insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121আলিমুদ্দিনের স্ত্রী রেবেকা চুপচাপ প্রকৃতির মানুষ। ছেলে ফাহিম আর মেয়ে ইতিকে নিয়ে তাদের ছোট সংসার। বাসার
সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত থাকে। কাউকে কোন কাজের কথা বলতে বা মনে করাতে হয় না। ফাহিম স্বভাবে একটু
ব্যতিক্রমী। বাবা মা ফাহিমকে কোন অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতে চাইলে সে যেতে চায় না। এক যেতে চায় মামা বাড়ি। অন্য
কোথাও যাওয়ার চেয়ে মামাবাড়ি যাওয়া তার পছন্দের বিষয়। সেখানে যেতে বারণ করলে সে কথা শোনে না। ছোটবেলা
থেকেই সেটা তার প্রিয় জায়গা। নিজে থেকেই মাকে তাড়া দিতো মামা বাড়ি যাওয়ার জন্য। মামা বাড়ি মানিকগঞ্জ শহরে।
স্কুলে পড়ার সময় বন্ধের দিন ফাহিম ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জে চলে যেত। এখন পর্যন্ত সেই ধারা বজায় আছে। বাবা
ফাইমকে বলে, আসছে শুক্রবার কোথায়ও যেও না। এক বিয়ের অনুষ্ঠান আছে সেখানে সবাইকে যেতে হবে। বাবা তোমরা
যাও আমি মানিকগঞ্জ যাব। শুক্রবার সে মানিকগঞ্জে চলে যায়। আলিমুদ্দিনের স্বগতোক্তি, ছেলে আমার এমন হইছে মামা
বাড়ি তার যেতেই হবে। না গেলে হবে না। মামার বাড়ির রহস্য উন্মোচনে সে কখনো আগ্রহী হয়নি।
আলিমুদ্দিন ছেলে মেয়ের বিয়ে নিয়ে ভাবেন। ইতিমধ্যে মেয়ে বিয়ের প্রস্তাব আসে। ভালো বর, ভালো ঘর। আলিমুদ্দিন
মেয়ে ইতির বিয়ের প্রস্তাবে সম্মত হন। মনস্থির করেন মেয়ের বিয়ের পর ছেলের বিয়ে দেবেন। বিয়ের আয়োজন চলতে
থাকে। দাওয়াত করা বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আলিমুদ্দিন কাজটা নিজের হাতে রেখেছেন। আত্মীয় স্বজন, কাছের
দূরের আমন্ত্রিতদের তালিকা তৈরি করেন। তালিকা তৈরির সময় এক কান্ড করে বসেন তিনি। আমন্ত্রণের তালিকায় স্থান
পায় আলিমুদ্দিনের যৌবনকালের প্রেমিকা রুকসোনা। তিনি ইচ্ছা করেই কাজটা করেন। রুকসোনাকে দেখা এবং
দেখানোর একটা উপলক্ষ খুঁজছিলেন। কন্যার বিয়েতে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চান তিনি।
রুকসোনা ঝনঝাট বিহীন মানুষ। কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। আমন্ত্রণ পত্র পেয়ে প্রথমে কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন।
পরে বিয়েতে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। বিয়েতে উপস্থিত হয়ে মহিলা সুলভ ঈর্ষায় বেসামাল হয়ে পড়েন। উৎসাহী শ্রোতার
অভাব হয় না চারপাশে। কথা বলতে থাকেন ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে। এই ঘর সংসার হয়তো আমার হতো কিন্তু ভাগ্যে
হয়নি! কেউ জিজ্ঞেস করে কেন হয়নি, প্রেম করেছি পাঁচ বছর কিন্তু বিয়ের কপালে লেখা ছিল না। আলিমুদ্দিন আমাকে
ভালোবাসতো আমিও তাকে ভালবাসতাম। আমি কালো বলে ওর মা আমাকে বিয়ে করতে দেয় নাই। একবার সিদ্ধান্ত
নিয়েছিলাম দুইজনে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো। আলিমুদ্দিন একা বিয়ে করতে সাহস পায়নি। তাই আজ আমাকে অন্যের
ঘর করতে হচ্ছে। অন্যের ঘর করলে কী হবে মনটা পড়ে থাকে আলিমুদ্দিনের জন্য! এসব কথা এক কান দুই কান করে সব
কানে ছড়িয়ে পড়ে। রসালো কথা বিভিন্ন জনের কাছে পৌঁছাতে দেরি হয় না। বিয়ে বাড়িতে এ কথা নিয়ে কানাঘুষা চলতে
থাকে। আলিমুদ্দিনের প্রেমিকা এসেছে বিয়েতে। সবাই ভিড় জমিয়ে রুকসোনাকে দেখে। রুকসোনার দুঃখ উপচে পড়তে
থাকে। মুখ দিয়ে কথার ফুলঝুরি ছুটে। আলিমুদ্দিনের সন্তান হতে পারতো আমার সন্তান। আমি হতে পারতাম সেই সন্তানের
মা। বিধির লিখন ভাগ্যে মিলন রাখে নাই। এই দাওয়াতে এসে আজ আমার বুকটা হাহাকার করছে! মন চায় না আনন্দ
নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করি। আলিমুদ্দিনের স্ত্রী রেবেকার কানে কথাটা যায়। রুকসোনার কথা জানার পর রেবেকা
কান্নাকাটি শুরু করে। আমার স্বামীর জীবনে এমন ঘটনা আছে তা আমি জানতাম না। আমি তাকে মনে করতাম একজন
ভালো মানুষ, তার জীবনে কোন অতীত নেই। আজ তার প্রেমিকা এসে দেখা দিল সশরীরে। তার কান্নাকাটি বাড়তে
থাকে। এই জ্বালা আমি সইবো কী করে! স্বামীকে ডেকে এনে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কান্নাকাটি করে থাকে। আলিমুদ্দিন
স্ত্রীকে বুঝায়, বিয়ে বাড়িতে তুমি কান্নাকাটি করলে মানুষে কি বলবে! তুমি কি আমার মান সম্মান কিছু রাখেছো? তোমার
প্রেমিকা আমার মেয়ের বিয়েতে এসে কান্নাকাটি করছে। কত কিছুই ইনিয়ে বিনিয়ে বলছে। এই সন্তান হতে পারতো তার!
এই ঘর সংসার হতে পারতো তার! আলিমুদ্দিন বলে, আজ তার মেয়ের বিয়ে না তোমার মেয়ের বিয়ে? তুমি অন্তত চুপ
থাকো। ও আমার মেয়ের বিয়ে বলে আমি মান ইজ্জত দিকে তাকিয়ে চুপ থাকব। আর অন্যজন এসে সবার কাছে যা তা
বলে যাবে! আমি সব সহ্য করে নেব তাই তো তোমার কথা? আলিমুদ্দিন বলে, সে আমার অতীত তুমি আমার বর্তমান।
এখন আমার হৃদয় জুড়ে আছো তুমি। রেবেকা বলে, তাহলে তোমার প্রেমিকা এ কথা বলে বেড়াচ্ছে কেন? আলিমুদ্দিন
সান্তনার স্বরে বলে, সে বলে যাক, একদিনই তো বলবে! রেবেকা বলে, ও! সে বলে যাক আর আমি সহ্য করি? আমি তা
পারবো না। তুমি তার মুখ বন্ধ করো। রেবেকা আরো ক্ষেপে যায়। কেন চুপ করব? এটা কারো সহ্য হয়? তুমি আমার
মেয়ের বিয়েতে তাকে দাওয়াত না দিলেও পারতে। আলিমুদ্দিন ধৈর্য নিয়ে বলে, রেবেকা আমি তোমাকে নিয়ে সুখে আছি
সেটা দেখানোর জন্য তাকে দাওয়াত দিয়েছি। তুমি যদি এখন এভাবে অশান্তি করো তাহলে সেটা হবে না। রেবেকার দুঃখে
কিছুটা প্রলেপ পড়ে। আমাকে নিয়ে সুখে আছো তা দেখানোর কি আছে? তোমরা তো দু’জন পালিয়ে বিয়ে করতে চাইছো?
হ্যাঁ চাইছি কিন্তু আমার জন্যই বিয়ে হয় নাই, আমার সাহস ছিল না। রেবেকার দুঃখ আবার জেগে ওঠে। এই কথাও
আমারে শুনতে হচ্ছে তোমরা পালিয়ে বিয়ে করতে চাইছিলা। রেবেকা চুপ থাকো আজ তোমার মেয়ের বিয়ে। রেবেকার
অভিমান প্রশমিত হয় না। হ্যাঁ, আমার তো চুপ থাকতে হবে কারণ মেয়ে তো আমার একার। আর তুমি তাকে নিয়ে রঙ্গ
নেশায় মেতে থাকো। তুমি তোমার প্রেমিকাকে দাওয়াত দিবা একবার আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতে? আলিমুদ্দিন
আহমেদ একটু রেগে বলে, কি করবো না করবো সব তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে করতে হবে? বলছি তো আমার মন
পরিষ্কার। সেখানে কোন দ্বিধাদন্দ নাই। কিছুটা শান্ত হয়ে বলে, বিয়ে বাড়ি কোন হট্টগোল করবে না। সে একদিনের জন্য
এসেছে তার মনে যা আসে তাই বলে যাক। তুমি তো আমার মনের সব জায়গা দখল করে আছো। আর সব সময়
থাকবা। তোমার মন যখন চায় তুমি তখন দু’কথা কেন চার কথা শোনাতে পারবা। বুঝা গেল রেবেকা কিছুটা শান্ত
হয়েছে। চোখের অশ্রু টিস্যু দিয়ে আলতো করে মুছে বলে, আমি থেমে গেলাম আমার মেয়ের জন্য। ভালোয় ভালোয় আমার
মেয়ের বিয়েটা হয়ে যাক তারপর আমি দেখাবো। আলিমুদ্দিন হাফ ছেড়ে বলে, তারপর তোমার মনে যা চায় তাই তুমি
করো। রাবেকার মনের জ্বালা কিছুতেই মেটে না। ছেলে মেয়ে বড় হয়েছে তারপরও প্রেম উথলে পড়ছে। বুড়ো বয়সে
ভীমরতি ধরেছে। রেবেকা তুমি থামলে ভালো লাগতো। হ্যাঁ আমি থামি আর একজন ওই দিকে বকবক করতে থাকুক।
রুকসোনা তখন বকবকানি শেষ করে এদিকে এগিয়ে আসছিল। রেবেকার সামনে এসে বলে, তোমার ভাগ্য খুব ভালো তুমি
আলিমুদ্দিনের মতো স্বামী পাইছো! আলিমুদ্দিন কি বলছে আমার সাথে তার সম্পর্ক ছিল? খুব ভালোবাসতো আমিও খুব
ভালবাসতাম, এখনো বাসি। একথা শুনে রেবেকার গায়ে জ্বালা ধরে যায়। ভেবে পায় না কী করবে। আপনি এখানে
বসেন। আলিমুদ্দিনের সঙ্গে আলাপ করেন। প্রেম আলাপ কথাটি বলতে গিয়েও বলে না। আমার কাজ আছে আমি ওই দিকে
যাই। অগ্নিঝরা কটাক্ষে রুকসোনাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় রেবেকা। বিয়েতে আসছে না নিজের রঙ্গ রস দেখাতে আসছে।
ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের তৎপরতা নাটকীয় নিরব দ্বন্দ্ব সংঘাতের বিষয়টি সীমিত রাখে। মেয়ের বিয়ে শেষ হয়। রুকসোনার
বিদায় নেয়ার মুহূর্তে চোখ ছলছল করে। আলিমুদ্দিন এগিয়ে দিয়ে আসতে যায় রুকসোনাকে। পিছন দিক তাকিয়ে দেখে
রেবেকা চোখের চোখে নিষেধ। রুকসোনা পিছন ফিরে তাকায়। রেবেকার সঙ্গে দৃষ্টি যুদ্ধ বিনিময় হয়। আলিমুদ্দিন ফিরে
এসে দাঁড়ায় রেবেকার পাশে।
স্বামী স্ত্রীর কথা বন্ধ। রেবেকা খাবার সময় টেবিলে খাবার রেখে দেয়। খাওয়া শেষে গোছগাছ করে উঠিয়ে রাখে।
এভাবেই চলতে থাকে। আলিমুদ্দিন ভেবেছিল কদিন গেলে রেবেকার রাগ পড়ে যাবে। কিন্তু দেখে কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে
না। সে রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে। দেখো যা হবার তো হয়ে গেছে, তুমি আমার সঙ্গে কথা না বললে আমার কষ্ট হয়।
রেবেকার বক্রোক্তি। আমি কথা না বললে কি হলো কতজনই তো আছে কথা বলার। আলিমুদ্দিন নরম কন্ঠে বলে, বুঝতে
পারছি তোমার রাগ এখনো কমেনি। আমি কে আমার রাগেই বা কার কি আসে যায়। ঠিক আছে সামনে ছেলের বিয়ে
তখন আর অন্য কাউকে দাওয়াত দেব না। এই আমি তোমার গা ছুয়ে বললাম। অভিমান হালকা না হলেও সান্ত্বনা খুঁজতে
পায়। আমার গা ছুঁয়ে বলতে হবে না। কতজন আছে হৃদয়ে কে জানে।
আলিমুদ্দিনের পুত্র ফাহিমের বিয়ে। পাত্রী দেখা চলছে। ফাহিম চুপচাপ। ভালো মন্দ কিছুই বলে না। নীরবতা সম্মতি মনে
করে বাবা। ফাহিমের জন্য মেয়ে দেখে কথাবার্তা ঠিকঠাক। সেই সময় একটি বাচ্চা ছেলে প্রবেশ করে আলিমুদ্দিনের
বাড়িতে। আলিমুদ্দিনকে দাদা বলে ডাকে। আলিমুদ্দিন চমকে ওঠে। তুমি কে? কোথা থেকে এসেছো?
বাচ্চাটি বলে ওঠে, তুমি আমার দাদা। রেবেকাকে দেখিয়ে বলে ওই আমার দাদি। তোমরা আমাদের খোঁজ না করলে কী
হবে আমরাই তোমাদের খোঁজ নিতে এসেছি! ওই যে আমার আম্মুও এসেছে। কেয়া এগিয়ে এসে শ্বশুর শাশুড়িকে সালাম
করে। বাবা আমি আপনার পুত্রবধূ। এটা আপনার নাতি। রেবেকা কান্নাকাটি শুরু করে। আমার ছেলে বিয়ে করল বাবা
মাকে না জানিয়ে। এমন ছেলে আমি পেটে ধরেছিলাম! আলিমুদ্দিন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ঘটনার ধাক্কায় বুঝে উঠতে পারেন না
কাকে কী বলবেন। নিজের মতো করে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেরি করেন না। স্ত্রীকে প্রবোধ দিয়ে বলেন, যা হবার তাতো
হয়ে গেছে এখন বৌমাকে ঘরে নাও। তোমার ছেলেরই তো দোষ সে একথা জানায় নাই কেন?
হ্যাঁ এখন সব দোষ তো আমার ছেলেরই হবে।
বিয়ে করেছে ছেলের বাপ হয়েছে সে কেন জানায়নি! আজ হাজির হয়েছে সবাই। এতদিন আমার নাতিটা দাদা-দাদির
আদর থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ওই দিকে ছেলের বিয়ের সব ঠিকঠাক করে আমি কেমন ছোট হলাম। তারা কী বলবে
আমাকে!
রাবেকা তখন মোক্ষম কথাটি বলে। যেমন বাপ তেমন বেটা। বয়স কালের প্রেমিকা মেয়ের বিয়েতে এসে হাজির। আবার
ছেলে বিয়ে করছে অনেক আগে সেও স্ত্রী সন্তান নিয়ে এসে হাজির। আলিমুদ্দিন স্ত্রীর ছন্দ মেলানো কথায় আহত হলেও প্রতি
উত্তর করে অশান্তি বাড়াতে চায় না। নাতিকে কোলে নিয়ে আদর করেন। পিতামহ হবার গৌরব সমোজ্জ্বল করে পুরুষত্ব।