Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
ফিরে আসা-সুলেখা আক্তার শান্তা

আজ ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফিরে আসা-সুলেখা আক্তার শান্তা

সুলেখা আক্তার শান্তা: গ্রীষ্মকাল দারুন গরম পড়েছে। অহিদ আর মুহিত দুই বন্ধু রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। অহিদ বলে, ঘেমে অস্থির লাগছে। মুহিত বলে, অস্থির লাগলে চল ডাব খাই ভালো লাগবে। না খাব না। আরে চল টাকা আমার পকেট থেকে যাবে। বন্ধুর কাঁধে হাত দিয়ে অহিদ বলে, আমি কি টাকার জন্য বলছি নাকি? দুই বন্ধু একত্রে ডাব খায়। ডাব খেতে খেতে নানান বিষয় নিয়ে গল্প করে। বাবা, বাবা বলে, একটা বাচ্চার আওয়াজ কানে এলো। অহিদ চোখ তুলে তাকায়। দেখতে পায় একটি মেয়ে বাচ্চা নিয়ে রিকশায় বসে আছে। অহিদ ইশারায় মেয়েটিকে সরে যেতে বলে। সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ায় রিক্সাটি চলে যায়। মুহিত বলে, কে রে তোর দিকে ইশারা করে বাবা বলে ডাকলো? অহিদ কথাটা উড়িয়ে দেয়। দূর তুইও হয়েছিস তেমন, রাস্তা দিয়ে কে না কে যাচ্ছে। কাকে কী বলছে তা শুনে বলছিস বাবা বলে ডাকছে। আরে না, ভাবছিলাম বাচ্চাটা তোকে দেখিয়ে বাবা বলল কিনা! হয়েছে এবার থাম। ডাব খেতে এসেছি, খাওয়া শেষ এখন চল যাই। মুহিত বলে, আর কিছু খাবি? খাবারের মুডটা তুই রাখলি কই? যাহ তাতে কী হয়েছে? দুই বন্ধু লাঞ্চ করতে একটি রেস্টুরেন্ট ঢোকে। খাওয়া শেষে মুহিত বিল দিতে চাইলে অহিদ বাধা দেয়। মুহিত বলে, ভালো কথা রাতে আমাদের বাসায় যাবি। মুনা তোর জন্য রান্না করবে। মুনা বিয়ের আগেই আমার জন্য যেভাবে রান্না শুরু করছে, আমি খেতে খেতে মোটা হয়ে যাচ্ছি। এটা তোদের ব্যাপার তোরা কী না কি করবি। খাবি কি না খাবি। না মুনা রান্না করছে আর আমি যাব না। একদিন না দেখলে মাও তো তোর জন্য অস্থির হয়ে যায়। হ্যাঁরে খালাম্মা আমাকে অনেক ভালোবাসে। অফিসের কাজ সেরে চল বাসায় যাই। তুই মেসে থাকোস কী খাস না খাস সে জন্য অস্থির হয়ে থাকে মা আর মুনা। তাই তো তোকে প্রতিদিন বাসায় খাওয়ার জন্য বলে। অফিস শেষ করে দু’জন একত্রে মুহিতের বাসায় যায়। যাওয়ার পথে অনেক কিছু কিনে নিয়ে যায়। মুহিত না না বলে তারপরও অহিদ কেনাকাটা করে। বাসায় ঢুকতেই মুনা এতসব জিনিস কিনে আনতে দেখে উষ্মা প্রকাশ করে। এখানে এলে প্রতিদিনই বিরাট লটবহর নিয়ে আসতে হবে? এসব করার দরকার নেই। মুহিতের মা বিলকিস বলেন, বাবা তুমি রোজ, রোজ এসব করতে যাও কেন? অভিমানের কন্ঠে বলেন, এমন করলে আর তোমাকে বাসায় আসতে দেবো না। অহিদ আনন্দে বিলকিসকে জড়িয়ে ধরে। খালাম্মা কী যে বলেন, আপনাকে না দেখে থাকতে পারি। বাবা তুমি আমার ছেলের মতো। ছেলে হলে তো কোন ফরমালিটি দেখাবার দরকার নেই। তুমি আসলেই আমি খুশি। তোমাদের ব্যবসাটা ভালোভাবে সাফল্য মুখ দেখুক এই কামনা করি। অহিদ বলে, হ্যাঁ খালাম্মা তাও দেখতে পাবেন। ব্যবসায় আমরা দুই বন্ধু যেভাবে পরিশ্রম করছি তাতে আমরা অবশ্যই সাফল্যের মুখ দেখব। মুনা বিভিন্ন রকমের খাবার টেবিলে সাজায়। নাও এবার খেয়ে নাও। অহিদ আর মুহিত খাবারের টেবিলে বসে। অহিদ মুনাকে বলে, তুমিও খালাম্মাকে নিয়ে বসো। আমরা সবাই একত্রে খাই। সবাই টেবিলে একত্রে খেতে বসে। খাওয়া শেষ হলে অহিদ মেসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিলকিস বলেন, বাবা তুমি আসতে ভুল করো না। অফিস থেকে ফেরার পথে এখানে খেয়ে যাবে। মেসের যে রান্না। অহিদ বলে, ঠিক আছে খালাম্মা আমি তো প্রতিদিনই আসছি।

একটা ফোন আসে অহিদের মোবাইলে। তুমি কই বাসায় আসো, ছেলেটার ভীষণ জ্বর। কখন থেকে জ্বর? আজকে দুই দিন। আমাকে জানাওনি কেন? তুমি কাজে ব্যস্ত তাই জানায়নি। ডাক্তার দেখাইছো? হ্যাঁ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পথেই তোমাকে দেখতে পেলাম রাস্তায়। রাতুলকে ঠিকমতো ওষুধ খাওয়াও। সেরে যাবে। আমার কাজের প্রচন্ড চাপ। রাতে তো কাজ থাকেনা রাতে এসে ছেলেটাকে দেখে যেতে পারো? আর বাসা থাকতে তুমি কেন মেসে থাকো? সেটা আমি আমার প্রয়োজনে থাকি, বলে ফোন কেটে দেয়। অহিদের মোবাইলে মুনার ফোন আসে। দু’জনে কথা শুরু করে। কিভাবে তাদের স্বপ্ন সফল করা যায়। বাড়ি, গাড়ি করেই মুনাকে বিয়ে করবে।‌ মুনার উত্তর আমার বাড়ি, গাড়ি কোন কিছুই দরকার নাই। তুমি থাকলেই হবে। আমরা তো এখন বিয়ে করতে পারি। দু’জনে একটা বাসা নিয়ে থাকবো। তোমার যেমন আয় আমরা সেভাবেই চলবো। না মুনা আমি চাই তোমাকে রাজরানী করে রাখতে। তোমাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা। দেখো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে যেয়ে আমি যেন বুড়ো না হয়ে যাই। আরে ধুর কী যে বলো না। দেখবা খুব শিগগিরই আমার সবকিছু হয়ে যাবে। তাই যেন হয় অপেক্ষা আমার আর ভালো লাগবে না। মুনার ফোন রাখার পর অহিদের মনটা একটু খারাপ হয়। ছেলেটার জ্বর এই অবস্থায় তার কাছে থাকা উচিত। ঠিক করে সে বাসায় যাবে। রাতেই অহিদ নিপার বাসায় যায়। দেখে ছেলের প্রচন্ড জ্বর। রাতুল বাবার হাতের আঙ্গুল ধরে বলে, বাবা তুমি আর যাবে না আমার কাছে থাকবে। হ্যাঁ বাবা আমি থাকবো যাব না। নিপা বলে, ছেলেটা তোমার জন্য পাগল তারপর ছেলেটার কাছে তুমি আসো না। বাসা থাকতে তুমি গিয়ে থাকো মেসে। কোথায় তোমার মেস, কোথায় তোমার অফিস, কিছুই তুমি চেনাও না। এসব চিনে কী হবে? দরকার তো আমাকে। আমি তো আছি। ছেলে বউ বাচ্চা রেখে তুমি একা থাকো যে মেসে। বউ বাচ্চার কোন দায়িত্বও পালন করো না। আজ আমার বাবা ছিল বলে আমি একটা আশ্রয়ে আছি। না হলে কোথায় থাকতাম কী করতাম। তুমি তো আমাকে অবজ্ঞা কর, আমি কালো মেয়ে বলে! সেজন্য আমার বাবার কাছ থেকে যত ধরনের সুবিধা সব নিয়েছো। সুবিধার জন্য তো তোর মতো কালো মেয়েকে আমি বিয়ে করছি। নয় তোকে আবার বিয়ে! নিপা নিষ্ঠুর অপমানটা হজম করে। এখন আমাদের একটা ছেলে আছে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে তুমি সংসারী হও। আমাকে জ্ঞান দিতে হবে না। যা যখন করার আমি সময় মতো করব। রাতে অহিদ ছেলের পাশে ঘুমায় ভরে সূর্য ওঠার আগেই বাসা থেকে বের হয়ে যায়। রাতুল ঘুম থেকে উঠে বাবাকে না দেখতে পেয়ে কান্নাকাটি করে। নিপা ছেলেকে বুঝায় তোমার বাবা আসবে। রাতুল তা বুঝতে চায় না। নিপা ভাবে স্ত্রী হয়েও স্বামীর প্রতি অধিকার খাটাতে পারে না। কালো বলে স্বামীর চরম অবহেলার শিকার সে। রূপ ক্ষণস্থায়ী হলেও অনাদি কাল থেকে এটাই নারীর ভাগ্য নির্ধারণ করছে। অপরদিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী অহিদ যেকোনো উপায়ে তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়। বিবেক বিবেচনা নীতিবোধের তোয়াক্কা করে না। ঝুঁকিপূর্ণ দ্বৈত জীবনের আশ্রয় গ্রহণ তার মর্ম পীড়ার কারণ হয় না। তার সহজ হিসাব, অর্থবিত্ত প্রতিপত্তি অর্জিত হলে দুই বিয়ে কেন চার বিয়েতে ও সমাজে গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুন্ন হবে না। কিঞ্চিৎ বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে নিপা আর মুনার সহাবস্থান ও নিশ্চিত হবে।
অহিদ ব্যবসার সাফল্য মুখ দেখে। বাড়ি, গাড়ি করে প্রতিষ্ঠা লাভের সব উপায় চূড়ান্ত করে। মুনার মতো রূপসী স্ত্রীকে এখন তার পাশে প্রয়োজন। সে মুনাকে বিয়ে করবে। বড় আয়োজনে বিয়ের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। মুনা বলে, তুমি আমাকে পাওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করেছ। আজ তোমার সেই পরিশ্রম সাফল্যের মুখ দেখেছে। আমি অনেক ভাগ্যবতী তোমার মতো একজন পরিশ্রমী মানুষকে জীবন সঙ্গী হিসাবে পেলাম। যে কিনা ভালোবাসার মূল্য দিতে কঠিন পরিশ্রম করতে পিছপা হয় না। তোমার আমার ভালোবাসার বন্ধন যেন এভাবে চিরদিন টিকে থাকে। মুনা তোমাকে না পেলে জীবনটা আমার কাছে মনে হতো নিরর্থক। তোমাকে ছাড়া আমি এক দণ্ড ও থাকতে পারবো না। তুমি আমার নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে। আর বোলো না তোমার কথা শুনে আমার দম আটকে যাবে। আমার ভালোবাসার মানুষ আমাকে এত ভালবাসে। অহিদ তোমার এই হাতটি আমি ধরছি ছাড়ার জন্য না আজীবন ধরে রাখার জন্য। আমিও। ভালোবাসার ছায়ায় রেখো আমাকে। কখনো দূরে চলে যেও না আমায় রেখে। ভালোবাসার সাফল্য কি জানো? সার্থক কাউকে জীবনে সাথী হিসেবে পাওয়া।
অহিদ মুনার বিয়ের দিন। দু’জনে বর বধু সেজে বসে আছে।‌ কাজী বিয়ে পড়াবে। দু’জন একে অপরকে পাওয়ার সে কী আকাঙ্ক্ষা। তারপর হবে বাসর শয্যা আর যেন তর সইছে না। বাসর ঘরে দু’জন দু’জনকে আদর করবে ভালোবাসবে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা। কাজী বিয়ে পড়াবে সেই মুহূর্তে ঘটে আরেক ঘটনা। একটি বাচ্চা এসে অহিদকে জড়িয়ে ধরে। বাবা তুমি বিয়ে করছো আমার মাকে রেখে? অহিদ ছেলেটিকে দেখে অবাক! কী করবে বুঝতে পারে না। বিয়ের আসরে এমন ঘটনায় হৈচৈ পড়ে যায়। মুনা অবাক বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কী হচ্ছে এসব বিয়ের অনুষ্ঠানে। নিপা বলছে, এই প্রতারক তোর জন্য কী করি নাই। আমার বাবা এক এক করে তোকে কয়েকবার মোটা অংকের টাকা দিয়েছে তোর ব্যবসার জন্য। যেন তার মেয়েটা ভালো থাকে। এই ভালো রেখেছিস তুই তার মেয়েকে। এই পর্যন্ত তুই আমাকে কী দিয়েছিস এক যন্ত্রনা ছাড়া? ভাত কাপড়ের কথা না হয় ছেড়ে দিলাম। নিজের একমাত্র ছেলে তার কোন দায়িত্ব পালন করেছিস? আমার বাবার টাকায় ব্যবসা স্টাবলিষ্ট হয়েই বিয়ে করতে বসেছিস। কেন আমি কালো বলে? আমার বাবার টাকা নেওয়ার সময় আমি যে কালো সেটা মনে ছিল না। আবার বিয়ে করবে বলে বাসায় না থেকে থাকতো মেসে। হায়রে পুরুষের জাত তোমরা পারো বটে। একটা মেয়ে কালো বলে রূপহীনা বলে তার পরিবারকে খেসারত দিতে হবে। মুনার মা বিলকিস এসে বলেন, এই ছেলেকে আমি নিজের ছেলের মতো দেখেছি। সে আমার মেয়ের সঙ্গে এত বড় প্রতারণা করবে ভাবতেও পারি নাই। ঘুনাক্ষরে বুঝতে পারিনি তার বউ আছে বাচ্চা আছে। বিয়ের আগে এমন প্রতারণা থেকে বাঁচা গেল। এতগুলো মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে তোমার বিবেকের এতটুকু বাঁধলো না। মুনা গলার মালা ছিঁড়ে ফেলে দিলো। নিপাকে বলল, বোন তুমি তোমার স্বামীকে নিয়ে যাও। আমি নারী হয়ে আরেক নারীর সংসার ভাঙতে চাই না। নারী যেন পুরুষের খেলার সামগ্রী তারা যেমন ইচ্ছা খেলবে। অহিদ এতোগুলো মানুষের সামনে জর্জরিত হচ্ছিল লজ্জায় অপমানে। তার মনের ভেতর থেকে মনুষত্ববোধ জাগ্রত হলো। অহিদ ছেলের হাত ধরে নিপার কাছে গিয়ে বলে, আমি ভুল করছি আমাকে ক্ষমা করো। ভুল তুমি আমার একার কাছে করনি। যাও তুমি মুনার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাও। মুনা আমাকে মাফ করে দাও। জানি তুমি আমাকে মাফ করতে পারবে না। কারণ আমি একটা মনের চাওয়া পাওয়া আশা আকাঙ্ক্ষাকে হত্যা করেছি। মুনার দুই চোখে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। যাও তুমি তোমার বউ বাচ্চার কাছে ফিরে যাও। অহিদ বৌ বাচ্চাকে নিয়ে স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসে।

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ