insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121স্বপ্ন পূরণ () সুলেখা আক্তার শান্তা
আলিম বড় হয়েছে এতিমখানায়। মা বাবা নাই এবং কোন কুলে কেউ আছে কিনা তাও জানা নাই। অনেক এতিমের ঠাই ঠিকানা কিছু থাকে কিন্তু তার একেবারে শূন্য। শিশু বয়সে এমন কী কারণ ঘটেছিল যাতে তাকে এভাবে সংসার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে, কোন উত্তর পাইনি সে। তার আবির্ভাব হলো কী করে এই কোলাহল ময় পৃথিবীতে। আকাশ ভেদ করে অথবা মাটি ফুঁড়ে এমন কত কথা ভাবে সে। আলিম স্বপ্ন দেখে মা বাবা ভাই বোনের স্নেহ ভালোবাসার বন্ধন নিয়ে এক সংসারের। নিরাশার দীর্ঘশ্বাসে তার স্বপ্ন মিলিয়ে যায় প্রতিদিন। সে এখন কাজ করে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করার।
এই যে বুড়িমা সরেন সরেন। কে শুনে কার কথা। তার কানে কোন আওয়াজেই পৌছায় না। কাছে গিয়ে আলিম বলে, আপনাকে কখন থেকে ডাকছি আপনি শুনছেন না। ট্রাক্টরের আওয়াজে বোধহয় শুনতে পাচ্ছেন না। মর্জিনা অবাক দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমাকে কিছু বলছ বাবা? কখন থেকে আপনাকে ডাকছি আপনি শুনতে পাচ্ছেন না? বাবা কানে কোন শব্দই আসে না। চিন্তায় অন্যমনস্ক হয়ে থাকি বাবা। ট্রাক্টর আপনার গায়ে লেগে কী হতো বলেন তো। কী আর হত বাবা, কপালে যা লেখা আছে তাই হতো। এই বুড়া বয়সে আপনি কাজ করেন কেন? কাজকর্ম না করলে খাব কী বাবা? এই বুড়া বয়সে চলতে পারেন না তবু কাজকর্ম করতে হচ্ছে। পেটের দায়ে বাবা। কেউ কাজে নিতে চায় না, আমি জোর করে কাজ করি। অনেকে সাহায্য করতে চায় কিন্তু আমি নেই না। শরীরে শক্তি যতক্ষণ আছে কারো উপর নির্ভর করতে চাই না। আগের মতো শরীর চলেনা তবু কাজ করেই জীবন চালাতে চাই। আপনার সন্তানাদি নেই? আছে বাবা, একটা ছেলে। সে অসুস্থ হয়ে বিছানায়। বউ ছিল সে স্বামীর অসুস্থতা দেইখা ফেলায় চইলা গেছে। আমি মা আমি তো পারিনা সন্তানেরে ফেলাইয়া দিতে।
কাজ শেষে মর্জিনার পিছনে পিছনে যায় আলিম। দেখে ভাঙ্গা একটা ঘুপরি ঘরে মর্জিনা আর তাঁর ছেলে থাকে। অসুস্থ ছেলে প্রাণ যায় যায়। কাজ থেকে ফিরে মর্জিনা তার সেবা শুশ্রূষা করেন। আলিম বলে, আপনার ছেলেকে যদি বাঁচাতে চান এখনই ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলেন। বাবা, ডাক্তার দেখানোর মতো টাকা নাই। টাকার চিন্তা করতে হবে না। আলিম দ্রুত রোগীকে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ পথ্যের ব্যবস্থা করে। মর্জিনা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাবা তুমি আমাদের জন্য এত কিছু করলা কেন? আলিম বলে, মানুষ তো মানুষের জন্যই করে। শয্যাশায়ী ছেলের জন্য মায়ের এমন আত্মত্যাগ আলিম কে বিমোহিত করে। আলিম কিছু বাজার সদাই সঙ্গে করে নিয়ে আসে। আলিম বলে, আপনি রান্না করেন সবাই একসঙ্গে খাব। খাওয়া শেষ হয়। আলিম বলে, আপনার হাতের রান্না খাইয়ে পরান টা আমার ভরে গেল। কী আর খাইলা তুমি এই গরিবের ঘরে।
আপনি বুড়ো বয়সে এই কাপা শরীর নিয়া রান্না করে খাওয়াইলেন এটাই তো অনেক। আলিম মর্জিনার মধ্যে দেখতে পায় মাতৃরূপের এক অসাধারণ মহিমা। অচল পুত্রের জন্য বৃদ্ধা উজার করছে তাঁর নিঃশেষিত জীবনীশক্তির সবটুকু। আলিম আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। আজ থেকে আপনাকে আমি মা বলে ডাকবো। আমার বাবা মা কেউ নেই। অশ্রুসিক্ত মর্জিনা বলে, ডাইকো বাবা ডাইকো। মা কখনো আপন পর দেইখা হয় না। মা মা’ই। তুমি আমাকে মা বইলাই ডাইকো। আসলে কিছু মানুষের কাছে আল্লাহ যেন শান্তি ঢেলে দিয়েছেন। আপনার কাছে আমি বড় শান্তি পাইলাম। এই শান্তি আমি সারা জীবন ধরে রাখতে চাই। আচ্ছা বাবা। আমার দবির যেমন একটা ছেলে আজ থাইকা তুমি আমার আরেকটা ছেলে। যতদিন বাঁচি তোমার মা হইয়া থাকব।