Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
পথভ্রষ্ট ভালোবাসা-সুলেখা আক্তার শান্তা – Pratidin Sangbad

পথভ্রষ্ট ভালোবাসা-সুলেখা আক্তার শান্তা

রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা বাড়ি। সেই বাড়িতে রুহুল আমিনের পরিবার নিয়ে বসতি। রুহুল আমিন সাদাসিধা মানুষ। তার তেমন কোন চাওয়া পাওয়া নেই। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তাঁদের সংসার। বউ রাহেলা আধা পাগল। মন চাইলে ঘর সংসারের কাজ করে না চাইলে নাই। সে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকে না। নিজের কাপড়ের ব্যাগ গোছানোই থাকে। সেটা বগলদাবা করে এ বাড়ি ও বাড়ি ছুটে। পাগল মানুষ মনে যখন যা আসে তাই বলে ও করে। বলে, আমার কোন ঘর সংসার নাই, কোন ছেলে মেয়ে নাই। আরো নানা ধরনের কথা। মানুষ শুনে খুব মজা পায়। অনেকে তাঁর সঙ্গে মজা করতে জোর করে বসায়। আবোল-তাবোল কথা মনোযোগের ভঙ্গিতে শোনে। রাহেলাও উৎসাহ পেয়ে কথা বলতে থাকে। কথা বলতে বলতে মনে হল বাড়ি যাওয়া দরকার। ছেলে, মেয়ে না জানি কি করছে! সেই মুহূর্তে দিলো বাড়ির দিকে ছুট। এসে দেখে স্বামী রান্না করছে। নিজেই আবার স্বামীকে বলবে, তুমি রান্না করতেছ কেন? আমি থাকতে। রুহুল আমিন বলেন, আমার রান্না করতে সাধ জাগছে তাই রান্না করতেছি। রাহেলা ভালো মানুষের মতো বলেন, থাক তুমি যাও। আমি রান্না করি। তারপর রান্নাবান্না শেষ করে স্বামী, ছেলে, মেয়ে নিয়ে খেতে বসে। রাহেলা পাগল হোক আর যাই হোক সে কখনো কারো বাড়ী কিছু খায় না। তাঁর খেতে ইচ্ছা করলে বাড়ীতে এসে খায়। জীবন এগিয়ে চলে সঙ্গতি অসঙ্গতি নিয়ে।
আশিক, রুনা বড় হয়েছে। ঘর সংসারের কাজ এখন বাবা মাকে করতে হয় না। রুনাই সব কাজ সামলে নেয়। বাবা ক্ষেত খামারে কাজ করে। কাজ থেকে ফেরার আগে বাবার গামছা লুঙ্গিসহ প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে রাখে। বাবা এসে দাওয়ায় বসে একটু বিশ্রাম নেয়। গোসল সেরে এসে খেতে বসে। মেয়েকে বলেন, মা তুই রান্না করিস তাই চারটা খেতে পারি। তোর মা তো স্বাধীন চেতনার মানুষ। কখন কোথায় যায়, কি করে সে নিজেই জানে না। বাবা, সেই ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি মা এমন। যখন কিছু জানি না বুঝি না তখন থেকেই তো দেখছি। তুমি বাইরে সামাল দিয়েছো আবার ঘর সংসার সামলে নিয়েছো। আমাদের জন্য সবকিছুই করছো। তোর মা কোথা থেকে কখন ফিরে। তার জন্য খাবারটা রেখে দিস। সেটা তোমাকে বলতে হবে না বাবা, সব সময় মার খাবার আলাদা করে রাখি। এসে যাতে খেতে পারে।
ছেলে আশিক হয়েছে মায়ের মতো উদাসীন। ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া তার যেন কোন কাজ নাই। বন্ধু কবিরের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব। সব সময় বন্ধুর কাছে গিয়ে পড়ে থাকে। কবির বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আদর আহ্লাদের শেষ নাই তার। বাবা মায়ের কাছে আবদারে যখন যা ইচ্ছা করে তাই সে পায়। নতুন কাপড় চোপড় কেনা তার শখ। বাবা মাও তার ইচ্ছা পূরণে দাঁড়িয়ে থাকে এক পায়ে। কবির অবশ্য লেখাপড়ায় মনোযোগী। কবির আশিকের বন্ধুত্ব প্রাইমারি স্কুল থেকে। আশিক পিতার আর্থিক অবস্থার ভাল না থাকার কারণে প্রাইমারির গন্ডির বেশি এগোতে পারিনি। ছাত্র হিসেবে সে ভালই ছিল। পরিস্থিতির কারণে লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কবির প্রাইমারি পার হয়ে কলেজ পর্যায়ে গেলেও তাদের বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে। কবির পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু আশিক সব সময় আসে বন্ধু কবিরের কাছে। কবিরের চাচাতো বোন ভাবনা কলেজে পড়ে। দেখতে বেশ সুন্দরী। বন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে আশিকের সঙ্গে ভাবনার দেখা সাক্ষাৎ হয়। পৃথিবীতে যেসব বিষয় সম্ভব অসম্ভবের বাধা মানে না আবেগ মনে হয় তার একটি। আর সেটাই হয়তো যৌবনের ধর্ম। তেমনি অসম্ভব এক অনুভূতি তাড়িত করে আশিককে। ভাবনার জন্য মনটা তার তোলপাড় করে। চেষ্টা করেও নিজেকে সংযত করতে পারে না সে। ভাবনাকে এক নজর না দেখলেই যেন নয়। ভাবনা কলেজে যাওয়ার পথে এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকে আশিক অন্য কোন কাজের উসিলায়। কিন্তু তার মন্ত্রমুগ্ধ দৃষ্টি থাকে ভাবনার সুন্দর মুখের দিকে। বিষয়টা ভাবনার চোখে পড়ে। একদিন সরাসরি সে আশিককে জিজ্ঞেস করে, আপনি কি আমাকে ফলো করেন? ধরা পরে আশিক ঘাবড়ে যায়। আশিক আমতা আমতা করতে থাকে। তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না। কথার উত্তর যদি না দিতে পারেন আমার পথযাত্রা পথে আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকবেন না। এমনকি আমি যে সময় এই পথ দিয়ে চলবো সেই সময় এই পথে এসে দাঁড়াবেন না। এত কথার পরও আশিকের মুখ থেকে কোন কথা বের হয় না। পরের দিন সেই একই কাণ্ড রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে আশিক। ভাবনা আশিককে দেখতে পেয়ে কোন কথা না বলে কলেজে চলে যায়। ফেরার পথে আশিককে দেখতে পেয়ে কিছু বলবে বলে এগিয়ে যায়। তার আগে আশিক বলে, তোমাকে কিছু বলতে চাই। কি বলতে চান? ভাবনা বিরক্তি নিয়ে বলে। দেখো তোমার জন্য আমার মায়া হয়। তোমাকে না দেখলে আমি একটুও শান্তি থাকতে পারিনা। আশিক এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলে। এসব কি বলছেন আপনি? আমি ভাইয়ার কাছে বলবো। তোমার ভাইকে বললে সে আমাকে মারবে, তুমি কি তাই চাও? মারলে মার খাবেন। তার বোনের দিকে হাত বাড়াবেন আর তার পিটুনি খাবেন না! ভাবনা সত্যি তার ভাইয়ের কাছে এই ঘটনা বলে দেয়। সুমন বোনের মুখে এই কথা শুনে রেগে যায়। পরের দিন বোনের কলেজে যাওয়ার পথে আশিককে দেখতে পেয়ে ধোলাই দেয়। আশিককে মারছে শুনে আশিকের মা ছুটে এসে তাকে ছাড়িয়ে নেয়। ঘটনা জেনে বলে, আমার ছেলে যা করেছে সেজন্য আমি লজ্জিত। তোমরা ওকে ক্ষমা করে দিও। সুমন বলে, আজকের মতো ছেড়ে দিলাম। আপনার ছেলেকে নিয়ে যান। আর যেন ও আমাদের বাড়ির ত্রিসীমানায় না আসে। বামন হয়ে আকাশের চাঁদ ধরার স্পর্ধা হয় কি করে!
সুমন চাচাতো ভাই কবিরের কাছে গিয়ে আশিকের ঘটনা জানায়। উত্তেজিত হয়ে বলে, তোর কারণে ও এতটা সাহস পেয়েছে। পথের ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ওকে মাথায় তুলে ফেলেছিস। আশিক ভাবনার পথ আগলে দাড়ায় কোন সাহসে? কবির আশ্চর্য হয়ে বলে, কি বলো ভাইয়া! ভাবনা তো আমাকে এ কথা কখনো বলে নাই। কোথায় আমরা আর কোথায় ও। এমন মতিভ্রম ওর হলো কি করে! আমার বোনের দিকে তাকায়! কবির প্রচন্ড আক্রোশ নিয়ে আশিকের বাড়ি যায়। আশিককে যা মুখে আসে তাই বলে। নিচু জাতকে প্রশ্রয় দিলে মাথায় উঠে। তুই আর কখনো আমাদের বাড়িতে যাবি না। আশিককে মেরে আহত করায় বন্ধু কবিরের কোন অনুতাপ নেই। বরং সে বলে কাজটা সঠিক হয়েছে। নানাভাবে সে তাদের বংশ ও অভিজাত্যের গরীমা প্রকাশ করে। আমার বোনকে নিয়ে কোন কল্পনা করে থাকলে তা এখানে শেষ করে দে। ভবিষ্যতে আমার বোনের ছায়াও মাড়াবি না। তোর আমার বন্ধুত্ব এখানেই শেষ। আশিকের বোন রুনা, বৃদ্ধ বাবা অসহায়ের মতো তাকিয়ে থাকে কবিরের দিকে! রুহুল আমিন জানে এই সর্দার বংশের কি ক্ষমতা। যে কোন সময় তার যে কোন কিছু করে ফেলতে পারে। তাদের কাছে রাতকে দিন আর দিনকে রাত করা কোন ব্যাপার না। আশিকের বাবা অনুনয় করে কবিরকে বলেন, আমার ছেলে আর তোমাদের ওদিকে যাবে না। আমি যে করে হোক ছেলেকে ফিরাবো। মার খাওয়া, এত হুমকি শাসানিতেও সে ভাবনাকে ভুলতে পারে না। ভাবনাকে নিয়ে চলে তার স্বপ্নের রাজ্যে একতরফা বিচরণ। সে ভাবতে থাকে, ভাবনা একদিন নিশ্চয়ই অনুভব করবে তার প্রচন্ড ভালবাসা। অর্থবিত্ত তুচ্ছ করে ভাবনা তার ভালোবাসার টানে ছুটে আসবে। বলবে পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়ে আমি তোমাকেই চাই। তোমার ভালোবাসা চাই। মার খাওয়া আহত আশিক কয়েকদিন বিছানায় পড়ে থাকে।
বাড়ির কাছে এক ধনীর দুলাল ভাবনাকে ভালোবাসে। ভাবনাও ভালবাসে তাকে। আভিজাত্য আর বংশ মর্যাদায় দুইজনেই সমান। একদিন আশিক দেখে ভাবনা ফয়সালের হাত ধরে হাঁটছে। আশিকের হৃদয়ে ঝড় উঠে সেই দৃশ্য দেখে। ভাবনার সামনে গিয়ে বলে, ভাবনা তুমি ফয়সালকে ভালোবাসো? আমি কাকে ভালোবাসবো আর বাসবো না সে কথা কি আপনার কাছে বলতে হবে? দেখে বুঝতে পারছেন না? আর হ্যাঁ, আমি ফয়সালকে ভালোবাসি। ফয়সালও আমাকে ভালবাসে। ফয়সাল বলে, তুমি কার কাছে কি বলছো? ওর কথার উত্তর দিতে হবে এমন কোন কথা আছে! ভাবনা বলে, আমার ভাইয়ের মার খেয়েও শিক্ষা হয়নি! আশিক বলে, হাজার আঘাতও আমার মন থেকে তোমাকে মুছতে পারবেনা। আমি বড্ড ভালোবাসি তোমাকে।
ভাবনা ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠে, নিজের দিকে তাকিয়েছো একবার। আমাকে ভালোবাসার কি যোগ্যতা আছে তোমার? আমার বাবার দোতালা বাড়ি, ওরকম একটা বাড়ি করে দেখাও। আমার বংশ উচ্চ শিক্ষিত, ওরকম শিক্ষিত হয়ে দেখাও। আমরা অভিজাত অর্থবিত্ত সম্পন্ন, ওরকম হয়ে দেখাও। তারপরে এসো আমার সামনে। আশিক প্রতিউত্তর দেয়। আমি তোমার বাবার মতো দোতলা বাড়ি হয়তো করতে পারব তবে তা চুরি করে নয়। ওগুলো বেশিরভাগই অবশ্য চুরির টাকাতেই করা হয়ে থাকে। চুরি করে ধরা পড়লে হয় চোর আর ধরা না পড়লে হয় অভিজাত। তোমার বাবার মতো বাড়ি করব তা আমি সৎ উপার্জনে। তা করতে হলে তোমার বয়স চলে যাবে। সে বয়সে আমি তোমাকে দিয়ে কি করব! আশিক বলে, বংশ, শিক্ষা, সেগুলো টাকার জোরে দখল করে রেখেছে অভিজাতরা। ভাবনার কথাতে তীব্র আঘাত। অক্ষমরা কথায় কথায় বক্তৃতা ছাড়ে। তোমার যখন কোন যোগ্যতা নেই, আমাকে নিয়ে দিবা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো। নিজে শান্তিতে থাকো অপরকেও শান্তিতে থাকতে দাও। ফয়সাল বলে, চলো, চলো। এর সঙ্গে কথা বলাই সময় নষ্ট করা। অহংকারে ফয়সালা আর ভাবনা চলে যায়। আশিক ভাবে, যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো, যার জন্য স্বপ্ন দেখবো, সে তো আমার না। এই সমাজে কিছু শিক্ষিত আর অর্থবান মানুষ অহংকাররে আর দাম্ভিকতায় ভরা। যারা শুধু আঘাত করতে পারে আঘাত মোচন করতে পারে না। আশিকরা এভাবে হৃদয়ে স্বপ্ন সৌধ নিয়ে কি জানি কেমন করে বেঁচে থাকে। সক্ষম এবং অক্ষমের হৃদয় আলাদাভাবে তৈরি হলে হয়তো পৃথিবীতে অনাসৃষ্টি কম হতো।