Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
দেব না দেখা তোমায়-সুলেখা আক্তার শান্তা – Pratidin Sangbad

দেব না দেখা তোমায়-সুলেখা আক্তার শান্তা

 

সুখ সহায় সম্পত্তি কোন দিকেই অপূর্ণতা নেই। মনে একটাই অশান্তি আমার কোন সন্তান নেই! কার জন্য আমার এই অঢেল বিত্ত-বৈভব। বাশারের মনে এমন ভাবনা ঠেলে উঠে। জীবনের হতাশার কথা বন্ধু নাদিমকে বলে।
নাদিম তার উত্তরে বলে, বন্ধু ধৈর্য হারা হতে নেই।
ধৈর্য হারা হবো না। একে একে চারটি বিয়ে করেছি! তবুও সন্তানের সুখ দেখলাম না! সন্তান সন্তান করে আমার মন কাঁদে। যত বাজা-বান্দা বউ আমার কপালে জুটে। বন্ধু আমি আবার বিয়ে করব।
নাদিম বলে, বিয়ে তো তুমি যা করার করেছ? কারো ঘরে তো তোমার সন্তান হলো না! আমি বলি তোমার আর বিয়ে করার দরকার নেই।
না নাদিম এটা কোন কথা হল না! বিয়ে আমি করবোই।
দেখো তুমি যা ভালো মনে করো।
বাশার তার মনের ইচ্ছা অনুযায়ী আবার বিয়ে করে। পাঁচ নম্বর বউ সাজেদাকে সে ঘরে তুলে।
বাশার মহাখুশি এবার তার ঘরে আলোয় আলোকিত হবে।
দীর্ঘদিন হলো সাজেদার ঘরেও সন্তান হল না। বাশার দোষারোপ করে সাজেদাকে।
সাজেদা বলে, আমাকে কেন তুমি দোষারোপ করো! তোমার আর যে চারজন বউ আছে তাদের দোষারোপ করতে পারো না।
বাশারের মুখে একটাই উত্তর। সন্তান না হলে বিয়ে আমার কপালে আবার আছে। সন্তানের মুখ আমি না দেখে ছাড়বো না।
এই কথা শুনে বড় বউ মালিহা স্বামীকে বলে, তুমি সন্তান সন্তান করে আমার কপালে সতীনের পাহাড় তুলছ! এই বিয়ে করা তুমি বাদ দাও। তার চেয়ে আমরা কারো কাছ থেকে সন্তান দত্তক নেই।
বাশার একটু চিন্তা করে বলল, ঠিক আছে তাহলে তাই করি।
মালিহা ও স্বামীর মত পেয়ে খুশি। এরপর তারা একটি পুত্র সন্তান দত্তক আনে। মালিহা ছেলের প্রতি মায়ের পূর্ণ মমতা উজাড় করে দেয়। এদিকে অন্যান্য বউ মনোরা, শাহানা, রিয়া, সাজেদা তাতে খুব অসন্তুষ্ট। মালিহা বাদে সবার একই কথা অন্যের সন্তান এই সম্পত্তির অংশীদারি হবে! চার বউ মিলে স্বামীকে কুপরামর্শ দিতে থাকে।
বাশার বউদের কথায় প্রভাবিত হয়ে, ভেবে দেখে বউরা তো ঠিকই বলেছে। অন্যের সন্তান আমার সম্পত্তি মালিক হবে!
বড় বউ মালিহাকে সবাই চাপ দেয়। টুটুলকে এই বাড়িতে রাখা যাবে না। এদিকে মালিহাও সন্তানের মায়ায় জড়িয়ে যায়। সে কিছুতেই টুটুলকে ফেরত দিবে না।
অন্য অন্য বউ স্বামীকে বলে, দরকার পড়ে আপনি আবার বিয়ে করবেন। আমরা সতীনের ভাত খাবো তাও আপনি নিজ সন্তানের পিতা হন। বিয়ের কথা শুনে বাশার প্রফুল্ল ভাবে বলে, সব বউয়ের যখন আমার বিয়েতে মত আছে তখন তো আমার এই সন্তানকে ফেরত দিতেই হবে।
টুটুলের প্রতি মালিহা ছড়া কারো মায়া-বাসনা নেই। সবার প্রতিহিংসার কারণে টুটুলকে ফেরত দিতে রাজি হয় মালিহা। টুটুলকে তার জায়গায় ফেরত দিয়ে আসে। এতে মালিহার হৃদয় ভেঙ্গে যায়।
বাশারের অর্থকরী আর প্রতাপ থাকার কারণে এতগুলো বউ থাকার পরও তার বিয়ে করতে সমস্যা হয় না। বাশারকে নিয়ে লোকজন কানাঘুষা করে। তাতে তার কিছু আসে যায় না। সেভাবে লোকদের কথায় কান না দেওয়াই ভালো। আমার চলা আমি চলব, আমার স্বাধীনতার উপর কে হাত দিবে। এরপর বাশার রুনাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে।
মালিহা স্বামীকে বলে, তুমি সন্তানের জন্য বিয়ে তো করেই চলছ। তাতেও যদি তুমি সন্তানের মুখ দেখতে আমার কোন আফসোস ছিলনা।
বাশার বউকে বলে, তোমরা সন্তান দিতে পারোনা তাতে তোমাদের ব্যর্থতা! আমি তো বিয়ে করে কাউকে কোন কিছুতে অভাবে রাখিনি নেই। তোমরাই তো আমারে অভাবে মধ্যে রেখেছো! আমার তো একটাই চাওয়া ছিল তোমাদের কাছে। শুধু সন্তান।
মালিহা আর তার সতীন মনোরা একটি মেয়ে সন্তানের সন্ধান পেল। দু’জনে মেয়েটিকে নিয়ে আসে নিজেদের সন্তান না হওয়ার হতাশা দূর করার জন্য। দু’জনে মিলে মেয়েটির নাম রাখে পুতুল।
বাশার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, আমি যেখানে অন্যের সন্তান চাইনা। তাহলে তোমরা অন্যের সন্তান নিয়ে আসো কেন?
মনোরা স্বামীকে বলে, একে সন্তান হিসাবে আমরা লালন-পালন করব।
বাশার যতগুলো বিয়ে করুক না কেন, কোন বউয়ের তার উপর দিয়ে কথা বলার সাহস ছিল না। তার মতই ছিল সবার উপরে। মালিহার পুতুলের জন্য রোজ স্বামীর গালাগালি শুনতে হয়। এই বাড়িতে ছয় মাস হয় পুতুলরে আনা হয়েছে। বাশারের চূড়ান্ত কথা, এই বাড়িতে বাচ্চাটিকে কিছুতেই রাখা যাবেনা। মালিহা, মনোরা কেঁদে কেঁদে চোখ ভাষায়। বউয়ের কান্না দেখে স্বামী বাশারের মন নরম হয় না। মালিহা ভাবে যার ভাত খাওয়াবো তার অমতে মেয়েটিকে রাখা যায়। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পুতুলকে বাবা-মার কাছে রেখে আসে। মালিহা কাকুতি-মিনতি করে বলে। হে আল্লাহ এই সন্তান সন্তান করে এতগুলি সতীনের ঘর করতে হয়েছে। তাও সন্তানের মুখ দেখা হলো না। হে আল্লাহ তুমি আমাকে একটি সন্তান দাও। যাকে আমি নিয়ে মনের সব দুঃখ কষ্ট দূর করতে পারি। বিধাতা বোধহয় মালিহার কথা শুনতে পায়। হতাশার গ্লানিতে ভরে থাকা মালিহার গর্বে এক সময় সন্তান আসে। এতে বাশার খুব খুশি। বাশার পারে তো মালিহাকে পৃথিবী কিনে দেয়। বাশার মালিহার প্রতি যে অবহেলা ছিল। মালিহার সন্তান ধারণের কারণে ভালোবাসা দিয়ে সব দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। স্বামীর মালিহার প্রতি এত ভালোবাসা দেখে অন্য বউদের মনে হিংসা জেগে উঠে। সবাই ভাবে বাশারের মনের রাণী হচ্ছে বড় বউ মালিহা। দিনে দিনে তারা স্বামীকে কুপরামর্শ দিতে থাকে। বলে, এই সন্তান তোমার না, এ হবে অন্য কারো সন্তান। কোন বউয়ের গর্ভে সন্তান আসলো না। তাও আবার তার এই বয়সে। বাশার চিন্তা করে দেখল ঠিকই তো বলেছে ওরা। সন্তানের জন্য আমি এতগুলি বিয়ে করেছি। এতে বাশারের মনে সন্দেহের বাসা বাঁধলো। মালিহা কে নানা লাঞ্ছনা-বঞ্চনা দিয়ে থাকে। মালিহা স্বামীকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে তাতে কোন কাজ হয়না। মালিহার সন্তান প্রসব করার পূর্ব মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মালিহা হাউমাউ করে কেঁদে বলে, এ সন্তান তোমার! আমাকে বের করে দিচ্ছো কিন্তু তুমি তো তোমার সন্তানের অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করছো!
বাশারের মনে সন্দেহপ্রবণ এতই ধারণ করে মালিহার কোন কথা তার কানে পৌঁছায় না। যাবার সময় মালিহা বলে, আমাকে যখন সন্তান ধারণের চরম মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছো, ফিরব না আর তোমার বাড়িতে। “দেব না দেখা তোমায়” আর এই দেখাই হবে তোমার সঙ্গে আমার শেষ দেখা।
বাশার সব বউদের বলে, নেও তোমাদেরই জয়ী হলো দিলাম ওকে বের করে।
বৌদের কথা, তুমিতো আমাদের স্বামী আমাদের কথা শুনবা না শুনবে কি ওই কলঙ্কিনীর কথা?
বাশার বলে, তোমাদের কথাই তো শুনলাম। এরপর সব বউদের নিয়ে হাসি খেলায় মেতে থাকে।
দুঃখের সাগরে ভাসতে থাকে মালিহা। মালিহার জন্য স্বামীর দরজা বন্ধ হলও কোথাও না কোথাও নিজের জন্য আশ্রিত জায়গা পায়। জাহানারার কাছে আশ্রয় পায় মালিহা। জাহানারা ইটের ভাটায় কাজ করে। ইটের ভাটায় কাজ করেই চলে তার দিন।
মালিহার সন্তান পৃথিবীতে আসে, ছেলের মুখ দেখে ভাবে বাঁচার জন্য আমার একমাএ অবলম্বন। আমার এই প্রদীপকে মানুষের মত মানুষ করে তুলতে হবে। ছেলে সুজনকে নিয়েই মালিহা ইটের ভাটায় কাজ করে।
জাহানারা বলে মালিহাকে, মারে তোর কাজ করার দরকার নেই। আমি কাজ করি তাতেই চলবে।
মালিহা বলে, খালা তুমি আমাকে আশ্রয় দিছো তাতেই আমি খুশি। সুজন হাটি হাটি পা পা করে বড় হতে থাকে। সুজনকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়। মাদ্রাসা থেকেই সুজন পড়ালেখা করে। মালিহার ইচ্ছা সে ছেলেকে কোরআনের হাফেজ বানাবে। সুজনও মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে খুব চেষ্টা। একদিন হঠাৎ করে সুজন মাকে জিজ্ঞেস করে মা আমার বাবা কোথায়?
মালিহা ছেলেকে সব কথা খুলে বলে।
সুজন মায়ের কাছে থেকে সব কথা শোনার পর বাবার প্রতি তার খুব ক্ষোভ জমে। মালিহা স্বামীর উপর ভালোবাসা থাকার কারণে ছেলেকে বলে, বাবা সে যদি তোর খোঁজ পেয়ে, কোনদিন তোর কাছে আসে তুই তাকে ফিরিয়ে দিস না।
মালিহা কষ্ট করে মাথা গোঁজার জন্য একটু জমি কেনে। ছেলের কথা চিন্তা করে একটি ঘরও তোলে।
সুজন কোরআনের হাফেজ হয়। মালিহার আনন্দে বুক ভরে যায়। ছেলেকে দিয়ে আজ তার আশা পূর্ণ হয়েছে।
জাহানারা বলে, নে মা আজ তোর আশা পূর্ণ হলো। ছেলের জন্য পরিশ্রম করেছিস, তোর ইচ্ছে ছিল ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলবি।
হ্যাঁ খালা। আল্লাহ আমার আশা পূরণ করেছে। আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। আজ আমি মরেও শান্তি পাব।
জাহানারা বলে, মারে এই কথা বলিস না! অনেক কষ্ট ভোগ করছিস এখন তুই সুখের ছোঁয়া পাইছিস। এখন সুখ ভোগ করবি।
খালা মরণ যে কখন কার দরজায় এসে নক করে সেটা কি কেউ জানে! আমার মন বলে, মৃত্যু আমার অতি নিকটে।
মালিহা ছেলেকে বলে, সজুন তোর বাবাকে দেখার ইচ্ছা করে?
না মা আমার বাবার সঙ্গে দেখা করার কোনো ইচ্ছা জাগে না। তুমি আমার মা তুমি আমার বাবা।
মালিহা ছেলের মুখে একথা শুনে হাসি ফুটে উঠল। ঠিক আছে, বাবা তুই যা ভালো মনে করিস।
হঠাৎ মালিহা এক মরণব্যাধিতে রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে। সুজন মায়ের জন্য ভেঙ্গে পড়ে। মা ছাড়া দুনিয়ায় তার কেউ নেই। ভাবে কি করে মাকে ছাড়া পাড়ি দিবে এই দুনিয়ায়। সুজন বেশ করিৎকর্মা। ব্যবসা করে বেশ অর্থকরী মালিক হয়। ব্যবসায়ী হিসেবে তার বেশ সুনাম। একদিন সুজন মায়ের কবর জিয়ারত করে। পাশেই একজন বৃদ্ধ পাগল চেঁচামেচি করছে। সুজনেরও ইচ্ছা হল সে কি বলতে চায় শুনবে।
নিয়তির খেলা মানুষকে কখন কোথায় নিয়ে যায় কেউ জানে না। কখনো আপন ঠিকানায়া কখনো কুলহারা ঠিকানায়। সুজনের শরীরে স্পর্শ পেয়ে পাগল কেমন যেন এক অনুভুতি অনুভব করল। সে মনে করে খুঁজে পেয়েছে আপন ঠিকানা। সুজন তাকে নিজের বাড়িতে রেখে খাওয়া-দাওয়া, চিকিৎসায় সুস্থ করে তুলে। সুস্থ হওয়ার পর লোকটির একদিন ইচ্ছে হলো সে সুজনের কাছে সব কথা খুলে বলবে। সুজনকে বলে, বাবা আমার কিছু কথা তোমায় বলতে চাই। কেন জানি তোমাকে খুব আপন মনে হয়।
হ্যাঁ, বলুন।
সে কথা বলতে শুরু করল। আমার নাম বাশার।
এই নাম শুনে সুজন চমকে ওঠে। তার মায়ের মুখে এই নাম শুনেছে। সুজন চুপ হয়ে রইল।
বাশার তার নাম ঠিকানা সব বিবরণ দিল। আর বলে, আমার সয় সম্পত্তি সবই ছিল। আজ আমার কিছুই নেই। সবকিছু আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সবাই যার যার পথ দেখেছে। আজ আমি নিঃস্ব পথ হারা পথিক।
সুজন পরিচয় না দিয়ে ভাবে সেইতো বাঁধনের বাঁধ ভেঙ্গে ভাসতে ভাসতে চলে এলে। আমার মাকে পরিত্যাগ করেছেন আপনি। আমি আপনাকে পরিত্যাগ করব না। কারণ আপনি যে আমার জন্মদাতা পিতা। নিজের পরিচয় ছেলে হিসাবে আপনার কাছে নাইবা দিলাম। রক্তের বন্ধন সেতো রক্তের কাছে টেনে আনবেই। বিচিত্র পৃথিবীর বিচিত্র খেলায় আমরা সবাই অসহায় দর্শক।