Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
অন্তর্লিখন -সুলেখা আক্তার শান্তা – Pratidin Sangbad

অন্তর্লিখন -সুলেখা আক্তার শান্তা

শেফালী শৈশব থেকে দেখছে সংসারে অভাব। ভাবে জীবন কেন এমন। পাশের বাড়ির রুপা শহরে কাজ করে। তার জীবনটা ব্যতিক্রম। শেফালী রুপাকে শহরে কাজ খুঁজে দিতে অনুরোধ জানায়। সেই শুরু। তারপর জীবন চলছে যন্ত্রের মত। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসার সব কাজ সেরে চলে যায় গার্মেন্টসে। কাজের ফাঁকে সহকর্মীদের আড্ডায় সে যোগ দিত না। দীপা শেফালীকে ঠেলা দিয়ে বলে, কিরে তুই কাজ ছাড়া আর কিছু বুঝিস না কেন? আমার কোন কিছু ভালো লাগে না। তোরা কথা বল, আমি তো শুনছি। পলাশ শেফালীর ব্যতিক্রমী আচরণ লক্ষ্য করে। সে ঘনিষ্ঠ হতে চায় শেফালীর। শেফালী তাতে সাড়া দেয় না। পলাশের ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপান্তরিত হতে থাকে। সে একদিন শেফালীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পলাশকে শেফালীরও ভালো লাগতে শুরু করে। বিয়ের প্রস্তাব শুনে আশ্চর্য হয় শেফালী! কিছুদিন ভেবে সম্মতি জানায়। পলাশ শেফালীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালোই চলছিল। ক’দিন পর শুরু হয় বিপত্তি। পলাশ মাঝে মাঝে নানা অজুহাতে অফিস কামাই করতে থাকে। অনেক ধরাধরি করে চাকরি ঠিক রাখা হয়। কিন্তু অভ্যাসের কোন পরিবর্তন হয় না। এক সময় কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করে। চাকরি চলে যাবার পর শুয়ে বসে কাটতে থাকে তার সময়। বউয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে সে। শেফালী কয়েক মাস কিছু না বললেও একদিন না বলে পারেনা, এভাবে বসে থাকলে চলবে? ‌দু’জনে কাজ করব সংসারের আয় উন্নত হবে। একার কাজে তো কোনরকম চলা। মেজাজ খারাপ হয় পলাশের। বকবক করিস না, আমার কাজ করতে ভালো লাগেনা। এরকম কাটছাঁট কথা শুনে শেফালী আশ্চর্য হয়! বইসা থাইকা নবাবী করবা নাকি? পলাশ প্রচলিত কথায় পুরুষত্ব জাহির করার চেষ্টা করে। তুই আমার সঙ্গে ফালাফালি করিস না। গার্মেন্টসের অনেক মেয়ে আছে স্বামীকে কাজ করে খাওয়ায়, তুইও খাওয়াবি। শেফালী কথা না বাড়িয়ে অফিসে চলে যায়।

শেফালী বুঝতে পারে তার গর্ভে সন্তান এসেছে। সে খুব আনন্দিত। স্বামীকে খুশির কথা জানায়। পলাশও খুশি হয়। পলাশ বলে, তুমি আমাকে একটা মহা খুশির খবর দিয়েছো। এই উপলক্ষে শেফালী আবার কথাটা বলে। তুমি চাকরি নাও, আমাদের সন্তান আসতেছে তার তো একটা ভবিষ্যৎ আছে। পলাশ চাকরি নেয়। শেফালির কষ্ট লাঘবের জন্য সন্তান প্রসবের আগ দিয়ে চাকরি করতে দেয় না। এখন তোমার বিশ্রামের দরকার, বিশ্রাম নাও। স্বামীর কথায় শেফালী ভরসা পায়। সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। সন্তানের নাম রাখে কাজল। সন্তানকে আদর করে বলে, মায়ের পেটে তুই‌ আসার পর তোর বাবা কাজে মনোযোগী হইছে। আমাদের সংসার যেন এরকম হাসি খুশি থাকে। কাজল একটু বড় হলে শেফালী আবার চাকরি নেয়। পলাশের আচরণ আবার সন্দেহজনক মনে হয়। সংসারের প্রতি দায়িত্বহীন হয়ে ওঠে। সবার অলক্ষে সে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। টাকায় কম পড়লে শেফালী কাছ থেকে টাকা নিতে চায়। এক পর্যায়ে টাকা না দিলে শেফালীর গায়ে হাত তুলতে শুরু করে। শেফালী ধৈর্য নিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করে। তুমি এমন করো কেন? আমাদের এক সন্তান আছে আর এক সন্তান আসতেছে। তাদের কথা ভাবো। আমার ভাবাভাবির দরকার নেই। যত ভাবনা তুই ভাব। অসহায় শেফালী বলে, সন্তানের প্রতি কি তোমার কোন দায়িত্ব নেই। আমি নিজের দায়িত্বই পালন করে শেষ করতে পারতাছি না সন্তানের দায়িত্ব কী পালন করব।‌ নেশা আমাকে উন্মাদ করে ফেলেছে। নেশা ছাড়া আমি কিছুই বুঝিনা।

শেফালী দ্বিতীয় সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। বোনের কাছে দুই সন্তান রেখে চাকরিতে যায়। শেফালীর বেতন পাওয়ার আগেই পলাশ টাকা চাওয়া শুরু করে। টাকা দে। ‌দুই সন্তানের দায়িত্ব খাওয়া পরা ঘর ভাড়া সব আমাকে চালাইতে হয়। তোমার মতো স্বামী দিয়ে আমি কী করবো? কী এত বড় কথা? গার্মেন্টসে দেখিস তিন চার মেয়ের এক স্বামী। তারা স্বামীকে বসাইয়া খাওয়ায়। আর তুই তো আমারে বোকা পাইছোস। আমি তো তোরে রেখে আরেক বিয়ে করিনি। শেফালীর সহ্য হয় না। এটা কি খুব বাহাদুরীর কথা নাকি? খাওয়াইতে পারবা না বিয়ের সময় খুব তো বাহাদুরি দেখাইছিলা। যে স্বামী ভাত কাপড় দেয় না সে স্বামী কী কাজে লাগে? তার উপর নেশার টাকা জোগান না হলে মারপিট অশান্তি। শেফালী ভাবে ‌এমন স্বামী না থাকাই ভালো। সে সিদ্ধান্ত নেয় স্বামীকে ডিভোর্স দেবে। শেফালীর বোন রুপা বুঝায়, থাক ডিভোর্স দেওয়ার দরকার নাই। বাচ্চারা তো অন্ততপক্ষে বাবাকে কাছে পাইবে। স্বামী ছাড়া একটা মেয়ের সমাজে চলতে অনেক সমস্যা। স্বামী আছে তো একটা বট গাছের ছায়া আছে। বোনের কথায় শেফালী স্বামীকে ডিভোর্স দেয় না। সে আবার সন্তানের মা হয়। দুর্ভাগ্য সে সন্তান হয় প্রতিবন্ধী। শেফালীর এখন তিন সন্তান। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। স্বামীকে বুঝায় সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে এবার কাজ করো। পলাশের একই কথা। আমাকে বুঝাইস না। আমার কাজ করতে ভালো লাগে না। ‌আমার একার পক্ষে সম্ভব না সংসার চালানো। তার উপর তোমার উৎপাত। বেতন পেলেই টাকা চাওয়া শুরু করো। দিশেহারা হয়ে পড়ে শেফালী। সে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়।

ডিভোর্স দেওয়ার পরও নিস্তার নাই। উৎপাত চলতে থাকে। তোর ডিভোর্স আমি মানি না। নানান কথা বলা শুরু করে শেফালীকে। ডিভোর্সের পরও শেফালীর গায়ে হাত তোলে। বাসা এবং কাজের জায়গা পরিবর্তন করলেও খুঁজে বের করে ফেলে। ক্রমাগত নির্যাতন করতে থাকে। আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে বলে, আমার বউ। চলাফেরা ভালো না তাই শাসন করি। শুনে সবাই চুপ করে যায়, কে করে কার বিচার। শেফালী অভিযোগ করে থানায়। ভয়ে কয়েকদিন ঠান্ডা থাকে আবার অত্যাচার শুরু করে। পলাশের বোনেরাও শেফালীর গায়ে হাত তোলে। আমার ভাইরে ডিভোর্স দিয়া তুই শান্তিতে থাকবি? তোকে শান্তিতে থাকতে দেবো না। শেফালীর কাছ থেকে বাচ্চাদের নিয়ে নেয়। বাচ্চারা কেউ তার বাবার কাছে থাকতে চায় না। বড় মেয়ে দু’জন মার কাছে চলে যায়। ছোট মেয়ে প্রতিবন্ধী ও যেতে পারে না, কান্নাকাটি করে। শেফালী ও বাচ্চার জন্য অস্থির হয়ে যায়। শেফালী পলাশ কে বলে, তুমি বড় বাচ্চা দুইটা রাখো ছোট বাচ্চাটাকে আমার কাছে দাও। পলাশ বলে, না তা আমি করবো না। তোকে শাস্তি কিভাবে দিতে হয় তা আমি জানি। আমাকে ডিভোর্স দিবি তুই? আর আমি তোকে শান্তিতে থাকতে দেবো! পলাশের কাছে ছোট মেয়ে, সে বাচ্চাকে লুকিয়ে রাখে। শেফালী কে বলে, তুই আমার বাচ্চা নিয়েছিস আমার বাচ্চারা কোথায়? শেফালী অবাক হয়ে যায়। বাচ্চা তোমার কাছে আমি দেবো কোথা থেকে। শেফালী ভাবে বাচ্চা লুকিয়ে না জানি কী ষড়যন্ত্র করছে তার সঙ্গে। শেফালী বাচ্চাকে খুঁজতে থাকে। পলাশ কে বলে, তুমি বাচ্চাকে লুকিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছ। আমার বাচ্চাকে এনে দাও। অবুঝ বাচ্চা ওকে লুকিয়ে রাখলে কষ্ট পাবে। শাস্তি দেওয়ার আমাকে দাও। পলাশ বলে, তুই এখনো শাস্তি পাস নাই? তোর কপলে আরো শাস্তি লেখা আছে। আমি বাচ্চার কোন খবর জানিনা। শেফালী বাচ্চার কোন সন্ধান না পেয়ে দিশেহারা। সে আইনের আশ্রয় নেয়। পলাশের নামে মামলা দেয়। পলাশ মামলার ভয়ে বাচ্চাকে লুকিয়ে রেখে একটি আবদ্ধ ঘরে। ‌সেখানে বাচ্চা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। ‌পুলিশ মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে বাচ্চাকে। পলাশের তখন বোধ উদয় হয় মৃত বাচ্চা দেখে। তার কৃতকর্মের জন্য একটা সংসার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। শেফালীর বুকফাটা কান্না প্রতিধ্বনিত হতে থাকে আকাশে বাতাসে। আমি মা আমার কেন মৃত্যু হলো না। আমার এই প্রতিবন্ধী বাচ্চাটা কত কষ্ট পাইছে। ও তো কিছু বলতেও পারে নাই। নীরবে নিভৃতিতে আঘাত সহ্য করে মারা গেল। আমার জীবন কেন এমন বিদীর্ণ হয়ে গেল। চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল জীবনের স্বপ্ন।