Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
রিক্ত সায়াহ্ন-সুলেখা আক্তার শান্তা – Pratidin Sangbad

রিক্ত সায়াহ্ন-সুলেখা আক্তার শান্তা

রিক্ত সায়াহ্ন-সুলেখা আক্তার শান্তা

এক বধূর কথা। শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আমাকে ছোটবেলায় আদর আহ্লাদ করে এই বাড়ির
বউ কইরা আনছে। বাবা-মার মতো ভালোবাসা দিছে। আমাকে কোনদিন কোন
কিছুর কষ্ট বুঝতে দেয় নাই। এত বড় গৃহস্থলী হয়েও শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আমাকে দিয়ে
কোনো কাজ করায় নাই। নিজের সন্তানের মতো আমার দিকে খেয়াল রাখছে। আজ
আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি নাই আমাকে ভালোবাসে এমন মানুষও নাই।
এলিনার জা রেশমা এতক্ষণ শুনছিল কথাগুলো। উঁচু দাঁত, ঢেঁকির মতো শরীর
তারে ভালো না বেসে পারে! শত হইলেও বংশীয় ঘরের মেয়ে। রেশমা উঠান ঝাড়ু
দিতে দিতে মুখ বাঁকা করে, বলে, কথাগুলো।
জালকে এত ঠেস মারা কথা কেন? জালে জালে মিলেমিশে থাকবা। এমনি তো বাহার
বউকে দেখতে পারেনা। লোকের মুখে শুনি বাহার বিয়ে করেছে। যদি বিয়ে করে
থাকে তাহলে তো এলিনার কপাল পুড়ছে! এলিনা দেখতে যেমনই হোক তোমরা একে
অপরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবা। কথার মাঝেই বাহার বউ নিয়ে এসে জাহানাকে
বলে, চাচি আপনাদের বউ বরণ করে নেন। জাহানারা গালে হাত দিয়ে অবাক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। একবার এলিনার দিকে
তাকায় একবার বাহারের দিকে তাকায়। জাহানারা শোনা কথাই সত্যি হলো। বাহার
বিয়ে করে আজ বাড়িতে বউকে এনে তা প্রমান করলো। কি করবে নতুন বউকে
তো দাঁড়া করিয়ে রাখা যায়না। জাহানারা শেষমেষ রেবাকে বরণ করে নিতে হয়।
যদিও সে চায় না এলিনার জায়গায় অন্য কেউ আসুক। এলিনা স্বামীর এমন কাণ্ড
দেখে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকে। এলিনার মুখোমুখি হয়ে বাহার বলে, এখানে থেকে
কি করবি। দুচোখ যেদিকে যেতে চায় সেদিক চলে যা।

আমাকে আপনার বাবা-মা এই বাড়ির বউ করে আনছে। ছেলে হয়ে তাঁদের
সম্মানটা রাখলেন না। আমি এই বাড়ি ছেড়ে যাবনা।
আরে দেখ কোথায় তুই আর কোথায় আমার এই সোনা বউ। রূপ কি তার। ওর
তো চাঁদের আলোর মতো শরীর। তোর তো দৈত্যের মতো তোর শরীর।

এলিনার মুখ মলিন হয়ে যায়। আমি সুন্দর না এটা কি আমার অপরাধ! সুন্দর না
বলেই কি তার স্বামীর সংসার পাওয়ার অধিকার নাই।
রেশমা বলে, অধিকার দিয়ে কি করবে? যেখানে স্বামী পছন্দ করে না তাকে।
আমার স্বামী আমাকে ভালবাসে তাই শ্বশুর বাড়ির সকলেই আমাকে সম্মান দেয়।
কথাগুলো শুনে এলিনার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। রাগান্বিত কন্ঠে বলে, আমি
কারো কাছে কিছু চাইনা আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি আমাকে ভালোবেসেছে তাঁরা
ভালোবেসে বউ করে এনেছে, বৌমা বলে, বড় গলায় আমাকে ডাকছে, এ আমার
কাছে অনেক কিছু।
যার কাছে আদর তার কাছে আদরে না থাকলে হাজার জনের সোনা দিয়ে কি তার
মন মন ভরে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বাহার আর রেবা কাজের জন্য এটা ওটা এলিনাকে ফরমাশ
করে। এলিনা তাদের কথামতো তাই করে কাজ করার মাঝেই মাথা ঘুরে পড়ে যায়
সবাই ধরে, লক্ষণেতে বুঝতে পারে এলিনা গর্ভবতী। রেবা স্বামীকে বলে, তুমি যদি
এলিনাকে সংসারে রাখ তাহলে তুমি আমাকে পাবেনা এখন তুমি কি করবে তা তুমি
করো।
বাহার বলে, তুমি বলো কি? আরে সন্তান সে তো আমায়!
সন্তান সেতো আমি তোমাকে দিতে পারবো। তুমি ওকে পছন্দ করো না তার জন্য
তো আমাকে বিয়ে করে এনেছ? তুমি আর আমি মিলে সুখ শান্তি দিয়ে সংসার ভরে
রাখবো। এখানে অন্য কেউ থাকবে তা আমি মেনে নিতে পারব না।
তুমি আমার প্রাণ সেই প্রাণ যদি সঙ্গে না থাকে তা হলে বেঁচে থেকে কি করব তুমি
বলো? আমি তোমাকে বউ করে আনছি তোমাকে বিদায় করে দেওয়ার জন্য নয়!
তোমাকে নিয়ে সংসার করার জন্য। তুমি কোন কিছুতে ব্যথা পেলে আমার বুকটা
ফেটে যায়। আমার বউ জাদু সোনা একটু হাসো না। জা, স্বামী-সতীন তাদের কাছে
চোখের কাঁটা এলিনা, তারা নানাভাবে জ্বালা যন্ত্রণা দেয় এলিনাকে। এলিনাকে
হুকুমের উপর হুকুম দেয়। রেবা তার পা টিপে দিতে বলে, এলিনা এতোদিন কিছু
বলে নাই। আজ কিছু না বলে পারছেনা। শোন তোর সেবা করাতে ইচ্ছা করে তুই
তোর নিজের জন্য কাজের লোক রেখেনে আমি কেউর দাসি বান্দি না। তোর স্বামী
তোকে ভালোবাসে তাকে বল তোকে কাজের লোক রেখে দিতে।

আমাকে তেজ দেখায় দেখি বাড়িতে কিভাবে থাকে। এই কথা বলেই সঙ্গে সঙ্গে
এলিনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এলিনা ব্যথায় ছটফট করে। তাও এলিনা ধরে
না। জাহানারা বলেন, আরে এটা কি করলা তুমি? ওর পেটের বাচ্চার যদি কিছু হয়
এখন? বাহার এসে দেখে এলিনার এমন অবস্থা তাও ধরে তুলে না সে। এলিনা ভাবে
তাকে তার স্বামী ধরে তুলবে। রেবাকেও কিছু বলেনা সে যে কেন এমন কাজ
করলো। রেবা জাহানারা উদ্দেশ্য করে বলে, চাচি ওর আবার কি হবে! ও যেমন
দেখতে ঢেঁকির মতো। ওর সন্তানও হবে দেখতে তেমন! এলিনা বলে, না আর
অপমান সহ্য করা যায় না। এলিনা বাবার বাড়ি চলে আসে। কাউকে কিছু বলেনা,
চুপ হয়ে থাকে। ভাইয়ের বউকে কোন সাংসারিক কাজ করতে দেয় না সে। ভাবে,
তার এভাবে বাবার বাড়ি পড়ে থাকা নিয়ে যদি কিছু বলে, কাজের উসিলায় তাকে
থাকতে দিবে। এলিনার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় পর সবাই এলিনাকে জিজ্ঞেস করে? তুই
স্বামীর বাড়িতে যাসনা তোর স্বামীও আসে না এই বাড়িতে। এলিনা কথা বলে না,
লোকজন বুঝে নেয় এলিনা সঙ্গে তার স্বামীর সম্পর্ক নাই। না হয় বাচ্চা হলো তাও
ওর স্বামী এলোনা।
এলিনার সন্তান মামার বাড়ি বড় হয়। বাবার মুখ দেখতে পায়নি সে। তা নিয়ে
লোকজন অনেকে অনেক কথা বলে। এলিনা কোন কথায় কান দেয় না। মেয়ে বড়
হয়েছে, এলিনা মেয়ে তুলিকে নিয়ে চিন্তত। মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। কোন বিয়ের
ঘর আসলে মামা বাড়ি থেকে বিয়ে করতে চায় না। আর তাদের চাহিদাও আছে
অনেক। আসবাবপত্র, যৌতুক। এলিনা কি করে মিটাবে পাত্রদের এই চাহিদা।
কারণ তার কাছে কোন টাকা-পয়সা নাই। ভাইয়ের টাকা-পয়সা থাকলেও সে
এলিনার মেয়ের বিয়ের খরচ বহন করতে চায়না। এমন দুর্দশা দেখে, জাহিদ
পরামর্শ দেন। তুই এত ভাবিস কেন? তোর স্বামী তোকে তো ডিভোর্স দেয় নি।
তুইও তোর স্বামীকে ডিভোর্স দেস নাই। তোর আর তোর মায়ের অধিকার পাইতে
স্বামীর নামে মামলা করে দে। মেয়ে তার হক থেকে বঞ্চিত হবে কেন?
মামলা করলে বংশের মান সম্মান যাবে ভাইও এ বিষয়ে মত দিবেনা।
জাহিদ বলেন, বংশ ধুয়ে তুই পানি খাবি? তোরে কেউ এক-পয়সা দিয়ে সহযোগিতা
করে? আগে তুই বাঁচ।

এলিনা নিজের হক পূর্ণ করতে বহু বছরপর স্বামী দ্বারস্থ হয় মামলার মাধ্যমে।
এলিনা ভাই বশির চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথা তুলে। বলে, একবারও বংশের মান-
সম্মানের কথা ভাবলো না। সে মামলা করেছে। এখন আমি মানুষের সামনে
কেমনে মুখ দেখাবো! মানুষ শুনলে ছি ফেলবে। আজ পর্যন্ত বংশের কোন মেয়ে
মামলা করেছে? সে বিবেকহীন হয়ে গেছে! সমাজে আমাদের বসবাস করতে হয়। এই
বাড়ি থেকে এসব চলবে না। মামলা চালালে এই বাড়ি থাকতে পারবেনা। ভাইয়ের
বউ নিপা বলে, তোমার বোনের কান্ড দেখো কি ভেজাল নিয়ে বসেছে তোমার ঘারে!
এলিনা চিন্তার মাঝে ডুবে রয়। ভাইয়ে কথা না শুনে উপায় কি! ভাইয়ের বাড়ি সে
থাকে। মামলা চালালে তো ভাইয়ের কাছ থেকেই টাকা নিতে হবে। ভাই যদি টাকা
না দেয় সে মামলা চালাবে কিভাবে। আর যেখানে বংশের মান-সম্মান নিয়ে কথা।
ভাবে কথা না শুনে শেষ আশ্রয়টুকু হারাবে সে। সে স্বামীকে অব্যাহতি দিয়ে মামলা
তুলে নেয়। পার পেয়ে যায় স্ত্রীকে স্বামীর অধিকার আর সন্তানকে পিতার অধিকার
থেকে বঞ্চিত করা মানুষটি।
এলিনার মেয়ের জন্য তেমন একটা বিয়ের ঘর আসে না। যাও আসে মামার বাড়ি
থেকে বিয়ে করে বউ নিতে চায় না। মেয়েকে বাবার বাড়ি থেকে বিয়ে করতে
চায়। এলিনা কোনরকমে একটি পাত্র পেয়ে মেয়ে বিয়ে দেয়। এলিনা ভাই বউকে
বলে, আমি আর যাব কোথায়। বাকি জীবনটা ভাইয়ের এখানেই কাটাতে চাই।
তোমার তো একজন কাজের লোকও লাগে সেই কাজ আমি করে দিবো। বিনিময়
আমাকে খাওয়া পরা দিও। তোমরা আমার আপনজন তোমাদের নিয়ে আমি
শান্তিতে থাকতে চাই। তোমরাই আমার বাঁচার সম্বল। মানুষ কি সম্বল ছাড়া
বাঁচে। তোমরা আর তুলি আছে বলেই, ভাবি, আমিও সম্বলহীন নয়। জীবন
সায়াহ্নে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এলিনা।