলাচলের রাস্তা না রেখে পাশের ঈদগাহ’র দেয়াল ঘেঁষে দেয়াল নির্মাণের জন্য মাটি খোঁড়া শুরু করে। আমরা প্রতিবাদ জানালে তারা দা-বল্লম, লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। বাড়িঘর ভাঙচুর করে।
চুল্লীর বাসিন্দা সাহেদ আলী (৭৮) বলেন, ‘ইউপি চেয়ারম্যানের সালিশে স্কুলের জায়গা থেকে সাড়ে চারফুট রাস্তা রেখে দেওয়াল নির্মাণ করার কথা থাকলেও ইন্দার কয়েকজন চলাচলের রাস্তা না রেখেই দেয়াল নির্মাণ শুরু করে দেয়। আমরা এতে আপত্তি জানালে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। কন্ডবখালি গ্রাম ও পাশের নিকলী উপজেলা থেকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকও এ হামলায় অংশ নেন।’
প্রধান শিক্ষকের ভাড়া করা সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্রের গুলি ফুটিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সাহেদ আলী জানান, দুইশবছর ধরে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছেন তারা। স্কুল হয়েছে আরো অনেক পরে।
চুল্লী গ্রামের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম শাহজাহান বলেন, ‘এই গ্রাম থেকে বাইরে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তা এটিই। গ্রামের ফসল-ফলাদি এ রাস্তা দিয়ে বাড়িতে আনা হয়। তাছাড়া স্কুলটি আমাদের মৌজায়। আমাদের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে ইন্দার মানুষের কী লাভ? রাস্তা বন্ধ করে দিলে আমাদের বের হওয়ার উপায় নেই।’
সংঘর্ষে ইটের আঘাতে আহত চুল্লী গ্রামের গুলনাহার বলেন, ‘আমাদের ঘর-বাড়িতে এসেও হামলা চালিয়েছে ইন্দার সন্ত্রাসীরা। হামলা বন্ধ করার জন্য তাদেরকে অনুরোধ করতে আমি ঘর থেকে বের হয়েছিলাম। কিন্তু ইন্দা গ্রামের মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাদের ঘর-বাড়িতে প্রবেশ করে তাÐব চালায়। আমাদের বাড়ির এক কিশোরী মেয়ের ওপরও আক্রমণ করে তারা।’
চুল্লী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমার বাড়ি ভাঙচুর করে সন্ত্রাসীরা। এছাড়া আশপাশের অন্তত দশটি বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
চুল্লীর আরেক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের সহায়তায় আগের রাতেই স্কুলের ভেতর দেশিয় অস্ত্র রেখে দিয়েছিলো তার আত্মীয়রা। এরা পাশের কন্ডপখালি গ্রাম ও নিকলী উপজেলার নানশ্রী গ্রাম থেকে এসেছে।’
প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম শাহজাহানের অভিযোগ, এর আগে তিনি স্কুলের পানির মোটর তুলে বিক্রি করে দেন। বিক্রির পর থানায় জিডি করে বিষয়টিকে বৈধ করার চেষ্টা করেন। এছাড়াও স্কুলের একটি ঘর ভাড়া দিয়ে মাসে মাসে টাকা নেওয়া ও বাবাকে জীবিত রেখে দাতা সদস্য হিসেবে সন্তানকে দিয়ে কমিটি গঠন করেন প্রধান শিক্ষক। এই সংঘর্ষের পেছনে তার ভ’মিকাই আসল বলে শাহজাহানের অভিযোগ।
প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কন্ডপখালি তো আমার বাড়ি। আমি যেহেতু এই স্কুলে চাকরি করি, আমার আত্মীয়-স্বজন আসবেই। নিকলী উপজেলার নানশ্রী আমার পাশের গ্রাম। ওখানেও আমার আত্মীয় রয়েছে। আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে শুনে ওরা এসেছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে ইন্দা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মুজিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চুল্লীর লোকেরা স্কুলের মাঠ দখল করে মাঠের ওপর দিয়ে রাস্তা নিতে চায়। সাড়ে চারফুট রাস্তা রেখে দেয়াল নির্মাণের ব্যাপারে চেয়ারম্যান আমাদেরকে ফাইনাল সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরও চুল্লীর লোকেরা সেটা মানতে চায়নি।’
তার নেতৃত্বে ইন্দা গ্রামের লোকেরা হামলা করেছে, এমন অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মুজিবুর বলেন, ‘এগুলো সব ভুয়া কথা। আমরা মীমাংসা করতে গিয়েছি। বরং ওরাই আক্রমণ করে আমাদের গ্রামের বারো থেকে পনেরজনকে জখম করেছে।’
তার গ্রামের আব্দুল হাই ও বিল্লাল আহত হয়ে নিউরো সাইন্স ও পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া গ্রামটিতে আরো বারো থেকে পনেরজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা রাস্তার জন্য স্কুলের জায়গা থেকে সাড়ে চারফুট জায়গা রেখে কাজ করতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু চুল্লীর লোকেরা এটা না মেনে আমাদের ওপর আক্রমণ করেছে।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, চলাচলের রাস্তার জায়গা না রেখেই স্কুলের দেওয়াল নির্মাণের জন্য মাটি খোঁড়া হয়।
অন্যদিকে চুল্লী গ্রামে দা, চাইনিজ কোরাল ও হকিস্টিকের আঘাতে আহত অয়েছেন অন্তত চল্লিশজন। এদের মধ্যে খুরশিদ উদ্দিনের অবস্থা শঙ্কাজনক। তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ইকরাম, খুরশিদুর রহমান, মিরাজ, রাজন ও দ্বিন ইসলামকে শঙ্কাজনক অবস্থায় কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়।
গুণধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়েম রাসেল ভ’ঁঞা বলেন, ‘যে রাস্তাটি নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে, এটি গ্রামের চলাচলের জন্য খুবি গুরুত্বপূর্ণ। এলাকার গণ্যমান্যদেরকে নিয়ে চুল্লী গ্রামবাসীর জন্য রাস্তা রেখেই মীমাংসা করে দিয়ে এসেছিলাম আমি। তারপরও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, এটি দুঃখজনক।’
সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর শুনেই পুলিশ নিয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। দুই পক্ষেরই বেশকিছু লোক আহত হয়েছে। আমরা যাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঘটনাস্থলে এখনো পুলিশ রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো পক্ষ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।