আজ ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নিষ্ঠুর যবনিকা – সুলেখা আক্তার শান্তা

রাবেয়া উদাস নয়নে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। দীর্ঘবছর ধরে একই আশায় তাকিয়ে আছে পথের দিকে।
বারান্দা থেকে সামনের রাস্তাটা দেখা যায়। রাস্তায় আঁকাবাঁকা থাকে কিন্তু এ রাস্তাটা একেবারে সোজা।
যতদূর দেখা যায় বরাবর একেবারে সোজাসুজি দৃষ্টি শেষ প্রান্তে একটা বিন্দুতে মিলায়ে যায়। রেল লাইনের
মতো। দীর্ঘবছর ধরে রাস্তাটা দেখছে সে। রাস্তারটার অনেক রূপান্তর তার চোখের সামনে ঘটেছে। প্রথমে এটি
ছিল মাটির কাঁচা রাস্তা। তুমুল বর্ষায় একাকার কাদায় গাড়ির চাকা আটকে যেত। তারপর ইট বিছানো রাস্তা
হলো। তার অনেকদিন পর আজকে পিচ ঢালা রাস্তা। রাবেয়া তাকিয়ে থাকে দূরের বিন্দু থেকে ক্রমে দৃশ্যমান
মানুষ আর গাড়ির দিকে। আগে দৃষ্টিতে অনুসন্ধানের একটা আগ্রহ ছিল। এখন শুধুই নিষ্পলক তাকিয়ে
থাকা। গ্রীষ্ম বর্ষা শীত ঋতুর পরিক্রমায় পথের বিচিত্র পরিবর্তন হতে দেখে। সচ্ছল ছিমছাম সংসার। স্বামী
ব্যবসায়ী বাজারে রড সিমেন্টের দোকান আছে। দুই পুত্র এক কন্যার জননী সে। বড় ছেলে বিয়ে করে আলাদা
সংসারে সুখে আছে। মেয়ের বিয়ের কথা চলছে। ছোট ছেলে কলেজে পড়ছে। বিয়ের পর রাবেয়া প্রথম
এবাড়ির বারান্দা এসে বসেছিল অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়েছিল রাস্তার দিকে। দিন মাস বছর যায়। এক
অনন্ত অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকে সে।
তিন ভাই-বোনের মধ্যে রাবেয়া ছিল বড়। বয়স অল্প হলেও সে ছিল খুব দায়িত্ববান। সংসারের বেহাল অবস্থা
দেখে সে বিচলিত বোধ করত। রাবেয়া সংসারের হাল ধরতে চায়। বাবা-মা দু’জনকে বলে, আমি বসে থাকতে
চাই না। আমি কর্ম করতে চাই। তোমরা আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দাও।
জয়তুন মেয়েকে বলে, তুই মেয়ে হয়ে বিদেশ যাবি? মেয়েদের বিদেশ যাওয়া সমাজের লোক ভালো চোখে দেখে
না!
কেন মা। লোক কি তোমার ঘরে এসে খাবার দিয়ে যাবে?
তবুও তো সমাজ নিয়ে আমাদের চলতে হয়।
মেয়েরা কাজ করতে এখন আর পিছপা হয়না। আমি চাই নিজের হাত পা দিয়ে পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন
করতে। মা আমার ব্যাপারে তোমরা আর অমত করো না।
শরীফ বলে, মা তবুও তো।
বাবা আমি মেয়ে বলে, তোমরা আমাকে থামিয়ে দিওনা। ছেলেরা যেমন কর্ম করে তেমন আমাকেও কর্ম করতে
দাও। শরীফ ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য কিছু টাকা রেখেছিল জমিয়ে। তা দিয়ে মেয়ে রাবেয়াকে সৌদি আরব
পাঠায়। রাবেয়ার সৌদি চাকুরীদাতার অসুস্থ স্ত্রীকে দেখাশোনার দায়িত্ব পায় সে। গৃহকর্ত্রী ক্যান্সারে আক্রান্ত
হলেও চলৎশক্তিহীন নয়। দয়াবতী মহিলা, পরকে দ্রুত আপন করে নিতে পারে। রাবেয়ার দায়িত্ব গৃহকর্ত্রীর সব
কাজে সাহায্য করা। স্বচ্ছন্দে সে সব কাজে পারদর্শী হয়ে ওঠে। দুই একটা ইংরেজি শব্দ মিশমিশে ইশারার ভাষায়
চমৎকার মানিয়ে নেয়। বাড়ির গৃহকর্তা নাম আউজি আমির। সে তার ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। স্ত্রীর প্রতি
রাবেয়ার সেবা-যত্ন দেখে তিনি সন্তুষ্ট এবং নিশ্চিন্ত। দেখতে দেখতে প্রায় দুই বছর কেটে যায়। রাবেয়ার বাড়ির
কথা মনে হয়। বাবা-মা ছোট ভাইদের কথা মনে পড়ে। তারপরও মনে একটা নিশ্চিন্ত শান্তি বিরাজ করে বাবা-
মা ভাইদের সুখে রাখতে পারছে। বাড়ির সবাই ভালো আছে। ফোনে মাঝে মধ্যে কথা হয়।

আউজি আমিরের স্ত্রীর অসুস্থতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। তাকে হাসপাতলে নিয়ে যেতে হয়। হাসপাতাল থেকে
ফিরে আসে প্রাণহীন দেহ। মৃত্যু এক শোকাবহ পরিবেশ তৈরি করে বাড়িতে।
আউজি আমির একা হয়ে যায়। স্ত্রী মারা যাওয়ায় একাকীত্ব শূন্যতা ঘিরে ধরে। রাবেয়া নিরবে সব লক্ষ্য করে।
বাসায় কাজকর্মে দিন পার করে। বাসায় একা শত হইলেও পুরুষ মানুষ। আউজি আমিরের কোন কিছু
দরকারের কথা দূর থেকে জিজ্ঞেস করে, আপনার কিছু প্রয়োজন?
আউজি আমির উত্তর বলে, রাবেয়া তুমি দূর থেকে তুমি জিজ্ঞেস করো কেন? কাছে এসে বলো। রাবেয়া সলজ্জ
হয়ে বলে, না ঠিক আছে। আউজি আমির ইদানিং একটু বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রাবেয়ার উপর। যে কাজ
আগে করতো নিজে নিজে সেকাজে এখন রাবেয়ার উপর নির্ভরশীল। রাবেয়াকে ডাকেও বেশ গলা ছেড়ে।
রাবেয়া ডাকে শুনে খুব তাড়াতাড়ি হাজির হয় হুকুম তামিল করার জন্য। একদিন আউজি আমির কাছে এলে
রাবেয়ার হাতটা আলতো করে ধরে। রাবেয়া নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। দৌড়ে দূরে সরে যেতে চেষ্টা করে।
আউজি আমির বলে, রাবেয়া দূরে যাচ্ছ কেন আমাকে পর করে? কথাটি শুনে রাবেয়া থমকে দাঁড়ায়।
রাবেয়া আমার কাছে এসো। রাবেয়া মাথা নেড়ে না বলে। রাবেয়া আমরা দু’জন দু’জনার আপন হতে পারি না?
আউজি আমির কাছে গিয়ে আলতো করে রাবেয়ার মাথার চুল বুলিয়ে জাবরিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়।
রাবেয়া বলে, আমাকে যদি আপনার আপন মনে হয়। তাহলে একটি কাজ করতে হবে।
তুমি যা বলো রাবেয়া আমি তোমার জন্য তাই করবো।
আমাকে বিয়ে করতে হবে।
বিয়ে! হ্যাঁ, আমি তোমাকে বিয়ে করব। বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় রাবেয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পায়।
আউজি আমির আর রাবেয়ার বিয়ে হয়। দু’জনার বেশ আনন্দ উল্লাসে কাটে তাদের দিন। রাবেয়া প্রেম-
ভালোবাসা মমতায় ভরিয়ে তুলতে চায় আউজি আমিরের জীবন। ভালোবাসার বন্ধন সমুজ্জ্বল করে তাদের ঘরে
আসে পুএ ইয়াসের। রাবেয়া আনন্দে আত্মহারা। নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে। আনন্দ উল্লাসে কাটতে থাকে
রাবেয়ার দিন। ছেলে ইয়াসের স্কুলে যায়। দেখতে দেখতে সুন্দর ফুটফুটে ছেলেটি ছয় বছর পাড় করে। আনন্দ
আর গর্ভে মায়ের বুক ভরে যায়। রাবেয়া দেশের বাড়িতে থেকে ফোন আসে। তার বাবা অসুস্থ। মেয়েকে দেখতে
চায়। রাবেয়া স্বামী আউজি আমিরকে বিষয়টি জানায়। বলে, তুমি আমাকে দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে
দাও। আউজি আমির সবকিছু ব্যবস্থা করে দেয়। রাবেয়া দেশে আসার জন্য সবকিছু গোছগাছ করতে থাকে
সঙ্গে ছেলেকেও প্রস্তুত করে। আউজি আমির রাবেয়াকে জিজ্ঞেস করে, ছেলের সবকিছু রেডি করছ কেন?
ছেলে আমার সঙ্গে যাবে তাই!
দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট দরকার হয়। ছেলের জন্য তো পাসপোর্ট রেডি করেনি। এত তাড়াতাড়ি
পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব নয়।
তাহলে?
তুমি যাও। তোমার বাবা এখন অসুস্থ। তুমি তাকে নিয়েই তো ব্যস্ত থাকবে। তোমার বাবা সুস্থ হলে তো তুমি
ফিরে আসছো।
মাকে ছাড়া ওইটুকু ছেলে থাকতে পারবে?
তুমি যাও। আমি সব সামলে নিব। স্বামীর কথায় আশ্বস্ত হয় রাবেয়া। ছেলেকে অনেক আদর সোহাগ করে
কপালে চুমু দিয়ে যাত্রার প্রস্তুতি নেয়। দেশে ফেরার মুহূর্তে আউজি আমির বেশ কিছু টাকা রাবেয়ার হাতে দিয়ে
বলে, প্রয়োজনে খরচ করো। স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে মন। এদিকে স্বামী সন্তান রেখে যাবার বেদনা
অন্যদিকে বাবা-মা ভাইদের দেখতে পাওয়ার উল্লাস। দুই অনুভূতির মাঝে ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশে আসে
রাবেয়া।

পরিবারের সবাইকে কাছে পেয়ে বাঁধভাঙ্গা খুশিতে মন ভরে যায়। অনেক বছর পর তাদেরকে কাছে পেয়েছে।
বাবার অসুস্থতায় রাবেয়া খুব চিন্তিত ছিল। বড় ডাক্তার দিয়ে বাবার চিকিৎসা করায়। চিকিৎসায় বাবা সুস্থ
হয়। রাবেয়া আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে।
অনেকদিন হলো রাবেয়ার স্বামী-সন্তানের জন্য মন কাঁদে। তাদের কাছে যাবার প্রস্তুতি নেয়। দেশে আসার পর
স্বামীর সঙ্গে প্রথমদিকে কয়েকদিন যোগাযোগ হয়েছে। শেষের দিকে খুব একটা যোগাযোগ হয়নি। তবুও অজানা
আশংকায় বুক কেঁপে ওঠে তার। সবকিছু গোছগাছ করে টিকিট করতে গিয়ে সে জানতে পারে তার ভিসা
ক্যান্সেল করা হয়েছে! স্বামী-সন্তানের কাছে যাওয়ার সব উপায় বন্ধ। সে অপেক্ষায় থাকেন স্বামী-সন্তানের কাছে
যাওয়ার। স্বামী-সন্তান তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। আনন্দের স্মৃতি তারা এখন বেদনা হয়ে হৃদয়ে দোলা
দেয়। বেদনার আগুনে দাহ হতে থাকে তার হৃদয়। শত চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেনা স্বামী সন্তানের
সঙ্গে। সৌদি এম্বেসীতে অনেক ঘোরাঘুরি করেও ভিসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়না।
জয়তুন মেয়েকে বোঝায়, স্বামী সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগের করার চেষ্টা কম তো করলি না। এবার নিজের
কথা ভাব।
মা কোন মেয়ে পারে তার স্বামী সন্তানকে ভুলে থাকতে? তাহলে আমি কি করে ভুলে থাকতে পারবো? আশা করে
নিশ্চয়ই স্বামী সন্তানকে ফিরে পাবে। শরীরের ক্ষত যেমন এক সময় প্রশমিত হয় মনের ক্ষতের বেলায় বুঝি তাই
হয়। বছর ঘুরে বছর আসে। বাকি জীবন রাবেয়ার কি করে পার করবে। চিরাচরিত নিয়মে বিয়ে নারীর বদ্ধ
জীবনে মুক্তির উপায় মাত্র। বাবা-মা বিয়ের কথা বলে। রাবেয়া বিয়েতে রাজি হয় না। বাবা-মার একটাই
উদ্দেশ্য মেয়েকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে বিয়ে দেওয়া।
তুইতো তাদের পাওয়ার জন্য কোন চেষ্টারই বাকি রাখলি না। তাতে তো কিছু হলো না। আর আমরা তোর কথা
শুনবো কেন? তুই যদি তোর সন্তানের কথা ভাবিস। আমরাও তো আমাদের সন্তানের কথা ভাবতে পারি।
আমরা তোর জন্য বিয়ে ঠিক করেছি তুই আর অমত করিস না। রাবেয়া সন্তানের কাছে পাওয়ার দীর্ঘ অপেক্ষার
পরও স্বামী-সন্তানের যোগাযোগ করতে না পেয়ে বাবা-মা কোথায় বিয়েতে রাজি হয়। রাবেয়া দ্বিতীয় বিয়ে
করলেও প্রথম স্বামী সন্তানের কথা অন্তর জুড়ে থাকে। রাবেয়ার দৃঢ় বিশ্বাস তার ছেলে একদিন তার কাছে ফিরে
আসবে।

বহুবছর পর রাবেয়া মনের কল্পনা বাস্তবে রূপ নেয়। হঠাৎ একদিন তাকিয়ে থাকা পথের মাঝে একটি বিন্দু পূর্ণ
অবয়বে রূপ লাভ করে। বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখে একজন সুদর্শন যুবক তার বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে।
অনিন্দ্যসুন্দর আরবিয় মুখশ্রীর তরুণের নাম ইয়াসের। ইয়াসের চৌকস এবং বুদ্ধিমান। বাংলাদেশে এসে কষ্ট
হলেও রাবেয়াদের বাড়ি খুঁজে বের করে। রাবেয়ার মা-বাবা দুজনেই গত হয়েছেন। রাবেয়ার দু’ভাই বাস করে
এখন সেই বাড়িতে। তাদের কাছ থেকেই রাবেয়ার খোঁজখবর নিয়ে সমগ্র পরিস্থিতি এবং করণীয় সম্পর্কে ঠিক
করে নেয়। রাবেয়া সৌদি আরবে সেই ছেলে বড় হয়ে আজ মাকে দেখতে এসেছে। মা রাবেয়া কাছে পরিচয় দেয়
সে ইয়াসের।
রাবেয়া অপলক দৃষ্টিতে ইয়াসেরের দিকে তাকিয়ে চোখের অশ্রু ছেড়ে দেয়। সবাই বিস্ময় হয়ে ছেলেটিকে দেখতে
আসে। রাবেয়ার ছোট ছেলে তুহিনের সঙ্গে ইয়াসেরের প্রথম সাক্ষাৎ হয়। বাড়িতে সাদর সম্ভাষণ জানায়।
রাবেয়াকে ইংরেজি কথোপকথন বাংলা করে শোনায় তুহিন।
রাবেয়ার চুলে পাক ধরেছে। বয়সের ভারে না হলেও অনাগত বার্ধক্যের স্পর্শে শরীর মনে ক্লান্তি। যুবকটি
অসহায় অপলক দৃষ্টিতে দেখা রাবেয়ার দিকে। দুজন অন্তরভেদী দৃষ্টি এক সত্তার সাদৃশ্য খুঁজতে থাকে। রাবেয়ার
দুচোখে নেমে আসে বাঁধভাঙ্গা অশ্রুধারা। ইয়াসরের মনে হয় মাকে জড়িয়ে ধরতে। এমন অনেক ইচ্ছে নিয়ে

এসেছিল সে কিন্তু বাস্তব অবস্থা দৃষ্টে নিজেকে সংবরণ করে। দু’দিন মায়ের কাছে থাকে। ইয়াসের ক্ষণে ক্ষণেই
মায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায়। দীর্ঘকাল মা বলে ডাকার হাহাকার বুকে বয়ে বেরিয়েছে সে। মায়ের
ভালোবাসার এতোটুকু স্পর্শেই জীবন যেন তার পূর্ণ হলো।
ইয়াসকে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়। রাবেয়ার অন্তর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। মনে হয় সব সংস্কার
ভেঙেচুরে চিৎকার করে বলে এটা আমারই ছেলে। আমারই রক্তে মাংসে গড়া। আমার অস্তিত্বের অংশ। দু’দিনের
জন্য ছেলেকে কাছে পেয়ে তাকে তোলপাড় করে তোলে সুপ্ত মাতৃত্বের ক্ষুধা। সমস্ত অস্তিত্বে তার নীরব ঝড় বয়ে
যায়। মনকে সান্তনা দেয় ছেলের মুখখানা অন্ততপক্ষে দেখতে পেরেছে বলে। খোকা তুই ভালো থাকিস। হতভাগী
মায়ের কথা মনে রাখিস না।
ইয়াসের মন শক্ত করে, শুরু করে তার সফরের অন্যতম কাজটি পিতৃ আজ্ঞা পালন। তার পিতা মৃত্যুর সময়
খুব অনুনয় করে কাজটা করতে বলে গিয়েছে তাকে। সৌদি প্রবাসী বাঙালিদের কাছ থেকে এক লাইনের বাংলা
কথাটি নিজ চেষ্টায় শিখেছে সে। একটু নীরব হলেন মায়ের হাত ধরে ইয়াসের পরিষ্কার বাংলায় বলে, মা ক্ষমা
করে দিও বাবাকে। ছেলের মুখে একথা শুনে গভীর অভিমানের পুঞ্জীভূত মেঘ প্রচন্ড বৃষ্টি হয়ে অবিরল ধারায়
চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে। ইয়াসিরের গাড়ি সেই পথ দিয়ে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয় যায়। রাবেয়া নিশ্চুপ
তাকিয়ে থাকে সেই পথের দিকে।

Comments are closed.

     এই ক্যাটাগরিতে আরো সংবাদ