আজ ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

ঈদের ছুটিতে নিকলি হাওরে পর্যটকদের ভিড়

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যেই কিশোরগঞ্জের নিকলী বেড়িবাঁধ হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করেছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটকরা।ঈদের পরদিন থেকে নিকলীর বেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যটকদের ভিড় করতে দেখা গেছে।তবে এইবার পানি কম থাকায় হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেনি বলে অনেকই জানিয়েছে।মাথায় পলিথিন ব্যাগ দিয়ে,গামছা দিয়ে,ছাতা দিয়ে যে যেভাবে পারছে ভিজে ভিজে তবুও বেড়িবাঁধের রাস্তায় ও নৌকায় ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে।
কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিকলির হাওর।ঈদ পরবর্তী সময়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দঘন মূহূর্ত বা ছুটি কাটাতে কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলা বেড়িবাঁধ এলাকায় ঘুরতে আসছে মানুষজন।২০০০ সালের দিকে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা সদরকে বর্ষায় ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য সরকার কর্তৃক সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়।এছাড়াও নিকলি উপজেলার ছাতিরচর গ্রামের ভাঙন রোধে রোপণ করা হয় হাজারো করচগাছ।হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সারাদেশের মানুষ বর্ষা মৌসুমে ছুটে আসে কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওরে।নিকলি উপজেলাকে মিনি পর্যটনকেন্দ্র বলা হয়ে থাকে।দিন দিন নিকলি উপজেলা ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।প্রতিবছর সারাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন নিকলি হাওরের অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। বিশাল জলরাশি ও আকাশের নিকলি হাওরের অপরুপ দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে।
আর এ কারণেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা দল বেঁধে শত শত মোটরবাইক এবং প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন এখানে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে নারায়নগঞ্জ,গাজিপুর,ময়মনসিংহ,শেরপুর,
ঢাকা সহ কিশোরগঞ্জের আশপাশের জেলা উপজেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন ঈদের ছুটিতে নিকলি বেড়াতে এসেছেন।গাজিপুরের কাপাসিয়া থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে একদিনের ট্যুরে এসেছেন ফারুক,ফয়সাল,সাগর,তন্ময়,জুবায়ের,জসিম,রণি,
হাফিজ,প্রান্ত,জুয়েল,স্বপন,ফাহিম।তারা জানিয়েছে আমরা ১২জন চার মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে এসেছি।ঈদের ছুটিতে ইচ্ছে ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়ি মিঠামইন কামালপুরে যাওয়ার কিন্তু পানি না থাকার কারণে এবং বৃষ্টির কারণে মিঠামইন যেতে পারিনি।বৃষ্টি না থাকলে হয়তো আমরা এই সময়টাকে আরও বেশি উপভোগ করতে পারতাম।তাছাড়া রাস্তায় প্রচুর যানজট ও রাস্তা ভাঙা থাকার  কারণে কিছুটা সমস্যা হইলেও এরকম ভ্রমণ বৃষ্টির মধ্যে উপভোগ করেছি।
নিকলির ট্রলার চালক আমিনুল বলেন,এইবছর হাওরে পানি না হওয়াতে আমরা নৌকা ও ট্রলার চালকরা বিপাকে পড়েছি।গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে পানি আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে।ঈদ উপলক্ষে হাওরে পর্যটক আসা শুরু করেছে।আশা করছি পর্যটক আরও বাড়বে।
নিকলি উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন,বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেই হাজার হাজার পর্যটক এসেছে যার জন্য করগাঁও থেকে নিকলি পর্যন্ত  প্রচুর যানজট। এত পর্যটক দেখে আমরা খুবই আনন্দিত। পর্যটকদের জন্য আমরা সবসময় চেষ্টা করি যেন তারা হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে সেদিকে স্থানীয় সামজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসন সজাগ দৃষ্টি রাখেন।পর্যটকরা যাতে কোন ভোগান্তি বা প্রতারিত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা হয়।সারা বাংলাদেশ থেকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এমপি,মন্ত্রীরাও এখানের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আসেন।
নিকলি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারোয়ার জাহান বলেন,ঈদের পর থেকে নিকলিতে পর্যটকদের ভিড় অনেক বেশি।বেড়িবাঁধে আসার আগে দুই জায়গায় চেকপোস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে।বেড়িবাঁধ এলাকায় সিভিল পুলিশ এবং পোশাকধারী পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিচ্ছে।নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করার জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব রকম সুবিধা নিকলি থানা পুলিশ থেকে দর্শনার্থীদের দেয়া হচ্ছে।
নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কারার শাহরিয়ার আহমেদ তুলিপ বলেন, এখন বর্ষার ভরা মৌসুম। কিন্তু হাওরে পানি কম থাকায় পর্যটকরাও কম আসছে। আস্তে আস্তে নিকলী হাওর পর্যটন এলাকায় পর্যটক আসতে শুরু করেছে। আমি আশাবাদী দ্রুত সময়ের মধ্যেই পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠবে।

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ