আজ ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নিরবধি -সুলেখা আক্তার শান্তা

প্রতিদিন সংবাদ ডেস্ক:

মেয়েদের বিয়ের পর বাবার বাড়ি নয় স্বামীর বাড়িই হয় আসল ঠিকানা। প্রচলিত কথাটি কখনো প্রহসনে পরিণত হয়ে পড়ে। বিধবা মা কোনভাবে দিন পাড়ি দেয় বোনটাকে নিয়ে। ভালোতো বোনটা আমার টিউশনি করে সংসার চালায়। যত কষ্টই হোক কারো কাছে হাত পাতে না, আত্মমর্যাদা নিয়ে চলে। তুমি কথায় কথায় খোঁচা মেরে কথা বলো। গরিবের মেয়ে বিয়ে করেছি, গরিবের মেয়ে বিয়ে করেছি। আমি যে গরিবের মেয়ে সেটা বিয়ের সময় তোমার চোখে পড়েনি। সব দেখেই তো বিয়ে করেছিলে। এখন এ কথা বলার কি আছে ! তোর বকবকানি থামা। আমি তোর কোন কথা শুনতে চাই না। আমি বিয়ে করতে চাই তোর বোন
অর্পাকে! তোর বোন আমাকে পাত্তা দেয় না। দেখি ওর কি করে অন্য জায়গায় বিয়ে হয়! এশা আর নাদিমের
বচসা চলছিল। আমার বোন কি পানিতে পড়ছে! বিবাহিত পুরুষকে বিয়ে করবে? তাও আবার নিজের বোনের স্বামীকে।
তুমি দুই সন্তানের বাবা হয়েছ এখন ভালো হয়ে চলার চেষ্টা করো। নিজের লোভ-লালসা এবার থামাও।
স্বেচ্ছাচারী নাদিম নিজের মনের মত চলতে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায় এশার উপর। নাদিমের চোখের
সামনে ভেসে ওঠে যে লাস্যময়ী নারীর ছবি সে হচ্ছে অর্পা। এক মোহনীয় কল্পনায় বিভোর হয়ে আছে সে।
নাদিমের একই কথা তুই আমার সংসার থেকে চলে যা। তাহলে আমি বেঁচে যাই, সব বাধা মুক্ত হই। তোর
গায়ের বর্ণ পাতিলের কালির মত। কালো মেয়ে দিয়েছে আমার ঘাড়ে গছাইয়া। তোকে নিয়ে কোন জায়গায়
যেতে পারি না। তোকে নিয়ে ঘুরলে আমার মান-সম্মান যায়। সবাই বলে এমন কালো বউ কেন বিয়ে
করেছিলাম! কালো হয়ে জন্ম নিয়েছি কি আমার অপরাধ? একটাই পথ খোলা আছে, তুই আমাকে মুক্ত করে দে। এশা স্বামীর মুখে এসব কথা শুনে প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলে। নিরবে কান্নাকাটি করে। স্বামীর সুন্দর বউ না পাওয়ার আক্ষেপ। এই বাড়ি আসর পর থেকেই এই যন্ত্রণা ভোগ করছে সে। আর পারছে না সহ্য করতে। নাদিম শ্বশুরবাড়ি যায়। দেলোয়ারা বলে, বাবা তুমি এসেছ খুব খুশি হয়েছি।

 

নাদিম গম্ভীর মুখে বলে, আপনার মেয়েকে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। কি বলছ বাবা এসব! কেন আমার মেয়ে কিছু করেছে? কিছু কি, সবকিছু করেছেন তো আপনারা পরিবারের সবাই মিলে। আপনার অচল মেয়েকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। আর শ্বশুরবাড়ি থেকে তো কিছুই পেলাম না। বাবা স্বীকার করছি আমি তোমাকে কিছু দিতে পারিনি। আমার যদি কিছু থাকতো তোমার যা দাবি সবই আমি দিতাম। এতই যদি আপনার দিতে ইচ্ছা করে, তাহলে আপনারা মেয়ে অর্পাকে আমার কাছে বিয়ে দেন! নাদিম ঝট করে বলে ফেলে। কথার মাঝে অর্পা এসে হাজির। আপনার এসব কথা বলতে লজ্জা করে না! আপনার বিবেক বিবেচনা লোপ পেয়েছে। আপনার স্বপ্ন, স্বপ্নই থাকবে। তা কখনোই বাস্তবে রূপ নিবে না।

দেলোরা মেয়েকে বলে, মা তুই থাম। মা তুমি কথা বলোনা। যা মুখে আসছে তাই বলছে। তা শুনে আমার গা জ্বালা করছে।
বাবা নাদিম তুমি যা বলছ এ কথা আর ভুলোও বলো না। শোনেন অর্পার যদি বিয়ে হয়, তাহলে আমার সঙ্গে বিয়ে হবে আর নয় অন্য কারো সঙ্গে নয়। অর্পা চিৎকার করে বলে, মা তুমি এই লোককে এখনই এখান থেকে চলে যেতে বলো। আর কখনোই যেন এই বাড়ির ত্রিসীমানায় না আসে। নাদিম ক্ষেপে ওঠে, কি আমাকে অপমান! এই অপমানের শোধ আমি হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেবো। অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বাসায় ফিরে আসে। এশাকে বলে, তোর মা আর বোন আমাকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের
করে দিয়েছে। তোরে আর এই বাড়িতে জায়গা হবে না। এশাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এশা
করুন অনুনয় করে, তুমি আমাকে সন্তানের কাছ থেকে তাড়িয়ে দিও না!  নাদিমের ঘুরেফিরে একই কথা আমি তোকে চাই না আমি অর্পাকে চাই। চরম নির্যাতন এবং অপমানের পরেও সন্তানের কথা ভেবে এশা বাড়ি ফিরে আসে। দেখে সন্তান না খেয়ে আছে। এশাকে দেখেই নাদিম আবার ক্ষেপে ওঠে, তুই আবার ফিরে এসেছিস। আমি তোর বোনকে বিয়ে করব। এই দেখ বিয়ের জন্য কেনাকাটা করেছি।

ছি: ছি: তোমার কলুষিত মানসিকতা কিছুতেই পরিবর্তন হলো না। সন্তান দুটির মুখের দিকে চেয়ে অন্তত এই
জঘন্য লালসা থেকে বিরত থাকতে পারতে। তুমি তোমার ইচ্ছা পূর্ণ কর। তোমার এই দৃশ্য দেখার আগে যেন
আমার মরণ হয়। আমি আমার সন্তান নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছি।
যা যা তাড়াতাড়ি চলে যা। সন্তানদের নিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয় এশা। দুনিয়ার সব আকর্ষণ বিষময়
সময় হয়ে উঠেছে তার কাছে। মানসিক বিকারগ্রস্থ স্বামীর যন্ত্রনায় দিশেহারা এশা। আমার সন্তানদের এই
যন্ত্রণা ভোগ করতে দিবোনা। স্বামীর নিষ্ঠুরতম আচরণের কারণে এশা নির্মম কাজটি করে বসে। সে দুই সন্তান নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। মৃত্যুর পর লাশ ভেসে ওঠে। সবাই দেখে আফসোস করে। আহারে এভাবে তাজা তিনটি জীবন ঝরে গেল। অর্পা ও তার মা খবর পেয়ে পাগলের মতো ছুটে আসে। দেলোরা মেয়ের লাশ ধরে বুক চাপড়ে চিৎকার করতে থাকে। নাদিম আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। ও সব সময় আমার ছোট মেয়ে অর্পাকে বিয়ে করতে চাইতো। আমার বড় মেয়ে এশাকে সারাক্ষণ নির্যাতন করতো। প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় আমার মেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। নাদিম এক ফন্দি বের করে। সে বলতে থাকে, বাচ্চা পানিতে পড়ে গিয়েছিল। তাইতো এশা বাচ্চাদের বাঁচাতে গিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিল। নদীর তীব্র স্রোত বাচ্চাদের ভেসিয়ে নিয়ে যায়। স্রোতের সাথে এশা পেরে উঠেনি। তাই এশারও মৃত্যু হয়। নাদিম সবাইকে অনুরোধ করে, এমন কোনো কথা বলবেন না যে কথায় আমি কষ্ট পাই। আমার স্ত্রী সন্তান হারাইছে। আমার বুক ফেটে যায়। একমাত্র আমি জানি আমার কি নিদারুণ সে কষ্ট।
নাদিমের মুখে এমন কথা শুনে দেলোরার মায়া হয়। সে সান্তনা দেয় নাদিমকে, বাবা তুমি শান্ত হও। তোমার মাঝেই আমি আমার মেয়ে নাতি নাতনিকে দেখতে পাই। এশা বলে, মা তুমি এই শয়তানের কথা বিশ্বাস করো না। ওর কারণেই আমার বোনের মৃত্যু হয়েছে! না মা তুই এই কথা বলিস না। আমার সন্তান না হয় ওর পর, ওর সন্তান তো ওর পর না?
মা ওরা চালাকির কাছে তুমি অন্ধ হয়ে গেছে। দেলোরা সব বুঝতে পারে। পেরেও সে ভয়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। নাদিম যদি তার ছোট মেয়ে এশার সর্বনাশ করে। সে কারণে সব বুঝেও সকল কথা চেপে যায়।

এশার মৃত্যুর ছয় মাস গত হয়েছে। এশা মারা যাওয়ায় দেলোরা আর অর্পার সবকিছুই যেন নিশ্চল স্তব্ধ হয়ে
পড়েছে। তবুও কোন মৃত্যুই জীবনপ্রবাহ থামিয়ে রাখে না। অর্পা মুখোমুখি এক নতুন যন্ত্রণার। টিউশনিতে
যাতায়াতের সময় রহিত অর্পার পাশে হাঁটতে শুরু করে। অর্পা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, আপনার সমস্যাটা
কি? আমাকে লক্ষ্য করছেন কেন? রহিতের সোজা উত্তর, অর্পা আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ভালোবাসার কথা বললেই ভালোবাসা হয়ে যায়! আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা সেটা জানার চেষ্টা করেছেন?
ভালোবাসা উভয় উভয়ের প্রতি থাকতে হয়। রোহিত তাৎক্ষণিক সংকট সৃষ্টির দক্ষতা কাজে লাগায়। আমার
প্রতি তোমার ভালবাসা যদি নাই থাকে তাহলে আমার এই দুনিয়াতে বেঁচে থাকে লাভ নেই। বলেই সে চলতি
গাড়ির দিকে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। রহিত তুমি এমনটা করতে পারো না। জীবন বুঝতে শিখো। তোমাদের আর
আমাদের অবস্থায় আকাশ-পাতাল ব্যবধান। চাঁদকে আকাশেই মানায়, চাঁদ মাটির জন্য শোভনীয় নয়। মানুষের
যেমন প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে নিজের অনুভূতি জাগ্রত হয়। তেমনি চাঁদও রাতে উঠে নিজের ঝলমল সৌন্দর্য
মানুষকে দিয়ে আত্ম তৃপ্তি নিয়ে ভোর হওয়ার আগেই মিলিয়ে যায়। তোমার এতসব উপমা আমাকে দিতে হবে না। আমি শুধু তোমার কাছ থেকে ভালোবাসা চাই। তা থেকে
আমাকে বঞ্চিত করো না। গরিবের সুখ সহজে আসে না। আর যে সুখ সহজে আসে তা আবার ভেসে যায় নদীর জোয়ারের স্রোতে। অর্পা দেখো আমার পাশে অনেক মেয়ে আছে যাদের আমি হাত বাড়ালেই পেতে পারি। কিন্তু আমার মন
তাদেরকে চায় না। আমার অন্তর শুধুই তোমাকে চায়। প্রেম ভালোবাসা বিয়ে এসবের দিকে আমার মন নেই। রোহিতকে থামায় অর্পা। আমার মাকে কিভাবে সেবাযত্ন করা যায় কিভাবে সুস্থ রাখা যায় এটাই আমার এখন বড় বিষয়। কথা বলতে বলতে অর্পা বাসার কাছে এসে পড়ে। আর তখনই হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে প্রচন্ড বেগে ঝড় বৃষ্টি শুরু হলো। অর্পা ঘরে ঢুকলো। রহিত
বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে সে। কিছুক্ষণ পরে অর্পা বাইরে তাকিয়ে দেখে ঝড় চারিদিক
লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে। তখনোও রহিত বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। রহিত কেন তুমি দাঁড়িয়ে আছে? শরীর খারাপ
করবে তোমার।

শরীর খারাপ করলে তাতে কার কি আসে যায়। তুমি আমাকে ভাল না বাসলে আমি চাইনা দুনিয়ায় থাকতে।
বৃষ্টি স্নাত রহিতের দিকে তাকিয়ে অর্পা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। তোমার ভালোবাসার শক্তির কাছে
নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না। অর্পা চাপা কন্ঠে চিৎকার করে বলে, আমার হৃদয়ের সব
ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য। আজকের বর্ষণসিক্ত বাতাসে আমি প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। আমার
একাকীত্বের বন্দীদশা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছি। রহিত আজ থেকে আমি শুধুই তোমার আর তুমি
শুধুই আমার।

অবশেষে তোমার মন পেয়ে আমার মনে হয় আমি পৃথিবী জয় করতে পেরেছি। রহিতের আনন্দের উল্লাস
দেখে অর্পারও উচ্ছ্বাসিত। কেউ কাউকে চোখের আড়াল করতে চায়না। কোন কারণে অর্পাকে দেখা না পেলে
রহিত অস্থির হয়ে পড়ে। যেন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অর্পাকে প্রশ্ন করে কেন তুমি আমার কাছ থেকে
নিজেকে আড়াল করে রাখ? জানো না তুমি? আমি তোমাকে ছাড়া একদন্ডও থাকতে পারিনা!
অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে অর্পা, তুমি যা কান্ড করো না।
তুমি হাসছো?
না হেসে পারছিনা। আমার সঙ্গে প্রতিদিন তো তোমার দেখা হয়। তারপরও কেন তুমি এমন উতলা হয়ে
যাও?

তোমার একটু বিলম্বতে আমার মনে বেদনার ঝড় বইতে শুরু করে। আমার বুকে কান পেতে শোনো এখানে
শুধু তোমার নাম ছাড়া অন্য কিছু বলেনা।
আমি বুঝতে পেরেছি ভালোবাসার মানুষের মনে প্রাণে শুধুই আমি। এখানে অন্য কেউর ঠাঁই নেই। রহিত
বলে, আমি চাই আমার এই ভালোবাসা উপলব্ধি করো।
বুঝেছি, আর আমিও যতদিন বেঁচে থাকব তোমার ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই।

দেলোরা বিছানায় শুয়ে অর্পাকে বলে, মা তুই এভাবে রহিতের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করিস এটা আমার ভালো
লাগেনা। তোর বিয়েটা হলে আমি শান্তি পেতাম। অসুস্থ মায়ের এমন ভাবনায় অর্পা চিন্তিত হয়ে পড়ে। ঠিক
আছে মা আমি রহিতের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলব।
হ্যাঁ মা তাই কর।
অর্পার দেখা হয় রহিত সঙ্গে। রহিত?
হ্যাঁ বলো?
রহিত?
কি ব্যাপার তুমি রহিত রহিত করছ কেন?
না মানে।
বলো?
তোমার আমার বিয়ের ব্যাপারে কথা।
ও আচ্ছা। এটা তো ভালো কথা। জানো আমার খুব ভালো লাগছে যাকে আমি ভালোবাসি তার মুখ থেকে
বিয়ের কথাটা শুনে। রহিত আর অর্পা উভয় পক্ষের অভিভাবক মারফত বিয়ের তারিখ ঠিক হয়। দেলোরা
মেয়ের বিয়ের জন্য খুব খুশি। বিয়ের দিন অর্পা বধু সেজে বসে আছে। বাড়ি ভর্তি অনেক লোকজন। সবাই
একই উদ্দেশ্য বরের জন্য অপেক্ষা করা। কিন্তু অনেক সময় পার হচ্ছে বর আসছে না। দেলোরা এমন
পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দিবে সেই চিন্তায় আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। দিন রাত পেরিয়ে সকাল হলো। অর্পা কি
করবে পথ খুঁজে পায় না। সে একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেয় রহিতের সম্মুখীন হবে। রহিতের বাড়ি যখন হাজির
হয়। দেখে সবাই একত্র হয়ে হৈ-হুল্লো করে আড্ডা দিচ্ছে। সাথে তার বোন জামাই নাদিম। তা দেখে অর্পার
শরীরে আগুন ধরে যায়। অর্পা রহিতকে প্রশ্ন করে তুমি আমার সঙ্গে এমন করলে কেন?
আমাকে প্রশ্ন করছো তুমি? রাজাকে মানায় রাজপ্রাসাদে আর ভিখারিকে ভিক্ষুকের পর্ণকুটিরে।
তার মানে তোমার এসব ছিল আমার সঙ্গে অভিনয়। বাহ, তুমি আমাকে হারালে না হেরে গেলে নিজের
ব্যক্তিত্বের কাছে। আর আমি হারের কাছে পরাজিত হবার মেয়ে নই।
নাদিম বলে, তোর জয়-পরাজয়ের কি আছেরে? তোর তো এখানেই সব শেষ। তুই ফিরে যেতে পারবি তো
এখান থেকে? আমি তোকে ভালোবেসেছিলাম। বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই আমার কথায় রাজি
হোস নেই। আজ আমার যত জ্বালা যত আক্ষেপ সব মিটিয়ে নিব। আল্লাহর উপর ভরসা করে বলছি, তোর আশা কখনোই পূর্ণ হবেনা। ইজ্জতের বড়াই করিস, আজ ইজ্জত নিয়ে ফিরতে পারবি না এখান থেকে। নাদিম এই কথা বলে হামলে পড়ে
অর্পার উপর। জড়িয়ে ধরে অর্পাকে। অর্পা নিজেকে নাদিমের কাছ থেকে রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে।তার সাথে জড়িত হয় রহিত। রহিত আমাকে নিয়ে যে খেলায় মেতেছ আল্লাহ যেন এ খেলা তোমাকে নিয়ে খেলে।

তোদের মতো নিচু ফ্যামিলির মানুষের মুখের একটা জিনিসই থাকে, অভিশাপ। ওতে আমার ভয় ভ্রুক্ষেপ
কিছুই নাই। অর্পাকে কাবু করতে না পেরে তার টুটি চেপে ধরে। অর্পা সাক্ষাৎ মৃত্যুর বিভীষিকা অনুভব
করে। দম বন্ধ হয়ে আসার মুহূর্তে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দেয় নাদিমকে। সজোরে ছিটকে দেওয়ালে
মাথা ঢুকে পড়ে যায় রক্তাক্ত নাদিম। সঙ্গে সঙ্গে নাদিমের মৃত্যু হয়। রহিত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
অর্পা এমন অবস্থা দেখে বলে, পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না! রহিত গা ঢাকা দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা
পড়ে। নাদিমের খুনের দায়ে অর্পার সাজা হয়। মেয়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে দেলোয়ারার অবস্থা শোচনীয় হয়ে
পড়ে। প্রায় অনাহারে দিন কাটে। এক সময় মৃত্যু হয় দেলোরার। অর্পা জেলখানায় মায়ের মৃত্যু সংবাদ পায়।
প্যেরেলে জামিন পেয়ে মাকে দাফন করে আবার সে জেলখানায় ফিরে যায়। অর্পা ভাবে কি তার অপরাধ,
দুঃখী মানুষের কপালে কি চিরদিন দুঃখই লেখা থাকে।

লেখক- সুলেখা আক্তার শান্তা

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ