Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
হারিয়ে যায় স্বপ্ন-সুলেখা আক্তার শান্তা – Pratidin Sangbad

হারিয়ে যায় স্বপ্ন-সুলেখা আক্তার শান্তা

পাঁচ ভাইয়ের আহ্লাদ দেখে আর বাঁচি না। বোনটাকে বিয়ে দিয়ে দিবে তা না, রেখে দিয়েছে ঘাড়ের উপর। জোর আওয়াজে কথা বলছিল সোহেলের স্ত্রী কেয়া। ভাইদের কথা, বোনকে বিয়ে দিয়ে নিজেদের চোখের সামনেই রাখবে। আর ভালো ছেলে না পেলে বিয়েই দিবে না বোনকে। ভালো ছেলে করতে করতে বোনের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। সে দিকে কারো খেয়াল নাই। শুধু তাদের কথা, বোন ছোট, বোন ছোট। পাঁচ ভাইয়ের এক বোন, রিমি সবার ছোট। মা বাবা না থাকায় ভাইরা রিমিকে একটু বাড়াবাড়ি রকম মায়া করে। ভাইদের কথা, যে দিনকালের অবস্থা দেখে শুনে না নিলে হয়। বোনকে তো আর যার তার হাতে তুলে দেওয়া যায় না। রিমির পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে চার ভাই সপরিবারে প্রবাসী। বড় ভাই সোহেল দেশে থাকেন।
রিমির বিয়ের জন্য পাত্রের খোঁজ চলতে থাকে। ভাইয়েরা তাদের প্রস্তাব মতো একটি ছেলের সন্ধান পায়। কিন্তু ছেলেটি খুব গরিব। ভাইদের কথা গরীব হলে সমস্যা নাই, ছেলে ভালো হলেই হলো। শুভ লগ্নে ফরিদের সঙ্গে রিমির বিয়ে হয়। বিয়ের পর ফরিদ রিমিদের বাড়িতেই থাকে। ফরিদ বেকার, বেকারত্ব মোচনের চেষ্টা করে। সে বেকার বলে খরচ খরচার কোন কিছু নিয়ে তাকে ভাবতে হয় না। মহা সুখে ফরিদের দিন কাটতে থাকে। রিমিকে বলে, কপাল গুনে এমন ভাইদের পেয়েছো। বোন বিয়ে দিয়েও তার সবকিছু বহন করছে। আমি আমার ভাইদের চোখের মনি। ভাইয়েরা আমাকে কোনদিন কোন কষ্ট পেতে দেয় নাই। দেখতে দেখতে সময় চলে যায়। ফরিদ আর রিমি এখন এক ছেলে এক মেয়ের বাবা মা। পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় পরনির্ভরশীলতার অবসান ঘটাতে চায় ফরিদ। চিন্তা করে সে আর স্ত্রীর ভাইদের উপর নির্ভরশীল থাকবে না। ছেলে মেয়ের বাবা সে এখন নিজে একটা কিছু করতে চায়। দ্রুত ভাগ্য অন্বেষণে বঙ্গ সন্তানদের বিদেশ গমন প্রথম পছন্দ। ফরিদের মাথায় প্রথমে সেই কথাটি উদয় হয়। সুযোগ বুঝে সে কথাটি বলে। রিমি তোমার ভাইয়েরা তো তোমার জন্য অনেক কিছুই করলো। এখন তুমি তাদের বলো আমাকে আমেরিকা পাঠিয়ে দিতে, দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আমেরিকা যাওয়ার। তুমি আমেরিকা যেতে চাও, তাহলে আমি কী করবো? আমি যাওয়ার পর একটু সেটেল হলে তোমাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করব। রিমি উৎসাহিত হয়। দেখি ভাইদের সঙ্গে কথা বলে। তুমি যাই বলো তোমার ভাইরা সেটা শুনে। তোমার ভাইরা তোমার কোন কথাই ফেলবে না। রিমি ভাইদের সঙ্গে আলাপ করে। ভাইয়েরা চিন্তা করে দেখে বোন জামাই যদি কিছু করতে চায় তাকে সেই সুযোগ করে দেওয়া দরকার। ভাইয়েরা বোন আর বোন জামাইয়ের কোন চাওয়া অপূর্ণ রাখে না। ভাইদের একটাই চাওয়া তাদের বোন যেন সুখে থাকে। দুঃসাধ্য হলেও তারা সেই ব্যবস্থা করে দেয়। বোনের জামাইকে তার স্বপ্নের দেশ আমেরিকাতে পাঠায়।
রিমি সংসার আর ছেলে তৌহিদ মেয়ে জেবাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যস্ততার মাঝেও স্বামীকে সে ফোন দেয়। স্বামীর ফোনর অপেক্ষায় থাকে। কিছুদিন পর ফরিদের আচরণে পরিবর্তন ঘটে। স্বামীর কাছ থেকে কোন সারা পায় না। ফোন দিলে ফোন বেজেই চলে। স্বামীর সঙ্গে কথা হয় না। রিমির ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়। কী হলো বুঝতে পারেনা। কেয়া ভাবির সঙ্গে আলাপ করে ফরিদের ব্যাপার নিয়ে। কেয়া বুঝ দেয়, অস্থির হয়ো না আছে হয়তো কোন কাজে ব্যস্ত। উদ্বিগ্ন রিমি বলে, ভাবি ব্যস্ততার মাঝে কি বউ বাচ্চার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারে না। দিনে কাজে ব্যস্ত থাকতে পারে রাতে তো আর ব্যস্ততা থাকে না। আমার কথা না হয় বাদ দিলাম। ফুলের মতো সুন্দর দুটি বাচ্চা আমাদের। ওরা বাপের সঙ্গে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। সেই বাচ্চাদের ফোন না দিয়ে থাকে কেমন করে! রিমির সংসারের খরচ খরচা নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। ভাইরা তার সবকিছু বহন করে।
রিমি ফোনে স্বামীকে পায় না। এটা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন সে। উপায়ান্তর না দেখে স্বামীর কর্মস্থলে যোগাযোগ করে। সেখানে তাকে পাওয়া যায়। রিমি প্রশ্ন করে, তোমার নিজের সেল নাম্বার বন্ধ কেন? ফরিদের সরাসরি উত্তর, বন্ধ রাখি তোমার জন্য। আমি কাজে ব্যস্ত থাকি। তোমার যখন তখন ফোনে আমার কাজে ডিস্টার্ব হয়। স্বামীর এমন কথায় রিমি বিস্মিত হয়! তুমি কী বললে? বউ বাচ্চার সঙ্গে কেউ কথা বলে না তার জন্য? তোমাকে তো কাজের মাঝে ফোন দিতে বলিনি অবসর টাইমে তুমি ফোন দিবা। রিমি বুঝতে পারে তার স্বামীর মন মানসিকতায় বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে। কথা না বললেই সে ভালো থাকে। ফরিদ তোমার তো দুটো বাচ্চা আছে তারা তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। আর তুমি বাবা হয়ে বাচ্চাদের কোন খোঁজ খবর রাখার প্রয়োজন বোধ করো না? বাচ্চাদের কথা বলে আমার ইমোশনে হিট করবে না! কেন আমি বাচ্চাদের কথা বলব না, বাচ্চারা তার বাবার সঙ্গে কথা বলতে চায় এটা আমি তোমাকে জানাবো না? বাচ্চা কি চায় না চায় সেটা তুমি দেখবা না! আমি রাখি কাজে এখন ব্যস্ত আছি। ফরিদ বাচ্চাদের সঙ্গে কথা না বলেই ফোন রেখে দেয়। ফরিদ যেখানে কাজ করতো সেখানকার কাজ ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। যাতে রিমি তাকে আর খুঁজে না পায়। রিমি বুঝে উঠতে পারে না কী করবে। দুঃখের অশ্রু গোপন করে কাটে তার দিনরাত। দ্রুত প্রবাহমান সময় চোখের নিমিষে পেরিয়ে যায় মাস, বছর।
ফরিদ আমেরিকাতে গেছে আট নয় বছর হয়ে যায়। যাওয়ার পর কিছুদিন ভালোই ছিল। পরে রিমি যেন তার চক্ষুসুল হয়ে ওঠে। বাচ্চাদের সঙ্গেও সে যোগাযোগ করে না। বাচ্চারা এত বছরে কেমন হলো তাও সে জানে না। রিমি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে ফরিদের ব্যাপারে আলাপ করে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পায় না। রিমির ননদ সাবিহা বলে, তোমার স্বামী তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করে না আমরা তার কী জানি? আমরা তো তাকে কোন কিছু শিখাইয়া পরাইয়া দেই নাই। আর স্বামী যেভাবে ভালো থাকে সেভাবেই তাকে থাকতে দেয়া উচিত। সাবিহার কথায় কেমন যেন রহস্যের সন্ধান পায় রিমি। নিজের বউ বাচ্চা ফেলে কিসে সুখ পেতে পারে স্বামী! সাবিহা বলে, মানুষ তো নতুন সুখের খোঁজ করে। তোমার স্বামী হয়তো নতুন কোনো সুখের সন্ধান পাইছে। রিমির হৃদয় নিরবে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। সে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তার স্বামী বিয়ে করেছে। ফরিদ দেশে এসেছিল, এসে বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে গেছে। এতে ফরিদের পরিবারের সবার মত ছিল। রিমি কান্নাকাটি করে ব্যাপারটা ভাইদের জানায়। রিমির ভাই নাহিদ বলে, ও অকৃতজ্ঞ বেইমান। যার জন্য এত কিছু করা হলো সে এরকম বেইমানি করতে পারে কি করে! রিমি বলে, কী আমার দোষ ছিল। মুখ ফুটে কোনদিন তো কোন অভিযোগ করেনি। এমন নিষ্ঠুরতা করতে গিয়ে আমার আর বাচ্চাদের কথা ভাবলো না। ওর পরিবারও বেইমান। এত বড় অন্যায় হলো ওরা কেউই ব্যাপারটা আমাদের জানালো না। ফরিদরে ওই ব্যাপারে নিষেধ করল না। আমি আমার ভাইদের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবো আর ও বউ নিয়ে সুখে থাকবে। আমি ওকে সুখে থাকতে দেবো না।
রিমি মামলা করে। সাবিহা বলে, আমার ভাইয়ের নামে মামলা? জোর করে আমার ভাইয়ের সংসার করতে চাও? অসহ্য রিমি বলে, কেন তোর ভাইকে কি আমি জোর করে বিয়ে করছি? ঘাত প্রতিঘাতে বিধ্বস্ত রিমি অবয়ব নিয়ে কটাক্ষ করে। আমার ভাই তোমাকে নিয়ে কিভাবে সংসার করবে। তোমার যে ঢেঁকির মতো একটা শরীর। তোমাকে নিয়ে চলা যায়? টাকা পয়সা থাকলেই সব কিছু হয় না। রিমি বলে, সাবিহা তুই এসব কী বলছিস? তোর ভাইয়ের দুইটা সন্তান আছে, ওদের কথা ভাব। সাবিহার নির্লিপ্ত উত্তর, আমার ভাইয়ের সন্তান আমাদের কাছে দিয়ে দাও। মা ছাড়া ওরা থাকবে কী করে! না পারলে ওদের কথা বলছো কেন? রিমি হতাশ হয়ে বলে, আশা করেছিলাম বিবেক বিবেচনা করে কথা বলবি। তা না করে অন্যায় ভাবে ভাইয়ের পক্ষ নিচ্ছিস? ভাইয়ের পক্ষ নেব না তা কী করব? তোর ভাই ভুল করছে সেই ভুল তো দেখবি। আমার ভাইয়ের টাকায় সে বিদেশে গেছে। আমাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করছে না। আমাকে রেখে সে বিয়ে করছে। আমি তাকে ছেড়ে দেবো? রিমিকে শান্ত করতে মোহরানার টাকা দেওয়া প্রস্তাব করা হয়। উত্তরে রিমি বলে, কাবিনের টাকা দিয়ে আমি কী করব? আমি চাই আমার সংসার। কিন্তু ফরিদ তো তাকে নিয়ে সংসার করবে না। সে বিয়ে করেছে, সেই বউকে নিয়ে সে সুখী।
এরপর ঘটনা নারীকে পরাজিত করার সেই সনাতন পথে অগ্রসর হয়। রিমির নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়। সে দুশ্চরিত্রা পর পুরুষ নিয়ে ফষ্টিনষ্টি করে। স্বামী বিদেশ গমনের সুযোগে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছে। এমন দ্বিচারিণী মহিলার কাছে সন্তানরা নিরাপদ নয়। ছেলে তৌহিদকে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়। রিমি প্রলাপের মতো বকতে থাকে, আমার কাছ থেকে আর কী নিবি। সংসার নিয়েছিস, স্বামী নিয়েছিস, এখন সন্তানও নিয়ে নিচ্ছিস! আমার কাছে কিছুই নাই দেওয়ার মতো। তবে হ্যাঁ আমার স্বামী আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার মন ভরিয়ে দিয়েছে। আমি এতে মহাখুশি। কোর্টে সাবিহা মিথ্যা সাক্ষী দেয়, তার ভাবি বাড়িতে অন্য পুরুষ নিয়ে থেকেছে। একথা তার ভাই জানতে পেরে কষ্ট পায়। পরে ভাবিকে অনেকভাবে বুঝায় কিন্তু তার কোন পরিবর্তন হয় না। বিভিন্ন পুরুষ নিয়ে সে রাত যাপন করে, ঘোরাফেরা করে। আমার ভাই ভাবিকে সঠিক পথে আনতে ব্যর্থ হয়। আমার ভাই নিরুপায় হয়ে বিয়ে করে। কী করবে তার তো একটা সংসারের দরকার। তার বউ যেরকম জীবন যাপন করে তাতে তার মান সম্মানের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন হয়। এতেই তারা ক্ষান্ত হয় না। নারী হয়ে নারীর সর্বনাশ করতে বিবেক কাঁপে না তার। ছোট তৌহিদকে ভয় ভীতি দেখিয়ে মায়ের নামে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ায়। রিমি আল্লারে বলে চিৎকার দেয়, শেষ পর্যন্ত ছোট ছেলেটাকেও মিথ্যা শিখিয়ে দিল। আমি আর এই দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে চাই না। দুনিয়া পড়ে থাক তার সত্য মিথ্যা নিয়ে। রায় কী আসবে তা রিমি জানে না। সে ভাবে রায় তো আমি পেয়েছি গেছি। ছোট্ট নাবুঝ বাচ্চাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মায়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ায়। কত বড় জালিম হলে এ কাজ করতে পারে। সাবিহা গরিমা করে বলে, পারলি না স্বামীর ভাত খেতে? আমার ভাইকে কাঠগড়ায় দাঁড়া করবি? আমার ভাইকে সাজা দিবি? জেলের ভাত খাওয়াবি? এখন তুই দেখ আইনের কাছ থেকে তুই কী পাস। রায় রিমির বিপক্ষে যায়। রিমি ভাবে, কী হবে দুনিয়া থেকে। এখানে শুধু যন্ত্রণা সইতে হবে। হতাশা আর অবসাদে অর্থহীন মনে হয় তার জীবন। দুঃখ আর লাঞ্ছনা নিয়ে জীবনের বোঝা বয়ে বেড়ানোর শক্তি খুঁজে পায় না সে। জীবনের অবসান তার কাছে শ্রেয় মনে হয়। রিমি আত্মহত্যা করে বিড়ম্বিত জীবনের ইতি টানে।