Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the insert-headers-and-footers domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/pratidinsangbad2/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ নিয়ে ইতিহাসের মত অভিমত বিশ্লেষণ-আমিনুল হক সাদী  – Pratidin Sangbad

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ নিয়ে ইতিহাসের মত অভিমত বিশ্লেষণ-আমিনুল হক সাদী 

প্রায় সাত একর জায়গার মধ্যে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইতিহাস নিয়ে অনেক প্রকার মত অভিমতও রয়েছে। মাঠের কে প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা তা নিয়েও রয়েছে মতানৈক্য।  শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির সন্তান লেখক ভক্টর সৈয়দ আলী আজহার রচিত “ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির পূর্ব পুরুষ শাহ সুফী মরহুম সৈয়দ আহম্মেদ ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দের শোলাকিয়া সাহেব বাড়িতে সর্বপ্রথম একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া ‘সাহেব বাড়ির পূর্বপুরুম সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। ওই জামাতে ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই। অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে এর নাম হয় ‘সোয়া লাখি’। পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া সেখান থেকে শোলাকিয়া। পরবর্তিতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় হয়বত নগরের দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ এই ময়দানকে অতিরিক্ত ৪.৩৫ একর জমি দান করেন। ড.আয়শা বেগম রচিত ‘কিশোরগঞ্জের স্থাপত্যিক ঐতিহ্য’ গ্রন্থের ১১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহটি ১৮২৭ সালে ঈশা খানের ১২ তম পুরুষ জংগলবাড়ির জমিদার দেওয়ান আজিম দাদ খান এবং হয়বতনগর সাহেব বাড়ির জমিদার দেওয়ান রেহমান দাদ খান প্রতিষ্ঠা করেন। অতপর সেই ময়দানে পরের বছর প্রথম বড় ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় ১৮২৮ সালে। এ জামাতে ইমামতি করেন সৈয়দ আহমদ।
লেখক আমিনুল হক সাদীর  একটি অভিমত খুবই গুরুত্বের দাবী রাখে তা হলো  ১৮২১ খ্রিস্টাব্দের পর জৌনপুরের বিখ্যাত আলেম মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী (রক্ত) হয়বতনগরে আগমন করেছিলেন। তিনি হয়বতনগরের তৎকালীন জমিদার দেওয়ান শাহ নেওয়াজ খানকে হোসেনী দালানের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে মসজিদ হিসাবে দালানটি ব্যবহার করার অনুরোধ করেন। এই বিষয়টি সত্য যে, সময় পূর্ববঙ্গে মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ হয় অনৈসলামী রীতি নীতি। ইসলামী শিক্ষার অভাবে এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে কৌতূহলোদ্দীপক মতবাদ ও আচারের বিকাশ ঘটে। মাওলানা কেরামত আলী সৌনপুরী (রহ) শিরক ও বিদআতের কবল থেকে মুসলমানদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে দাওয়াতী কাজ করতে থাকেন। তিনি দ্বীনি দাওয়াতের মধ্যে তার জীবনের মিশন বা লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নির্ণয় করে নিয়েছিলেন। এরই অংশ হিসেবে মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী (রহ)  সালে হয়বতনগরে আগমন করেন এবং  দেওয়ান শাহনেওয়াজখানকে শিয়া মতালম্বী থেকে সুন্নী মতবাদে ফিরে আসতে আকৃষ্ট করেন। ফলে হোসেনী দালান রূপান্তরিত হয় আল্লাহর ঘর মসজিদ রূপে। যেটি এখন হয়বত নগর সাহেব বাড়ি মসজিদ হিসেবে ইতিহাসে পরিচিত।
শুধু তাই না মাও. কারামত আলী হাজী শরীয়তউল্লাহ প্রবর্তিত ফরায়েজি আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। ফরায়েজিরা বিটিশ শাসিত ভারতবর্ষকে দারুল হরব হওয়ার অজুহাতে জুমা ও ঈদের নামাজ আদায় করত না। পক্ষান্তরে কারামত আলী মনে করতেন ভারতবর্ষ যদিও দারুল ইসলাম নয়, তবে দারুল হরবও নয়। বরং ভারতবর্ষ হচ্ছে দারুল আমান। কারণ বিটিশরা মুসলমানদেরকে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করতে দেয়। এ বিষয়ে তিনি ফরায়েজিদের সাথে বিতর্ক করে তার মত প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তাই হয়বতনগরের দেওয়ানদেরকে কারামত আলী সুন্নীতে রুপান্তরিত করে প্রকাশ্যে বড় ঈদ জামায়াতের আয়োজনেও প্রভাকর ভূমিকা পালন করেছিলেন বলেই সর্ব প্রথম সেই সময়ে সোয়া লাখ মানুষে একত্রিত হয়ে মাঠে ঈদ জামায়াত আদায় হয়েছিলো। আর এ কারণেই সোয়ালাখ থেকে কালের বিবর্তনে শোলাকিয়া নাম করণ হয়।
হয়বতনগরের শেষ জমিদার দেওয়ান মোঃ মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সনে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের নামে ২ একর ৩৫ শতাংশ জমি ওয়াকফ দলিল করেন। দলিল মতে ঐ সময়ের আরও ২শ বছর আগে থেকেই এ ঈদগাহে দুটি ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। সে হিসেবে এ মাঠটি  পৌনে তিন শ বছরের প্রাচীন প্রমার্নিত হয়।
সৈয়দ আহাম্মদ সাহেবের পর উত্তরাধিকার সুত্রে হয়বতনগর জমিদার বাড়ির তৎকালীন জমিদার সৈয়দ মোঃ আবদুল্লাহ ১৮২৯ সন হতে ১৯১২ সন পর্যন্ত এই শোলাকিয়া মাঠে ইমাম ছাড়াও তিনি এই ঈদগাহের সর্বপ্রথম মোতাওয়াল্লী ছিলেন। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে হয়বতনগর জমিদার পরিবার থেকে মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হয়ে আসছে। সর্বশেষ মোতাওয়াল্লী ছিলেন এই জমিদার পরিবারেরই সদস্য দেওয়ান ফাত্তাহ দাদ খান মঈন। বর্তমানে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে মাঠ পরিচালনা হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ কমিটির প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান কমিটিতে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক  মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ সভাপতি  ও সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো:আবু রাসেল দায়িত্ব পালন করছেন।
ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য  দেশের প্রাচীন ও কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ প্রস্তত্তি সম্পন্ন হয়েছে। জেলা শহর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত এই ঈদগাহে এবছর অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম ঈদ জামাত। ঈদের জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়।
ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন, ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা যৌথভাবে ঈদগাহের ছোট-বড় গর্ত ভরাট, বালু ফেলে সমান করে মাঠকে নামাজ আদায়ের উপযোগী করা এবং মাঠের চতুর্দিকে সৌন্দর্য্যবর্ধনের কাজ সম্পন্ন করেছে।
জেলা প্রশাসক ও শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সব প্রস্তুতি প্রায় শেষের পথে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা যেন নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য আমরা সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। একটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১৯৭তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে শোলাকিয়া ঈদগা ময়দান। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে মুসল্লিদের প্রবেশ করতে হবে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে শুধু জায়নামাজ নিয়ে মুসল্লিরা প্রবেশ করতে পারবেন। মোবাইল বা ছোটখাটো ডিভাইস নিয়ে মাঠে প্রবেশ না করার জন্য আমরা প্রচার করছি। আশা করছি, সুন্দর পরিবেশে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিক্যাল টিম, দূরের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন করা হচ্ছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে মাঠের ও আশপাশের সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও রাস্তাঘাট মেরামত করা হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছি।