ঘরের মাঠে যখন পুরুষ দল পাকিস্তানের কাছে একের পর এক ম্যাচ হারছে, তখন জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারেতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে শক্তিশালী পাকিস্তানকে ৩ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল।
পাকিস্তানি নারীদের ছুড়ে দেয়া ২০২ রানের লক্ষ্য ২ বল হাতে রেখেই পার হয়ে যায় বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা। রুমানা আহমেদ এবং ফারজানা হকের দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্যে অসাধারণ জয়টি ধরা দিলো। ৪৪ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন রুমানা আহমেদ। ৬টি বাউন্ডারিতে নিজের ইনিংস সাজান তিনি।
জয়ের জন্য শেষ তিন ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান। ৭ উইকেট ততক্ষণে শেষ হয়ে গেছে। উইকেটে ছিলেন রোমানা আহমেদ এবং সালমা খাতুন। এই তিন ওভারে ২ বল হাতে রেখেই ম্যাচ বের করে আনেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এই দুই ব্যাটার।
মূলতঃ ৪৮তম ওভারে পাকিস্তানি বোলার ওমাইমা সোহাইলের কাছ থেকে ১৮ রান নেন বাংলাদেশের দুই ব্যাটার। সালমা একটি এবং রুমানা মারেন ৩টি বাউন্ডারির মার। ৪৯ তম ওভারে নেন ১২ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল কেবল ৫ রান। ২ বল বাকি থাকতেই সেই ৫ রান তুলে নেন রুমানা-সালমা।
নারী বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচ ছিল এটি। বাংলাদেশ রয়েছে ‘বি’ গ্রুপে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ছাড়াও এই গ্রুপের বাকি দলগুলো হলো জিম্বাবুয়ে এবং থাইল্যান্ড। বাছাই পর্ব শুরুর আগেই নারী ক্রিকেট দল জিম্বাবুয়েকে ৩ ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল।
নারী ক্রিকেটে বরাবরই খুব শক্তিশালী দল পাকিস্তান। অথচ এই দলটির বিপক্ষে এ নিয়ে তৃতীয় জয় পেলো বাংলাদেশ। পাকিস্তানিদের বিপক্ষে সর্বশেষ চার ম্যাচের তিনটিতেই জয় নিগার সুলতানা-সালমা খাতুনদের। পাকিস্তানের ঘরের মাঠ থেকেও জিতে এসেছিল নারী ক্রিকেটাররা। আরেকটি ম্যাচ জিতেছিল কক্সবাজারে। এবার জিতলো তিন নম্বর ম্যাচে।
এছাড়া টপ অর্ডার ব্যাটার ফারজানা হক ৯০ বল খেলে করেন ৪৫ রান। মূলত তিনি একপাশ আগলে রেখে বাংলাদেশের জয়ে দারুণ অবদান রাখেন।
হারারের ওল্ড হারারিয়ান মাঠে টস জিতে পাকিস্তান অধিনায়ক জাভেরিয়া খানকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা।
টস হেরে ব্যাট করতে নামার পর শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের শিকার হয় পাকিস্তান। ১৪ রানের মাথায় রানআউট হন আয়েশা জাফর। আরেক ওপেনার মুনিবা আলি আউট হন ২২ রান করে। ১২ রান করে বিদায় নেন অধিনায়ক জাভেরিয়া খান।
মিডল অর্ডারে ওমাইমা সোহাইলকে শূন্য রানেই ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের বোলার রিতু মনি। ইরাম জাভেদকে ৩ রানে সাজঘরের পথ দেখান নাহিদা আকতার। ৪৯ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর বাংলাদেশ যখন আশায় ছিল খুব দ্রুত বাকিদেরও প্যাভিলিয়নে পাঠাবেন, তখনই দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে যান নিদা দার এবং আলিয়া রিয়াজ। এ দু’জন ১৩৭ রানের জুটি গড়েন।
১১১ বল খেলে ৮৭ রান করেন নিদা দার। আলিয়া রিয়াজ তো আউটই হননি। ৮২ বল খেলে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান করে ২০১ রান। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে রিতু মনি এবং নাহিদা আক্তার নেন ২টি করে উইকেট। একটি করে উইকেট নেন সালমা খাতুন এবং রুমানা আহমেদ।
জবাব দিতে নেমে ১০ রানের মাথায় ওপেনার মুর্শিদা খাতুনকে হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ৯ রান করেন তিনি। এরপর ৭০ রানের জুটি গড়েন শারমিন আক্তার এবং ফারজানা হক। ৬৭ বলে ৩১ রান করে আউট হন শারমিন আক্তার।
অধিনায়ক নিগার সুলতানা মাঠে নেমে কিছুই করতে পারেননি। ২৬ বল খেলে করেন মাত্র ৪ রান। ৯৮ রানের মাথায় ৪র্থ উইকেট পড়ার পর ঘুরে দাঁড়ান রুমানা আহমেদ এবং রিতু মনি। এ দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৬১ রানের জুটি। ৩৭ বলে ৩৩ রান করে আউট হন রিতু।
লতা মন্ডল এবং ফাহিমা খাতুন পরপর গোল্ডেন ডাক মারায় কিছুটা শঙ্কা জেগেছিল বৈ কি। একই সঙ্গে পাকিস্তানি ওমাইম সোহাইলের হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও তৈরি হয়। কিন্তু সালমা খাতুন তার হ্যাটট্রিক ঠেকিয়েই দেননি শুধু। রোমানা আহমেদের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলাদেশকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। সালমা এবং রোমানা- এ দু’জন মিলে গড়েন ৪২ রানের দারুণ একটি জুটি।