insert-headers-and-footers
domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init
action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121ইউসুফ সিকদার শামীম- সিডনি থেকে : ২০২৪ সালে জনগণের দীর্ঘকালের ক্ষোভ-আকাঙ্ক্ষা একত্রিত হয়ে রূপ নেয় একটি ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে। ৩৬ জুলাই ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে জাতি আরেকবার তার অঙ্গীকার উচ্চারণ করে— শোষণ, বৈষম্য ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে অবিচল প্রতিরোধ। এটি ছিল শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক মুহূর্ত নয়, বরং একটি যুগান্তকারী স্পিরিট— “জুলাই স্পিরিট”— যা ভবিষ্যতের পথে চলার জন্য জাতিকে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দেয়।
কিন্তু ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে, জাতির উত্থানকে বাধা দিতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র সব সময় সক্রিয়। অপদার্থ নেতৃত্ব, শিশুসুলভ রাজনীতি এবং রাজনৈতিক হীনমন্যতার কারণে আজও জাতি বিভক্ত, বিভ্রান্ত। কিছু ব্যক্তি ব্যক্তিস্বার্থে, দলীয় সংকীর্ণতায় ও ক্ষমতার লোভে দেশের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনছে।
বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের নতুন রূপে আবারও আবির্ভূত হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক গোষ্ঠীর নানা মুখোশধারী চরিত্র। দেশে-বিদেশে নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক কিংবা পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারে তারা জড়ো হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করছে নিজেদের স্বার্থে। একটি ভয়ঙ্কর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি আলোচিত হয়ে ওঠেন অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত বোরহানউদ্দিন আহমেদ। স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও তাদের দোসররা নতুন রাষ্ট্রদূত দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এই ষড়যন্ত্রগুলির মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ ব্যাবহারের ব্যাবহার করে তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চায়। মূলত, পতিত স্বৈরাচারের ভারতে পলায়নের পর এই গোষ্ঠী কিছুটা গা ঢাকা দিয়েছিল। কিন্ত রাষ্ট্রদূত বোরহানউদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের পর পর এই গোষ্ঠীর তৎপরতা বাড়তে থাকে এবং তাদের একাধিক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতকে হাস্যজ্বলভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এতে করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে। প্রবাসীরা জানতে চায়, এটি কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা, নাকি প্রবাসে ঘাপটি মেরে থাকা রাজনৈতিক আমলাতন্ত্রের ছায়াচক্র? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া জরুরি, কারণ দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় এসব রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধির নিরপেক্ষতা ও দূরদর্শিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক শাহে জামান টিটুর উদ্যোগে সম্প্রতি দুটি ব্যবসায়িক সংগঠনের ব্যানারে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনে অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিন এবং কনসাল জেনারেল মো. শাখাওয়াত হোসেন সরবভাবে অংশগ্রহণ করেন, যা কমিউনিটিতে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা এবং সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ যখন আলাদাভাবে অস্ট্রেলিয়া সফর করেন, তখনও শাহে জামান টিটুর তত্ত্বাবধানে বিশেষ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। গত ১৫–১৬ বছর ধরে অস্ট্রেলিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনকে আওয়ামী লীগের কার্যত প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের এমন কোনো অনুষ্ঠান নেই যা সেখানে পালিত হয়নি, এমন কোনো জাতীয় বা দলীয় দিবস নেই যা রাষ্ট্রদূত বা কনসাল জেনারেল আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করেননি।বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল সিডনি এবং বাংলাদেশ দূতাবাস ক্যানবেরাকে বারবার লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এখনো নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রচারসামগ্রী অপসারণ করা হয়নি। বিষয়টি থেকেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়—প্রশাসনের নিরপেক্ষতা রক্ষায় একটি গুরুতর ব্যত্যয় ঘটেছে। যদিও এই লেখাটি প্রকাশের পর তড়িঘড়ি করে সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট মুছে ফেলা হতে পারে, তবে সংরক্ষিত স্ক্রিনশট এই অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিন ও কনসাল জেনারেল মো. শাখাওয়াত হোসেন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এই কর্মকাণ্ডের পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং এমিরেটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামান। তিনি স্বয়ং আওয়ামী লীগের আয়োজনকৃত দুটি বিজনেস ফোরামে অংশগ্রহণ করেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন এবং হাস্যোজ্জ্বল ছবির জন্য পোজ দিয়েছেন। সূত্র বলছে, ভবিষ্যতেও তিনি আওয়ামী-ঘনিষ্ঠ বিজনেস ফোরামগুলোকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করবেন। এখানেই প্রশ্ন উঠছে—প্রফেসর আনিসুজ্জামান আদতে কোন আদর্শের অনুসারী? কেউ বলেন তিনি জামায়াতপন্থী, কেউ বলেন আওয়ামী ঘরানার, আবার কেউ বলেন তিনি তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি।
সিডনি ও ক্যানবেরায় অবস্থিত অফিসগুলো এই রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে অত্যন্ত সক্রিয় ও তৎপর ছিল। এখন সময় এসেছে—এই অপব্যবহার ও পক্ষপাতিত্বের জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং সংশ্লিষ্টদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর। এই প্রেক্ষাপটে "জুলাই স্পিরিট" আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়— ব্যক্তি বা দলের পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠাই হোক আমাদের লক্ষ্য। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনে, একটি সৎ, সমন্বিত অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থাই হতে পারে একমাত্র উত্তরাধিকার। আজকে সময়ের দাবিই হচ্ছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের আড়ালে লুকানো অগণতান্ত্রিক চরিত্রগুলোকে চিহ্নিত করে উপযুক্ত স্থানে উপযুক্ত মানুষকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া। এজন্যে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি এখনি এই বিষয়ে সচেতন না হয়, তাহলে আমাদের অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতা অচিরেই ষড়যন্ত্রের করাল গ্রাসে পতিত হবে। আমরা আশাকরি,
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এই বিষয়ে এখনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।