Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
অনুভবের অন্তরালে-সুলেখা আক্তার শান্তা – Pratidin Sangbad

অনুভবের অন্তরালে-সুলেখা আক্তার শান্তা

প্রতিদিন সংবাদ ডেস্ক:

প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখার জন্য মনের মধ্যে একটা অনুভূতি সৃষ্টি করে। প্রিয় মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার আলাদা একটা ভাব জাগ্রত হয়। অভিভূত উক্তিতে দিয়া বলে, রিয়াদ দেখো তারা গুলো কেমন দূর গগন থেকে মিটমিট করে তার সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে চারিদিক। তোমার হাত ধরে যখন প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখি, তখন মনে হয় যেন আমি সুখের স্বর্গ পেয়েছি।
রিয়াদ বলে, এ হচ্ছে ভালোবাসা আর প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি তার আবির ভাব জেগে ওঠা। প্রিয় মানুষ কাছে থাকলে তা পূর্ণতা লাভ করে। যেমন তোমার হৃদয়ের এখন ভাব প্রকাশিত হয়েছে। দু’জন একসঙ্গে গগনের দিকে তাকিয়ে রয়। এ যেন দু’জনের এক প্রাণ। একসাথে চলার প্রাণশক্তি।
আচ্ছা দিয়া বলতো তোমায় ছাড়া কাটেনা কেন আমার এক মুহুর্ত? থাক তোমার বলতে হবেনা। আমি বলছি, তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি তাই তোমায় রেখে দূরে থাকতে পারিনা। আর পারবোনাও তোমায় ছেড়ে থাকতে।
ভালো বাসে ভালোবাসার মানুষকে কাছে পাওয়ার জন্য দূরে রাখার জন্য নয়।
রাতে চাঁদ ওঠে এই জন্যই আলোর ভিন্ন রকম অনুভূতি ছড়ায়। চাঁদ বিলিয়ে দেয় তার সুন্দর্য নিঃস্বার্থভাবে। দেখো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে কখনো রংধনু আড়াল হয়ে যাচ্ছে। দিয়া তুমি কখনো আমায় ছেড়ে চলে যাবে না তো?
দিয়া উৎফুল্ল হয়ে বলে, আমার হৃদয় তোমায় ছাড়া বোঝে না কিছু। এই পৃথিবী তুমি ছাড়া হয়ে যাব যে আমি হৃদয় বিহীন। এবার চলো ফিরে যাই।
যেতে ইচ্ছে করছে না। কবে যে তোমার আমার চলার পথে এক হবে।
দিয়া বাড়িতে ফিরে আসলে, মা নাজিয়া উত্তেজিত হয়ে বলে, এই ঘুরাঘুরি বাদ দাও। তোমার জন্য ছেলে দেখছি।
মা আমি ভালোবাসি রিয়াদকে। কেন তুমি বুঝতে চাওনা!
বেশরম মেয়ে কোথাকার মায়ের মুখের উপর কথা! কাল থেকে তোর ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ। নাজিয়া ফোন নিয়ে নেয় দিয়ার কাছ থেকে। আর বলে, আজ থেকে তোমার বাড়ির বাহিরে যাও বন্ধ।
দিয়া ভালোবাসা মানুষেকে কাছে পাওয়ার পথ বন্ধ দেখে, অস্থির হয়ে পড়ে। সহযোগিতার আশ্রয় নেয় চাচাতো বোন বিথীর কাছে। বিথীকে বলে, তুই পারিস আমাকে সহযোগিতা করতে।
বিথী বলো, কি করতে হবে তোমার জন্য?
আমার খবরা-খবর পৌঁছাই দিবি রিয়াদকে। এই চিঠিটা রিয়াদের হাতে দিবি। খবর পৌঁছানোর জন্য বিথী যায় রিয়াদের সঙ্গে দেখা করতে। রিয়াদের সঙ্গে দেখা হলে, বিথীর হৃদয় চমকে ওঠে। এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষন বিথীকে দিশেহারা করে তোলে। এই উজ্জ্বল প্রদীপ সৌন্দর্যের মানুষকে আমি কখনোই হাতছাড়া করবো না। একে আমি করব আমার জীবনসঙ্গী। বিথী দিয়ার কথা না বলে, নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে রিয়াদের কাছে। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। জানিনা এখন তুমি কি করবে।
আকর্ষণীয় বিথীকে দেখার পর রিয়াদও পাল্টিয়ে যায়। মুহূর্তেই ভুলে যায় দিয়াকে। বিথীকে বলে, তুমি যে আমার হৃদয় কেড়ে নিয়েছো।
তাহলে তুমি দিয়াকে কি বলবে?
কি বললে তুমি খুশি হবে?
আমার যেমন তোমাকে ভালো লেগেছে তোমারও তো আমাকে ভালো লেগেছে। তাহলে দু’জনের আমরা এক ভালোবাসার স্রোতে চলবো। তোমার দিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের দরকার নেই যা বলার আমি বলবো। এরপর বিথী চলে আসে। এসে দিয়ার কাছে কোনকিছুই বলে না।
দিয়া জানতে চায় বিথীর কাছে রিয়াদের ব্যাপারে।
বিথী বলে, ও বলল, আজ রাতে তোমাকে নিয়ে সে পালাবে। টাকা-পয়সা ব্যবস্থা করে নিয়ে যেতে বলল।
ঠিক আছে, আমি যা পারি ব্যবস্থা করতে, তোর কাছে দেবো। তুই ওকে দিয়ে আসবি। আমি পরে সুযোগ বুঝে বের হব। দিয়া সরল বিশ্বাসে বোন বিথীর কাছে মায়ের জমানো টাকা স্বর্ণ অলংকার তুলে দেয়। দিয়ার টাকা গহনা নিয়ে বিথী আর রিয়াদ পালিয়ে যেয়ে বিয়ে করে।
দিয়া পরবর্তীতে জানতে পারে রিয়াদ আর বিথী তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আরে বেঈমান বিশ্বাসঘাতকতার করার একটা সীমা থাকে। তোদের কোন সীমা নেই। তোদের মত বেঈমানের সঙ্গে আর যেন আমার দেখা না হয়।
নাজিয়া এরপর মেয়েকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় কিন্তু দিয়া বিয়ে করতে রাজি হয় না। দিয়া বলে, যাকে ভালোবাসলাম তাকেই পেলাম না আর কাউকে মনে স্থানে দেবো না। এভাবেই একা কাটিয়ে দেবো বাকি জীবন। স্থির করে ফেলে বাকি জীবন একাকী থাকার। নাজিয়া মেয়েকে কোন ভাবেই বিয়েতে রাজী করাতে পারে না। বলে, থাক যেভাবে তোর থাকতে ইচ্ছা করে সেভাবেই থাক।

দিয়া অনেকদিন সঙ্গী ছাড়া একাকী থাকতে থাকে। দিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয় নাদিমের। দিয়ার ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে নাদিম। নাদিম ভালোবেসে দিয়াকে, কিন্তু দিয়া ভালবাসেনা নাদিমকে। দিয়া ভাবে একবার ভালোবেসে যে আঘাত পেয়েছি আর সেই ভালোবাসার সঙ্গে জড়াতে চাই না। নাদিমকে কিছুতেই সরাতে পারে না। নাদিম বলে দিয়াকে, আমার কি অপরাধ? কেন তুমি আমার ভালবাসা প্রত্যাখ্যান করছো? ভালোবাসা তো অপরাধ নয়। নাদিম ভালোবাসা পাওয়ার আগ্রহে জোরাজুরি দেখে দিয়া তার প্রথম ভালোবাসার কথা খুলে বলে। তা শুনে নাদিম বলে, পৃথিবীর সব মানুষ তো আর এক রকম নয়। একবার তুমি আমাকে ভালোবেসে দেখো। ঠকবেনা তুমি। যদি ভালোবাসার মাপকাঠি থাকতো তোমাকে আমি মেপে দেখাতাম কতটা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
দিয়া কোন ভাবেই তার জীবন থেকে নাদিমকে সরাতে পারে না। নাদিম ও নাছোড়বান্দা দিয়ার কাছ থেকে ভালোবাসা না পেয়ে ছাড়বেনা।
নাদিমের ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা দেখে দিয়ার মনে ভালোবাসা উন্মেষ ঘটে। ভাবে এক মানুষকে দিয়ে তো আর সবাইকে বিবেচনা করা যায় না। যে ভালোবাসা আমি ব্যথিত হয়েছি তা নাদিমের ভালোবাসায় পূর্ণ হবে। দিয়া নতুন করে ভালোবাসার স্বপ্ন বুনে। দিয়ার জগতে এখন শুধু নাদিম।
নাদিম বলে, জানো দিয়া তোমার ভালোবাসা না পেলে আমার জীবন যেতে বৃথা হয়ে। এখন আমাদের দু’জনের এক ভাবনা এক উপলব্ধি।

নাজিয়া মেয়েকে বলে, তোকে আর আমি কিছু বলবো না। তোর যেমন চলতে ইচ্ছে করে তুই তেমন চল। বারণ করলে তো তুই শুনবি না। এখন তুই বড় হয়েছিস ভালো মন্দ বুঝিস।
মা আমি তোমার কথা বুঝি তুমি কি বলতে চাচ্ছো? আমার মনটা মরে গিয়েছিলো তা জাগিয়ে তুলছে নাদিম। ওকে অনেক বার আমি দূরে সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু ও অন্যদের মত না। ওর ভালোবাসা আমাকে আবার উজ্জীবিত করে তুলেছে। আমি ফেরাতে পারলাম না ওকে।
হয়েছে হয়েছে আর গুনোগান গাইতে হবে না। বাস্তব জীবন আবেগ দিয়ে চলে না।
দিয়া নাদিমকে বলে, জানো তুমি যদি আমার জীবন থেকে কখনো হারিয়ে যাও? তুমি আমি একসঙ্গে যে পথ চলেছি। সেসব জায়গায় আমি একা একা চলবো তোমার স্মৃতি নিয়ে। আর কাঁদবো।
তুমি কি যে বলোনা! এসব কথা আর একবারও মুখে উচ্চারিত করবে না।
ঠিক আছে, ঠিক আছে, আর বলবো না। বাবা কেমন করে উঠলে তুমি! এমন হোক আমিও চাই না।
আমার জীবনে তুমি ছাড়া অন্য কাউকে চাই না। অন্য কাউকে পাওয়ার ইচ্ছাও নেই।

নাদিম হঠাৎ দিয়ার সঙ্গে দেখা কম করে। দিয়া জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার তুমি ইদানিং আমার সঙ্গে তেমন দেখা করছ না। আগে তুমি আমার ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। ক্লাস শেষ হওয়ার পর আমাকে নিয়ে তুমি একসঙ্গে ঘুরতে। এখন তুমি আমার ভার্সিটির সামনে আসো না? আমার সঙ্গে দেখা করো না? আমি যে তোমার অপেক্ষায় থাকি, আমার মন তোমার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে। নাদিমের একটু একটু করে দূরে সরে যাওয়া, এতে দিয়ার মন ব্যথিত হয়। আগে যেমন নাদিম দিয়ার সঙ্গে দেখা করার জন্য উতলা হয়ে থাকতো, এখন আর নাদিমের মধ্যে সেই উতলা নেই। দিয়া এতে ব্যথিত আবেগঘন কথা বলে নাদিমকে। সেই দরদের উতলা নাদিমের মধ্যে এখন আর নেই।
নাদিমের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। সেই কথা দিয়া জানতে পেরে জিজ্ঞেস করে নাদিমকে।
নাদিম বলে, হ্যাঁ আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।
তুমি আমার সঙ্গে সম্পর্ক করে অন্য জায়গায় বিয়ে করছো!
অবাক করে দিয়ে নাদিম বলে, তুমিও বিয়ে করে নাও কাউকে।
একটা সম্পর্ক তুমি কি মনে করো, চাইলেই সম্পর্কটা ভেঙে দেওয়া যায়? তুমি যত সহজে আমাকে কথাটা বলে দিলে, আমার কাছে তো এত সহজ না ব্যাপারটা! একদিন তুমি বলেছিলে আমাকে ছাড়া তোমার পৃথিবী অন্ধকার, এখন তাহলে আমাকে ছাড়া তোমার আলোর পৃথিবী হয়ে গেল?
কাউকে প্রেমে পড়াতে গেলে এমন বলতে হয়, যখন যা বলেছি ভুলে যাও। বাস্তব তুমি মেনে নাও।
আমি তোমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।
তাদের কাছে তুমি আমাকে ছোট করবে? এতে ভালো হবে না তোমার।
দিয়া অনুনয় করে বলে, দেখো আমার মন তোমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না! তোমাকে ছাড়া আমার মরণ যে ভালো! দিয়া কিছুতেই নিজের মনকে বুঝাতে পারেনা। নাদিমের আশ্চর্য পরিবর্তন এতে দিয়া হতাশার গ্লানিতে আটকে যায়।

নাদিমের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করতে না পেরে দিয়া নাদিমের বাড়ি যায়। দেখে নাদিম বর বেশে বিয়ে করতে রওনা দিচ্ছে। ব্যথিত আপ্লুত হয়ে দিয়া বলে, নাদিম তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারো না! নাদিমের বাবা আতিক বলে, এই মেয়ে তুমি আমার ছেলের সঙ্গে এভাবে কেন কথা বলছ?
আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করুন আমি কে?
নাদিম বলে, আমি ওকে চিনি না!
দিয়া কোন মুখ নিয়ে কথা বলবে, যার বল শক্তিতে কথা বলবে সেই বলছে চেনে না! অপমান লাঞ্ছিত হয়ে দিয়া ফিরে আসে বাড়ি। বাড়িতে এসে মাকে জড়িয়ে কান্না করে। মা আমার জন্য যে পৃথিবীতে ভালোবাসা নেই। আমার জীবনে কেন ভালোবাসা আসে? যে আমার কেউ না তার জন্য কেন আমার হৃদয়ে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এরপর দিয়া মায়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
নাজিয়া মেয়েকে সান্তনা দেয়। দিয়ার তাকানো দেখে, কিরে মা তুই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
মায়ের কথায় দিয়া কোন উত্তর দেয় না।
নাজিয়া বলে, এই দিয়া কথা বল?
দিয়া আত্ম চিৎকার দিয়ে বলে, মা তুমি আমাকে তোমার বুকে জড়িয়ে রাখো।
দিয়া তোর কান্না যে আমি আর সইতে পারিনা। কোন কিছুতে ভেঙ্গে পড়তে নেই মা। আমি তোকে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেবো।
আমার জীবনে আর কোন ছেলের দরকার নেই!
এইসব বাদ দে, যে তোর না তুই তার জন্য কেন কাঁদবি!

নাজিয়া সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে, দিয়া ঘুম থেকে উঠছে না। ভাবে থাক ঘুমিয়ে থাকলে আজেবাজে চিন্তা আসবেনা। অনেক বেলা হয়ে যায় দিয়া ঘুম থেকে উঠে না। নাজিয়া বলে, মেয়েটা তো নাস্তা পানি কিছুই খেলো না। দিয়াকে ডাকলে কোন সাড়াশব্দ পায়না। এরপর দেখে দিয়ার মাথার কাছে বিষের শিশি। মুখের ফেনায় বালিশ ভিজে আছে। নাজিয়া মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বলে, কেন আমাকে রেখে দুনিয়া থেকে চলে গেলি। এ কেমন ভালোবাসা একজন ভালোবাসার জন্য পৃথিবী থেকে চলে যাবে আরেকজন পৃথিবীতে পরম সুখে করবে বসবাস! মা আমার বুক শূন্য করে চলে গেলি ভালোবাসার জন্য! একবারও ভাবলি না মায়ের কথা। আমি এখন তোকে ছাড়া কি নিয়ে বাঁচবো!

লেখক-সুলেখা আক্তার শান্তা