আজ ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রবাসে পরবাসে-সুলেখা আক্তার শান্তা

                                             প্রবাসে পরবাসে-সুলেখা আক্তার শান্তা
বিচিত্র মানুষের মন। তার চেয়ে বিচিত্র মনের গতিপ্রকৃতি। অস্থিতিশীল হৃদয়বৃত্তির খেয়ালী দ্বন্দ্ব সংঘাতে বিক্ষুব্ধ বিধ্বস্ত হয় শান্তির জীবন। রহিমার অনুশোচনা হয়। ভুলে যে কান্ড করে বসেছে এটা তার করা উচিত হয়নি। ছেলে মেয়ের জন্য মনটা তার দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়।
ইমান আলী আর রহিমা বেগমের বিয়ে হয় আঠারো বছর আগে। বিবাহিত জীবনে ঘর আলো করে জন্ম নেয় তিনটি সন্তান। বিয়ের পর ইমান আলী ভালো আয় রোজগারের আশায় বিদেশ যাওয়া স্থির করে। নিজের এবং শ্বশুরবাড়ির কিছু সঞ্চিত টাকা এবং একখণ্ড জমি বিক্রি করে চলে যায় সৌদি আরব।
ইমান আলী তিন চার বছর পর পর দেশে আসে। বিদেশে অর্জিত সব টাকা স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে পাঠায়। পুরুষ মহিলা যেই হোক মানুষের একাকীত্ব অর্থ-সম্পদে মোচন হয় না। সারাদিন সংসার সন্তানদের লালন-পালনে কেটে গেলেও রাত কাটতে চায়না রহিমার। নিশুতি রাতের নিস্তব্ধ পরিবেশে গুমরে উঠে মনের হাহাকার। হৃদয়ের বিরাজমান সে শূন্যতায় ঢুকে পড়তে ওত পেতে থাকে অনেকে। মোবাইল দোকানদার হেলাল মিয়া সেই সুযোগটি গ্রহণ করে। বিভিন্ন প্রয়োজনে রহিমাকে মোবাইলের দোকানে যেতে হতো। প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় আন্তরিকতা, তারপর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে হেলাল মিয়ার। রহিমার কাছে একটি বিশ্বস্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয় হেলাল মিয়া। সম্পর্কের সুযোগ নিতে শুরু করে হেলাল মিয়া। একদিন জরুরী প্রয়োজনের কথা বলে রহিমার কাছে থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ধার নেয় হেলাল মিয়া। দ্রুত পরিশোধ করার একটি বিশ্বাসযোগ্য অঙ্গীকারও করে। রহিমা সরল বিশ্বাসে টাকা দিতে দ্বিধা করে না।
দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে ইমান আলী। তার কানে আসতে শুরু করে ফিসফাস। পাড়া প্রতিবেশী কিছু সামনে কিছু আবডালে গীবত শুরু করে। ইমান আলী জানতে পারে রহিমা মোবাইল দোকানে হেলাল মিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত। স্ত্রীর চরিত্র সম্পর্কে কানাঘুষা শুনে মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। ইমান আলী বহু কষ্টে নিজেকে ঠিক রাখে। হেলালকে বোঝাতে গেলে বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হেলাল নিজে এবং লোকজন দিয়ে ইমান আলীকে হুমকি ধামকি দিতে থাকে। এমনকি তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দেয়! সংঘাত বিক্ষুব্ধ এই পরিস্থিতিতে টিকে থাকা দায় হয়ে ওঠে। লজ্জা আর অপমানে একদিন হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয় রহিমা। আশ্রয় নেয় শহরে এক আত্মীয়ের বাসায়। আশ্রিতের প্রতি আশ্রয়দাতার আচরণ কোন কালেই মধুর ছিল না। কিছু দিনেই রহিমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সে সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি ফিরে যাবে। রক্ত আর ঘামে তিলে তিলে যে সংসার সে গড়ে তুলেছে সেখান থেকে নির্বাসিত হবে কেন।
রহিমা এসে বলে সেই পরিচিত কথা, ক্ষমা করে দাও। ইমান আলী ভাবতে থাকে, একজন মানুষের পক্ষে একাকী জীবন খুবই কষ্টের। তিন চার বছর পরপর বাড়িতে এসেছে সে মাত্র ক’দিনের জন্য। সন্তান সংসার সামাল দিয়ে কী করে কেটেছে রহিমার নিঃসঙ্গ জীবন। ইমান আলী উপলব্ধি করে এমন জীবন পার করা ছিল সত্যিই কষ্টের। ভুল ভ্রান্তি নিয়েই মানুষের জীবন। হাজার ভালো কাজ দিয়ে তৈরি হয় যে জীবন, একটা ভুলের জন্য তাকে ধূলিসাৎ করা কি ঠিক! তার দ্বারা যদি কোন ভুল-ভ্রান্তি হতো রহিমা কী তাকে ছেড়ে চলে যেত। ইমান আলী সবকিছু ভুলে স্ত্রীকে বুকে তুলে নেয় নতুন জীবন শুরু করবে বলে। নিজের একরোখা ক্ষোভ আর অদূরদর্শিতা কে পাশ কাটিয়ে। দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সহনশীলতার। সমাজে ক্রমবর্ধমান পারিবারিক অশান্তি নিরসনে যা প্রয়োজন। আনন্দে ভরে ওঠে ইমান আলীর সংসার।

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ