Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
সুলেখা আক্তার শান্তার ছোটগল্প “শেষ বেলায়” – Pratidin Sangbad

সুলেখা আক্তার শান্তার ছোটগল্প “শেষ বেলায়”

ইয়াসিন আলীর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। হাসপাতালে মেয়ের বেডের পাশে বসে ভাবছে একি হলো। ললাটে করাঘাত করে মাঝে মাঝে বিলাপ করছে, মেয়েটার জীবন শেষ করে দিল।
মিনা বলল, আব্বা তোমার মুখটা নিচু করো। ইয়াসিন আলী ঘেমে নেয়ে উঠেছে। মিনা ব্যাগ থেকে একটা ফ্রেশ টিস্যু বের করে পরম যত্নে পিতার ঘর্মাক্ত মুখ মুছে দেয়। ইয়াসিন আলী সাধারণত মেয়ের স্কুল ছুটির আগেই পৌঁছে যায়। অফিসের কাজ সারতে আজ একটু দেরি হয়েছে। রাস্তায় বেরিয়ে দেখে এলাহি কান্ড। কোথায় নাকি মিটিং মিছিল চলছে। প্রচন্ড জ্যামে আরোহী এবং বাহন। দুপুরের তীব্র রোদে ঘেমে নেয়ে উঠছে সবাই। ইয়াসিন আলী দুইবার রিক্সা বদল করে প্রায় হেঁটেই হাপাতে হাপাতে স্কুলের গেটে পৌঁছায়। একটু পরে মিনার হাসি মাখা মুখটা দেখা গেল। আব্বা তুমি এসেছ? পরক্ষণেই মিনার মুখের হাসি মিলিয়ে যায় বাবার ঘর্মাক্ত মুখটা দেখে। একি অবস্থা তোমার, মিনা চাপা স্বরে বলে। ইয়াসিন আলী বিব্রত হয়। আর বলিস না দুবার রিক্সা বদল করেও প্রায় হেঁটে আসতে হলো। কন্যার সীমিত শুশ্রুষা তাকে চাঙ্গা করে। ভালোবাসায় বুক ভরে যায় ইয়াসিন আলীর। চোখের অশ্রু আনন্দ হৃদয়ে প্রবাহিত হয়।
সুন্দরী মিনার বিয়ের বয়স হবার আগেই বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। মিনার পড়াশোনা বেশ ভালো। মিনার বাবা বিনয়ের সঙ্গে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এত ছোট বয়সে বিয়ে দেওয়া কি ঠিক হবে! লেখাপড়া করছে ওটা শেষ করুক তারপর বিয়ে। এক প্রবাসী ছেলের পরিবার প্রস্তাব পাঠায়। ছেলে বিদেশে থাকে। বলিষ্ঠ গড়নের হ্যান্ডসাম ছেলে। অবস্থাপন্ন পরিবার। ইয়াসিন আলী দ্বিমত করতেই শুরু হয় পাত্রপক্ষের অনুনয় বিনয়। নাছোরবান্দা পাত্র এবং পরিবারের জোরাজোরিতে রাজি হয় ইয়াসিন আলী। তবে একটা শর্ত, মেয়ের পড়াশুনা শেষ করতে দিতে হবে। প্রচলিত অভ্যাসে সুন্দর করে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। পাত্র রেজাউল হাজির হয় শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সার্টিফিকেট নিয়ে। পরে জানা যায় সেগুলো নিয়ে সন্দেহ আছে। রেজাউল স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেনি।
একগুঁয়ে স্বভাবের রেজাউল বিয়ের পর থেকেই মিনার পড়াশোনা নিরুৎসাহিত করতে থাকে। তার গতানুগতিক কথা, মেয়েদের পড়াশোনা করে কী হবে? চাকরি করতে প্রয়োজন হয় পড়াশোনার। গর্ব করে বলে, আমার এবং আমার পরিবারের যে অবস্থা কোন দিন সে প্রয়োজন হবে না। তার পরিবারের মেয়েরা কেউ কোনদিন চাকরি করেনি কথাটা জানাতেও ভুল করে না। স্ত্রী শিক্ষিত হলে সে সংসারে শান্তি থাকে না। এরকম একটা কথা তাকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়। অনেক বাধা এবং প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মিনা এইচএসসি পাশ করে। গ্রাজুয়েশন করার প্রস্তুতি নেয় গোপনে। স্বামীর অমার্জিত আচরণ প্রতিনিয়ত তাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগায় বাদানুবাদের পর্যায়ে একদিন বলে ফেলে, শিক্ষিত হলে শিক্ষার মর্যাদা বুঝতে।
বজ্র কঠিন হাতে মিনার কব্জিটা ধরেছে আছে তার স্বামী। টেনে হিচড়ে নিয়ে যায় রান্নাঘরে। গ্রাজুয়েশন করে কী হবে? চিবিয়ে কথাগুলো বলে রেজাউল। কত করে বললাম এত জেদ করো না। আমাকে অতিক্রমের চেষ্টা। স্বামীর অবাধ্য হওয়া গুনাহের কাজ। নিজে গুনাগার হচ্ছে আমাকেও গুনাহগার করছে। স্ত্রীকে শাসনে রাখতে না পারা স্বামীর ব্যর্থতা। ব্যর্থ স্বামী হতে চাই না। শুনেছি পড়ালেখা ঠেকাতে বউয়ের আঙ্গুল কেটে দেওয়ার কথা। আমি অত বড় পাষণ্ড না। বলে পাটার উপর রেখে পুতা দিয়ে একটা একটা করে আঙ্গুল ছেচে দেয়। বুকফাটা আর্তনাদে মিনা জ্ঞান হারায়।
নারীর উপর বলপ্রয়োগের অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়া বীরদের অনেককেই বুক ফুলিয়ে চলে। নারী বিবাহিত স্ত্রী হলে সর্ব কর্তৃত্ব সমাজ স্বীকৃত অধিকারের আওতায় চলে আসে। দোর্দণ্ড প্রতাপ প্রয়োগ হতে থাকে সেই ক্ষমতার। যৌন হয়রানি, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা এগুলো হয়ে ওঠে পৌরুষের মর্যাদা ও পুরুষতন্ত্রের অলংকার।‌ মর্যাদাহীনতা বা অপরাধ হয় পুরুষতন্ত্রের গৌরব। এভাবেই চলছে সমাজ সংসার অনন্তকাল ধরে।