Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
আমার ভূবনে নেই তুমি-সুলেখা আক্তার শান্তা – Pratidin Sangbad

আমার ভূবনে নেই তুমি-সুলেখা আক্তার শান্তা

 

প্রতিদিন ডেস্ক:
প্রতিদিন একই কাজ করে রাফি। রাফি সময় হওয়ার
আগেই চলে আসে। দীর্ঘ সময় পথ চেয়ে অপেক্ষা করে
নাহিদার জন্য।
নাহিদা বলে, রাফি তুমি সময় মত আসবে তার আগে
এসে কেন আমার জন্য অপেক্ষা করো?
রাফি বলে, তোমার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা সেকি যে
আমার কাছে আনন্দ, তা তোমাকে বলে, বুঝাতে পারবো
না।
হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না?
কিন্তু জানো আমার মনের মধ্যে পিপাসা ঝড় জাগিত হয়
বাস্তবে কখন তোমার মুখখানা দেখতে পাব!
নাহিদা হাসতে হাসতে বলে, তোমার সঙ্গে আমি লম্বা
কথার তালিকাতে যাব না। চলো চলো তোমার ইন্টারভিউর
সময় হয়েছে।
কতবারই তো আমি ইন্টারভিউ দিলাম কোথাও থেকে তো
চাকরির খবর এলো না। আমার পাশে তুমি ছিলে বলে, চলার
পথে অর্থহীন কষ্টগুলির অনুভব বুঝতে পারিনি! তুমি তো
সমস্ত খরচ চালিয়েছো।
কতবার তোমাকে নিষেধ করেছি, এসব কথা তুমি বলবে
না। এ কথা বলে, তুমি আমাকে ছোট করছ!
তুমি যা আমার জন্য করেছ তাতো আমার বলতেই হবে?
যাক আমরা ঠিক সময়মতোই এসেছি। রাফির এর মধ্যে
ডাক পড়ে ইন্টারভিউর জন্য। রাফি ভিতরে রুমে চলে যায়।
নাহিদা অনেক আশা থাকে যেন এইবারে চাকরিটা হয়ে
যায় রাফির। চাকরি হলে বিয়ের জন্য আর কোনো বাধা
থাকবে না। তখন বাবার কাছে রাফিকে নিয়ে দাঁড়াবো।
নাহিদার সেই আনন্দে মনটা প্রফুল্ল হয়ে আছে। না,
রাফির কোথাও চাকরি হলো না। ভেবেছিলো রাফি নিজের
যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠিত হবে, তার হতে পারলাম না। নাহিদা
বাবা ফরহাদ উদ্দিনের কাছে রাফিকে নিঃস্ব অবস্থায় নিয়ে
দাঁড়ায়। রাফির অবস্থা সম্পর্কে জেনে কিছুতেই
মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হয় না ফরহাদ। রেগে রাফিকে
বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। কেঁদে কেঁদে নাহিদা বলে,
বাবা তুমি তো তোমার মেয়েকে ভালোবাসো? যাতে
ভালো থাকি এ আশাই তো করো?
বোরহান উদ্দিন মেয়ের উক্তিতে বলে, সব বাবা-মা’ই তার
সন্তানের মঙ্গল কামনা চায়? সন্তান সুখে শান্তিতে থাক
এটাই থাকে তাদের চাওয়া-পাওয়া।
বাবা আমার সুখ তখনই হবে যখন তুমি রাফিকে মেনে
নেবে।
আমি তোমাকে বলি, সব প্রদীপ, প্রদীপ না। এ তোমাকে
কখনোই সুখে রাখতে পারবে না। আর আমি দীর্ঘ পথ
চলেছি মানুষ দেখলেই বুঝতে পারে।
নাহিদা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলে, বাবা
আমি যে মনে প্রানে ওকে ভালবাসি। রাফি ছাড়া সূর্য
যে আমাকে আলো দিতে পারবে না। রাফি আমি পালিয়ে
বিয়ে করতে পারতাম, বাবা তোমার সম্মানের দিকে
তাকিয়ে তা করেনি। ফরহাদ উদ্দিন মেয়ের মিনতিতে মন নরম হয়ে যায়। মেয়েকে
বলে, মা তুই যা চাস তাই হবে।
নাহিদা খুশি মনে বলে, বাবা আমি রাফিকে সুখবরটা
দেই। নাহিদা রাফিকে পেয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
জানো বাবা আমাদের ভালোবাসা মেনে নিয়েছে।
রাফি বলে, সত্যি বলছো তুমি?
হ্যাঁ, সত্যি বলছি।
বোরহান উদ্দিনের একটা মাত্র মেয়ে তার। তাকে নিয়ে
অনেক আশা ভরসা। মেয়ের বিয়ে অনেক ধুমধাম করে দেয়।
মেয়ের বিয়ের পর, সব বিষয় সম্পত্তি মেয়ে নাহিদার নামে
লিখে দেয়।
বাবা সব সম্পত্তি তুমি আমার নামে লিখে দিলে কেন?
মারে আমার এই বিষয় সম্পত্তির সবই তো তোর। এর ভার যে
তোকেই নিতে হবে।
বাবা আমি পারবো এর দায়িত্ব নিতে?
তুই পারবি, আমার সেই বিশ্বাস তোর প্রতি আছে। মা
আজ থেকে তোদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
বাবা তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
সব মেয়েদের বিয়ের পর আলাদা থাকতে হয় এতে সম্পর্কও
ভালো থাকে।
বাবা আমি দূরে থাকলে তোমার কষ্ট হবে না?
তুই আমাকে নিয়ে ভাবিসনা। সময়-সুযোগ করে
রাফিকে নিয়ে চলে আসবি।
রাফি অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠেছে। অগাধ সম্পত্তি
পেয়ে রাফি নিজেকেই হারিয়ে ফেলে। সে চক্ষুলজ্জা
ভালোবাসার টানে বাসায় ফিরে আসে। বাসায় এসে
লকিং দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে। নিজের শয়নকক্ষে যায়।
নাহিদা দেখে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। চাদর ধরে ও
রাফি তুমি এখনো শুয়ে আছো, অফিসে যাওনি। চাদর
মুখের থেকে সরতেই দেখে রাফি অন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরে
শুয়ে আছে। তা দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবী তার ভেঙেচুরে
আচ্ছে। যা ছিল তার ধারনার বাহিরে তা ঘটল বাস্তবে।
রাফির ঘুম ভেঙ্গে যায়। নাহিদা বলে, এই ছিল তোমার মনে
একবারও তোমার বুক কেঁপে উঠল না।
রাফি বলে, কেন আমার বুক কেঁপে উঠবে। রাফির এমন
কথা শুনে অবাক নাহিদা। আরে বেইমান, বেইমানি করারও
একটা সীমা থাকে।
তুমি বাসায় আসবে আমাকে বলে তো আসবে?
আমার বাসায় আমি আসবো তাতে বলে আসবো? ও
তাহলে তো ধরা পড়তে না, আর আমাকে বললে, তোমার কাজ
আছে এই তোমার কাজ?
লিজা বলে রাফিকে, এ কখন থেকে বকবক করে যাচ্ছে,
তুমি কিছু বলছো না। ওকে বলে দাও আমি তোমার
ভালোবাসার মানুষ।
নাহিদা বলে, কি তলে তলে এত দূর! থাকবো না আর আমি
এখানে। যত পারিস তুই নষ্টামি কর। এই বলে নাহিদের
যেতে নেয়। রাফি নাহিদাকে ফেরানোর চেষ্টা করে।
লিজা বলে, তুমি ওকে ধরছো কেন?
সম্পত্তি তো কিছুই নেই আমার। ও চলে গেলে সর্বনাশ
হয়ে যাবে আমার।
ওরে স্বার্থবাদী, স্বার্থই বড় হল তোর কাছে? আমার
ভালোবাসা তোর কাছে কিছু না। না, আমি ভালোবাসি লিজাকে, তুই আমার কাছে
কিছুই না। তুই যদি যেতে চাস? তোর সম্পত্তি আমার
নামে দিয়ে চলে যায়।
আমি মরে গেলেও না।
তোকে জীবিত রেখেই তোর নামের সব সম্পত্তি, আমার
নামে করে নেব।
লিজা বলে, রাফি তুমি ওকে ধরে রাখ। আমি ওকে অচেতন
জন্য ইনজেকশন নিয়ে আসি। লিজা এরপরে ঠিক তাই
করে।
নাহিদার গায়ে ইনজেকশন পুশ করে। নাহিদা এতে জ্ঞান
হারিয়ে ফেলে। নাহিদার সম্পত্তি সব এক এক করে রাফি
নিজের নামে করে নেয়।
নাহিদা বলে, রাফি তুমি আমার গায়ে আর ইনজেকশন পুশ
করো না আমি পারছি না এর যন্ত্রণা সইতে। রাফি তুমি
আমাকে একটু বাঁচতে দাও। আমার মুখ থেকে একবারও
উচ্চারিত হবেনা তুমি আমায় রেখে অন্য কেন
ভালোবাসো। তোমার পাশে আমাকে একটু ঠাই দাও।
তুমি যা করো এই চোখ দিয়ে দেখবো মুখ ফুটে বলবো
না তোমায় কিছু। নাহিদা অসহায়ের মতো কথাগুলি বলে
রাফিকে।
লিজা বলে, ওকে বিশ্বাস করা যায় সুস্থ হয়ে ও কিছু
ব্যবস্থা নিবে না।
তোমার কথাই ঠিক।
নাহিদা বলে, তুমি আমার কথা শোনো। আমার এই দুটি
হাত আছে তোমার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার
জন্য। আমার দুটি পা আছে তোমার জন্য হেঁটে যে ভালো
কিছু করার জন্য। আমার যে অন্তর আছে তা শুধু তোমাকে
ভালোবাসার জন্য। ফরহাদ উদ্দিন মেয়ের খোঁজ না পেয়ে বাসায় আসে। এসে
দেখে মেয়ে শুয়ে আছে ফ্লোরে। দেখে মুখখানা খুব মলিন
লাগছে মেয়ের। কিরে মা তোর এই অবস্থা কেন? আর
আমাকে কেন জানস নি? লিজাকে দেখতে পায় খাটে
রাজরানী মতো বসে আছে। লিজা চোখ-মুখ কুচকিয়ে
রাখে বোরহান উদ্দিন কে দেখে। নাহিদা বলে, বাবা আমার
খাটে শুতে ইচ্ছে করেনা তাই আমি ফ্লোরে শুয়ে আছি।
লিজার পরিচয় দিতে নেয়, বাবা ও হচ্ছে, এরই মাঝে রাফি
এসে পড়ে। রাফি বলে, ও হচ্ছে আমার ছোট বোন। নাহিদা
মনে মনে বলে, মিথ্যা কথা বলার ভালো পারদর্শী। ফরহাদ উদ্দিন
মেয়েকে বলে, মা তুই আমার সাথে চল। কয়েকদিন বেরিয়ে
আসবি।
বাবা এখন না। শরীরটা সুস্থ হলে তারপরে যাবো। নাহিদা
ভাবে বাবা যদি কোনো মতেই আমার বর্তমান
পরিস্থিতির কথা জান, নির্ঘাত বাবা কিছু একটা করে
ফেলবে।
ঠিক আছে নিজের প্রতি খেয়াল রাখিস। আমি এখন
চলি।
নাহিদা বাকি সম্পত্তি দিতে অনীহা জানালে। রাফি
নির্যাতন আরো বায়িয়ে দেয় নাহিদকে। যন্ত্রণা নাহিদা
ছটফট করে। তা দেখে ঘরের কাজের লোক আব্বাস সহ্য
করতে পারে না। আব্বাস বলে, নাহিদাকে ভাবী আপনাকে
এখান থেকে পালাতে হবে। নাহিদা অবাক দৃষ্টিতে
আব্বাস দিকে তাকিয়ে থাকে। এখান থেকে পালানোর
ব্যবস্থা করব আমি। পরে আপনি সুস্থ হয়ে এর প্রতিশোধ
নিবেন। নাহিদা ভাবে বাবার কাছে গেলে হয়তো রাফি নতুন ফন্দি করে আমাকে সেখান থেকে নিয়ে আসবে।
নাহিদা আব্বাসের কথামতো আব্বাসের গ্রামের
বাড়িতে যায়।
রাফি তৃতীয় বিয়ে করে এনিকে। রাফি এখন লিজাকে
বিরক্ত মনে করে। রাফি বলে, নাহিদার সম্পত্তি আত্মসাৎ
করেছি তার সাক্ষী হয়েছিস তুই। লিজাকে বাসা থেকে
বের করে দেয়। লিজা কোথাও যাওয়ার জায়গা না পেয়ে
বাসার গেটের সামনে বসে থাকে। সুস্থ হওয়ার পর
নাহিদার মনের মধ্যে প্রতিশোধ আগুন জ্বলে ওঠে। সে
রাফির কাছ থেকে তার সম্পত্তি বুঝে পেতে আসে। লিজা
হঠাৎ নাহিদাকে দেখে অবাক হয়। নাহিদাকে বলে, আপনার
সঙ্গে অন্যায় করেছি সেই পাপের প্রতিফল এখন পাচ্ছি।
নাহিদা বলে, তুমি তোমার পাপ বুঝতে পেরেছ, এটাই
তোমাকে সত্যের পথে চলতে শিখাবে। নাহিদা বাসার
ভিতরে ঢুকলে লিজা পিছনে পিছনে যায়। নাহিদাকে
দেখে রাফি বিদ্যুৎ চমকে চমকে যায়!
ভাবছো কোথা থেকে আমি আসলাম! মানুষ বেঁচে
থাকলে দেখা হয়। এখন আমি আমার সম্পত্তি চাই?
রাফি বলে, একবার যে জিনিস হাতছাড়া হয় তার আর ফেরত
পাওয়া যায় না। তুমি ফেরত পাবে না তোমার সম্পত্তি।
আমি আইনের ব্যবস্থা নিব।
তোমার যা ইচ্ছা তা তুমি করো, এরপর নাহিদার হাত
থেকে দলিল টেনে নেয়। এমন সময় লিজা রাফির পেটের
মধ্যে ছুরি ঢুকিয়ে দেয়।
নাহিদা বলে, যাকে ভালোবেসে আমার কাছ থেকে দূরে
চলে গিয়েছিলে। আজ তার হাতে হল তোমার মরন।
আমাকে বাঁচাও আমাকে বাঁচাও বলতে, বলতেই মৃত্যুর
কোলে ঢলে পড়ে রাফি। ভালোবাসায় সুখের চেয়েও দুঃখ
কেন বেশি? হায়রে ভালোবাসা, তাহলে ভালোবাসার অপর
নাম কি দুঃখ!

কবি- সুলেখা আক্তার শান্তা