insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121কিছু মানুষের স্বভাব স্রোতের বিপরীতে চলা, মানিক তার মধ্যে একজন। প্রচলিত শব্দে যাকে ঘাড় ত্যাড়া বলা হয়। নিজে যা বোঝে তাই ঠিক। কেউ কোন বিষয়ে পরামর্শ দিলে তা শুনার প্রয়োজন বোধ করে না। বলে, কারো পরামর্শ আমার লাগবে না। কারো চেয়ে আমি কি কম বুঝি? সে কর্ম বিমুখ, কোন কাজকর্ম করে না। কাজ করলে নাকি তার মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে। সবাই বলে, একটা কাজ কাম কর। তোমার বউ, বাচ্চা আছে কাজ কাম না করলে তারা খাবে কী? মানিকের জবাব, আমার কাজ করতে হবে না বাপের যা আছে তাতেই চলবে। মনসুর খেপে গিয়ে বলে, তোর বাপের আছেই বা কী? বসে খেলে রাজার ভান্ডারও শূন্য হয়ে যায়। আমরা তো জানি তোর বাপের কী আছে। যার নুন আনতে পান্তা ফুরায় সে আইছে বড় বড় কথা বলতে। মানিকের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সে উঠে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। বাড়িতে গিয়ে বউয়ের সঙ্গে চেঁচামেচি করে। তোরে কি আমি ভাত কাপড় দেই না? মানুষে আমাকে কাজ করতে কয় কেন? তুই নিশ্চয় কিছু বলস, না হলে মানুষ আমাকে এ কথা বলতে আসে কেন? মর্জিনা বলে, কে তোমাকে কী বলল সেই দায় কি আমার? মানুষ কী অন্ধ বোবা কালা। তারা দেখে না বোঝে না। কী সুখে রাখছো আমারে! তোমার এই জ্বালা যন্ত্রণা আমার আর সহ্য হয় না। একটা ছেলে আছে তার মুখের দিকে তাকাইয়া আছি। নয়তো তোমার সংসার আমি করতাম না। মানিক পুরুষত্ব দেখায়, তোরে ধইরা রাখছে কে? যাস না কেন? মর্জিনা ক্ষেপে ওঠে, কোন মুরোদ না থাকলেও এই কথাই তো বলা যায়। এইটাই তো পুরুষ জাতের বাহাদুরি। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি হয় মেয়ে মানুষের আসল ঠিকানা। রক্ত আর ঘামে তিল তিল করে গড়ে তোলে সংসার। আশ্রয় কেড়ে নেওয়ার ভয়ে মেয়ে মানুষ মুখ বুজে সব সহ্য করে। এক কথা দুই কথায় দারুন কলহ বেধে যায়। মানিকের মাথায় আগুন ধরে যায়। মর্জিনার গায়ে হাত তোলে। শুধু হাত তোলা নয় মেরে রীতিমতো আহত করে মর্জিনাকে। আত্মমর্যাদা সচেতন হয়েও মুখ বুজে থাকে মর্জিনা। স্ত্রীর চলে যাওয়ার কোন লক্ষণ না দেখে মানিক অন্য পথ ধরে। গ্রামের মাতব্বরদের দিয়ে সালিশ বসায়। সালিশের কাছে মানিক জানায় এই বউ নিয়ে সে সংসার করবে না। সালিশের লোকজন জিজ্ঞেস করে, কেন সংসার করবে না? বনি বনা হয় না অশান্তি। সারাক্ষণ ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। তালাক দেওয়ার বিধান পাওয়ার জন্য সালিশদারদের গোপনে আগেই টাকা দেওয়া ছিল। মাতব্বররা তালাকের বিধান দিয়ে দেয়।
অসহায় মর্জিনা ছেলেকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাপের বাড়ি চলে যায়। মর্জিনার বাবা মেয়ের কাছে সব কথা শুনে স্তম্ভিত। আমি এটার একটা বিহিত করে ছাড়বো। কেউ মেয়েকে জোরপূর্বক তালাক দিবে আর অমনি তালাক হয়ে যাবে! এটা আমি মানি না। মর্জিনা বলে, বাবা তুমি মানো আর না মানো, একবার যেখানে তালাক উচ্চারণ হয়েছে সেখানে আর ফিরে যাব না। মর্জিনার পিতা বলেন, ছেলেকে নিয়ে আসছিস কেন? ওর বাপের কাছে রেখে আসতি। আমার মাইয়ারে ওর বাপ শান্তি দিল না। ওরে আনছিস আমার চোখের সামনে। মর্জিনা বলে, মা তো পারে না সন্তান ফালাইয়া দিতে। আমি মা কিভাবে পারি আমার সন্তানকে রাইখা আসতে। আগুনে পড়ি, পানিতে পড়ি সন্তান নিয়ে পড়বো। মর্জিনা উদাস হয়ে বসে থাকে। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে। ছেলের দায়িত্ব তার কাঁধে। আমি মা আমার তো কর্তব্য আছে সন্তানের ভবিষ্যৎ গোইড়া দেওয়ার। কী বা করতে পারি। চোখের সামনে তো কোন পথ দেখি না। কত মেয়ে তো বিদেশে গিয়ে চাকরি করে। সে বিদেশে যাবার খোঁজখবর করতে থাকে। মা ছাড়া আমার ছেলে থাকবে কিভাবে! ছেলের একটু কষ্ট হলেও, খাওয়া পড়ার তো আর কষ্ট হবে না। বাবাকে বলে, আমাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করো। বাবা বলেন, মা তুই বিদেশ যাবি! আমি তো থাকুম আরেক দুশ্চিন্তায়! বিদেশের বাড়ি কেমনে কী করবি? মর্জিনা বলে, বাবা কত মানুষ যাইতেছে। তুমি আমারে নিয়ে খামোখা চিন্তা কইরো না। আজগর আহমদ মেয়েকে বাহিরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মর্জিনা ছেলেকে বুঝায়, বাবা তুমি তোমার নানাভাইয়ের কাছে থাকবা। পড়ালেখা করবা। আমি তোমার জন্য কত কী পাঠাবো। মা আমার তোমাকে ছাড়া ভালো লাগেনা। তোমার কোথাও যাইতে হইব না। মর্জিনা ছেলেকে সান্তনা দেয়, না গেলে সংসার চলবে কেমনে? বাবা। আমি ছুটি নিয়া আইসা তোমারে দেইখা যাব। মর্জিনা বিদেশে চলে যায়। ছেলে রিফাতের জন্য মন খারাপ হয়। সে নানার সঙ্গে থাকে। মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করে। ছাত্র হিসেবে সে অত্যন্ত মেধাবী। সময় গড়িয়ে চলে।
রিফাত ভার্সিটিতে পড়ে। মাকে একদিন বলে, তোমার আর বিদেশে থাকতে হবে না। মর্জিনা ছেলেকে বলে, বাবা আমার ভবিষ্যতের আর কী। তোমার ভবিষ্যতের জন্য আমার বিদেশ যাওয়া। তুমি একটু মজবুত হলে আমার আর বিদেশে যাওয়ার দরকার হবে না।
রিফাত ভালোবাসে দীপাকে। দীপা উচ্চাভিলাসী এবং মুখরা স্বভাবের মেয়ে। রিফাত একদিন দীপাকে নানার বাড়ি নিয়ে আসে। নানা আজগর আহমদের চোখে দীপার ব্যতিক্রমী আচার আচরণ ধরা পড়ে। ভাবে এ মেয়েকে রিফাতের বউ করা আনা ঠিক হবে না। আজগর আহমদ রিফাতকে বুঝায়। নানাভাই এই মেয়ে তোমার সঙ্গে যায় না।
কেন নানাভাই?
এ মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি খাপ খাবে না। তার বিলাসিতার যোগান দেওয়া তোমার সাধ্যের বাইরে চলে গেলে সুখ বলে কিছু থাকবে? তোমার জীবনে যা করবা তার সব মেয়েটির পিছনে বিলিয়ে দিতে হবে।
নানাভাই নিজেকে অন্যের জন্য বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা। আমি দিপাকে ভালোবাসি। রিফাতের কথা শেষ করার আগেই আজগর আহমদ উত্তর দেন। তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি। তুমি যা করতে চাচ্ছ সেটা আবেগের উচ্ছ্বাস। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। রিফাত কোন যুক্তি দিয়েই নানাকে বুঝতে পারে না। আজগর আহমদ পুরো বেঁকে বসেন। দিপাকে সে নাতির জীবনসঙ্গী করতে চান না। কথাটা দীপা জানতে পারে। অহংকারে আঘাত লাগে, আক্রোশে ফেটে পড়ে। দীপা রিফাতের পরিবার নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। সেগুলো সৌজন্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তোমার পরিবার আবার পরিবার হলো! তোমার মা ভালো? ভালো হলে বিদেশে থাকে? দেখো কাউকে নিয়ে ফস্টিনস্টি করছে হয়তো!
রিফাত স্তম্ভিত। তোমার সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে নানাভাইয়ের অমত ছিল এটা ঠিক। আমি কিন্তু নানাভাইয়ের মত পরিবর্তন চেষ্টা করেছি করছিলাম। আমি তোমাকে ভালবাসি তোমাকে জীবনসঙ্গী করব, কিন্তু তুমি যে কথা বলছো তাতে তোমাকে বিয়ে করা যায় না। আমার মা জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছে আমার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। আর সেই মাকে নিয়ে তুমি অসংযত কথা বলছো! আমি তোমাকে ভালবাসি সেই ভালোবাসার যন্ত্রণা আজীবন বয়ে বেড়াবো। কিন্তু তোমাকে জীবন সঙ্গী করা সম্ভব হবে না। ক্রোধোন্মত্ত দীপা আঘাতের পর আঘাতে বিপর্যস্ত করতে থাকে রিফাতকে।
তোমার বাবাও তো খুব একটা ভালো মানুষ ছিল না। ভালো হলে তোমার মাকে তালাক দেয়? তোমার বাবা-মা দু’জনের একজনও ভালো না।
দীপা পরিবার নিয়ে কথা বলোনা। আর পরিবার নিয়ে কথা বলার সাহস পাও তুমি কী করে?
নোংরা পরিবার নিয়ে কিছু বলতে আবার সাহস লাগে? তোমার বাবা ভালো? তোমার মা ভালো? ভালো হলে দু’জন আলাদা হয়?
দীপা তুমি সহ্যের সীমা ছেড়ে গেছো! তোমার কথা আমি সহ্য করতে পারছি না। বাবা-মা আলাদা হইছে সেই দোষ কি আমার? সে কথার খোঁটা তুমি দেবার কে? দীপার প্রতিটি কথা নম্র স্বভাবের রিফাতের অস্তিত্বকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়। রিফাত কিছুতেই মায়ের অপমান ভুলতে পারে না। দীপা কেন তার মাকে নিয়ে অপমানজনক কথা বলল। দীপার অশালীন কথা গুলো সারাক্ষণ তার কানে বাজতে থাকে। সে খেয়ে শান্তি পায় না ঘুমিয়ে শান্তি পায় না, উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরতে থাকে।
যে মা তার জন্য এত কষ্ট করল। ভালোবাসার মানুষ তার মাকে অপমান করল। দীপার কাছে ছুটে যায়। দীপা তুমি কেন? আমার মাকে নিয়ে এমন অপমান করে কথা বললে?
আমি যা বলছি সত্যি বলছি। মিথ্যা কোন কথা বলিনি।
দীপা আমি যে প্রচন্ড অশান্তিতে ভুগছি আমার মুখ দেখে তুমি তা বুঝতে পারবে। যে আমি কতটা অশান্তিতে আছি। তুমি সেটা বোঝোই নেই। বরং আরো চ্যাটাং চ্যাটাং করে কথা বলছো।
তোমার নানার কী করে সাহস হলো আমাকে প্রত্যাখ্যান করার! আমার কী নাই? কোন দিক দিয়ে আমি তোমাদের চেয়ে ছোট? যে নাকি মেয়েকে বিদেশ পাঠিয়ে তার উপার্জন দিয়ে দিব্যি জীবনটা পার করে। তার মুখে আবার বড় কথা আসে কোথা থেকে?
রিফাত মরিয়া হয়ে বলে, কাউকে ভালোবাসলে তাকে এত লাঞ্ছনা গঞ্জনা কেউ দিতে পারে? তোমার কথা না শুনলে হয়তো বুঝতে পারতাম না।
রিফাত বাড়ি ফিরে কারো সাথে কোন কথা না বলে, রুমের দরজা বন্ধ করে। সে রুম থেকে আর বের হয় না। আজগর আহমদ ভাবে কী ব্যাপার নাতি আমার বের হচ্ছে না কেন? আর দরজা এভাবে বন্ধ কেন? অনেক ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকির পরও দরজা খুলে না। আজগর আহমদ দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে দেখেন নাতির ঝুলন্ত লাশ! তাঁর চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়। মর্জিনা খবর পেয়ে দেশে ছুটে আসে। বুক চাপড়ে বলতে থাকে, বাবা জীবনটা আমার বিদেশে পার করলাম তোর জন্য। সেই তুই আমাকে ছেড়ে চলে গেলি! তুই ছিলি আমার বেঁচে থাকার একমাত্র উপলক্ষ। পোড়া জীবনে আমার একমাত্র আশার আলো। আলোহীন অন্ধকার জীবন নিয়ে মর্জিনা চলতে থাকে। শুরু হয় মহাসমাপ্তির উদ্দেশ্যে মর্জিনার দ্বিতীয় যাত্রা।